KMC Election 2021

সম্পাদক সমীপেষু : অন্যের দোষ?

চিকিৎসকদের গাফিলতি যে একেবারে হয় না, সেটাও সব সময় ঠিক নয়। কিন্তু ভাঙচুর করে লাভ কিছু হয় কি?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৩৭

অপূর্ব ঘোষ সাধারণ মানুষের স্বভাবটা খুব ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছেন (‘নাগরিকের দায়িত্ব কতটা পালন করি, ভেবেছি কি’, ১৩-১২)। আমরা পথে চলার সময় দেখি চতুর্দিকে নোংরা ছড়ানো। এর জন্য দায়ী কে? সব সময় সরকারি ব্যবস্থাকে দোষ দেওয়া আমাদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এটা ঠিