‘স্কুলে ফেরাতে গিয়ে দেখেন নবম শ্রেণির ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা’ (৬-১২) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। হুগলির জাঙ্গিপাড়া ব্লকের নিলারপুর রাজা রামমোহন বিদ্যাপীঠ একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ মাত্র। সমগ্র বঙ্গের বেশির ভাগ ব্লকেই এই ধরনের নানা ছবি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত। তবুও এ কথা ঠিক যে, গ্রামীণ অর্থনীতির দুরবস্থা যে তিমিরে নিমজ্জিত ছিল, দীর্ঘ লকডাউন ও অতিমারিতে তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’-এর সংসারে লেখাপড়া এখন বিলাসিতা মাত্র। কিশোরীদের ক্ষেত্রে আজও লেখাপড়া করানোর চেয়ে তাদের ঘরের কাজে পটু করে তোলার প্রবণতা মজ্জাগত।
অবৈতনিক শিক্ষা আদৌ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার পদক্ষেপটি ঠিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে কি না, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেই পরিসংখ্যান নেই। ছদ্ম সাফল্যের খতিয়ানে ভরপুর সরকারি ফাইল। বছরের পর বছর ধরে সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন হয়। অন্য দিকে রাখি-ঝুমা-আয়েষারা শৈশবের শেষ প্রান্তে এসে এক বা দুই সন্তানের জননী হয়ে যায়। অপুষ্টি ও রক্তাল্পতার শিকার হয়ে হয়তো অকালে ঝরে যায় কুসুমকলিগুলো, কে খোঁজ রাখে!
এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশও দায় এড়াতে পারেন না। স্কুল অতিমারিতে বন্ধ ছিল ঠিকই, কই তাঁরাও তো ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁদের খোঁজ করেননি! সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখাটা কি তাঁদের আশু কর্তব্য ছিল না? প্যান, আধার-সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ফোন নম্বর থাকা যেখানে জরুরি, সেখানে ছাত্রছাত্রীদের নম্বর সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে ছিল, অথচ মিড-ডে মিল বণ্টন ছাড়া আর কিছুই হয়নি গত প্রায় দু’বছর ধরে। অনলাইন ক্লাসের কথা অনেককে বলতে শোনা গিয়েছে। তা করতে পেরেছে কত শতাংশ ছাত্রছাত্রী? কোনও পরিসংখ্যান আছে কি? বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সরব হতে দেখেছি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, তাঁরা কেন ছাত্রছাত্রীদের জন্য সরব হলেন না? যদি স্কুলছুটের সংখ্যা তীব্র আকার নেয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়টির অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়বে!
অনেকখানি সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। করুণ সংবাদগুলির পুনরাবৃত্তি ঘটুক, সেটা আমরা কেউ চাই না। পুরোদমে স্কুলগুলি চালু হওয়ার আগে আগামী শিক্ষাবর্ষে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাণ ফিরুক— এই কামনা রইল।
রাজা বাগচি
গুপ্তিপাড়া, হুগলি
‘ভাল’ স্কুল
সম্প্রতি রাজ্যে বন্ধ হয়ে গেল প্রায় সত্তরটি স্কুল। আইসিএসই ও ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড, দুই মাধ্যমের স্কুলেই পর্যায়ক্রমে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে, মানুষ তার বৌদ্ধিক ও আর্থিক ক্ষমতা অনুযায়ী সমাজে তার যোগ্য মান খোঁজে। তাই আদর্শগত ভাবে, মেধার বিচার না করেই সমাজের সর্ব স্তরের ছাত্রছাত্রীরা এক সঙ্গে পড়াশোনা করবে— এ তত্ত্ব যতই অভিপ্রেত হোক, বেশির ভাগ অভিভাবক চান যতটা সম্ভব ভাল ছাত্রের সমাগমে নিজের সন্তানকে শামিল করতে। কিন্তু প্রবেশিকা পরীক্ষা উঠে যাওয়ায় ‘ভাল স্কুল’ বলে যে স্কুলগুলোর নাম ছিল, সেখানেও অতি সাধারণ ছাত্ররা অনায়াসেই ভর্তি হতে পারছে লটারির মাধ্যমে। সাধারণ ছাত্রেরও অধিকার আছে ভাল স্কুলে পড়ার বা সব স্কুলেই শিক্ষা কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে ভাল শিক্ষক যাচ্ছেন, এ কথা যুক্তির দিক দিয়ে ঠিক। কিন্তু বাস্তবে, মুড়ি-মুড়কিকে সমান কদর দিয়ে সেই স্কুলটি সমকালীন অভিভাবকদের কাছে তার ঐতিহ্য ও সমীহ হারাচ্ছে। তাই বাংলা মাধ্যমের পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণিতে যদি প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু করা যায়, তা হলে সেই পরীক্ষার মাধ্যমে নামকরা স্কুলে ঠাঁই পাওয়াটাই তখন একটা ভালত্বের মাপকাঠি হয়ে উঠতে পারে। আর যারা একটি স্কুলে চান্স পেল না, তাদের জন্য অন্য স্কুল আছে। এতে ছাত্রেরও শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হবে না, স্কুলগুলিও তাদের কাঙ্ক্ষিত মান বজায় রেখে ও সামর্থ্য অনুযায়ী ছাত্র ভর্তি করাতে পারবে।
আবার বহু অভিভাবকের প্রাথমিক চাহিদা ইংরেজি মাধ্যম। তাই যদি সরকারের তরফ থেকে প্রতি ব্লকে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল করা হয় এবং সেখানে প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়, তবে অন্য বোর্ডের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চলে যাওয়াটা অনেকটাই আটকানো যাবে। আর, সরকার পোষিত স্কুলগুলিও পারবে তাদের ছাত্রছাত্রীদের ধরে রাখতে।
শোভন সেন
সাঁতরাগাছি, হাওড়া
প্রশ্নের মুখে
অতিমারি পর্বে প্রায় কুড়ি মাস স্কুল বন্ধ থাকার পর অবশেষে ১৬ নভেম্বর রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে পঠনপাঠন চালু হয়েছে। যদিও তা নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইনেই পঠনপাঠন চলছে। আবার অফলাইন পঠনপাঠন শুরু হওয়া খুবই আনন্দের বিষয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র অন্য কথা বলছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার আশাব্যঞ্জক নয়। শিক্ষাবর্ষের শেষে ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে অনীহা দেখা দিচ্ছে। প্রান্তিক অঞ্চলের ছবি আরও হতাশাজনক। লকডাউনে কর্মচ্যুত বাবা-মাকে সাহায্য করতে সন্তানরা রোজগারের পথে নেমে পড়েছে। ফলে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়তে পারে। আবার এই অতিমারি পর্বে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলবিমুখ হলেও আশ্চর্যজনক ভাবে গৃহশিক্ষক বা কোচিং সেন্টার-মুখিতা বেড়েছে। সিলেবাস শেষ করা ও বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তারা গৃহশিক্ষকের উপরই নির্ভরশীল। বছরের শেষে বিদ্যালয়ে পাঠদান চালু করে সিলেবাস সম্পূর্ণ করা প্রায় অসম্ভব। ফলে, সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ছে। অতিমারি পর্বে সরকারও বিকল্প পাঠদান পদ্ধতি বেছে নিতে ব্যর্থ। বিদ্যালয়গুলিও এই ২০ মাস শুধু সরকারি পরিষেবা প্রদান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।
তাই অবিলম্বে সরকার, শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষক সমাজকে এই সমস্যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ করতে হবে। না হলে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা এক বিরাট প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়াবে।
ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়
শিলিগুড়ি
ট্রেনের টিকিট
হাওড়া আজিমগঞ্জ ভায়া কাটোয়া রেলপথে হাওড়া-আজিমগঞ্জ ট্রেনটি আগের মতো একই নিয়মে একই স্টপ থেকেই চলাচল করছে। কিন্তু বর্তমানে ট্রেনটির ভাড়া এক্সপ্রেস ট্রেন হিসাবে নেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে ইন্টারসিটি, তিস্তা-তোর্সা, কামরূপ-সহ একাধিক ট্রেনের জেনারেল কামরার টিকিট সরাসরি রেল কাউন্টার থেকে দেওয়া হয় না। এই যাত্রীদের সাধারণ ট্রেনে যাতায়াত করতে হলে রিজ়ার্ভেশন করতে হচ্ছে। অথচ, আগে এই ট্রেনগুলিতে রেল কাউন্টার থেকে জেনারেল কামরার টিকিট এক্সপ্রেসের ভাড়া দিয়ে কেটে যাতায়াত করা যেত। অন্য দিকে, কাটোয়া-আজিমগঞ্জ রেলপথে একই স্টপ থাকা সত্ত্বেও ট্রেনে পা রাখলেই ৩০ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। এই ট্রেনগুলি লোকাল এবং প্রতিটি স্টপে থামছে।
রেল কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি ভাড়া আদায়ের রীতি প্রত্যাহার করা হোক এবং রেল কাউন্টারে আগের মতো জেনারেল কামরার জন্য একই নিয়মে টিকিট দেওয়া শুরু হোক।
জয়দেব দত্ত
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান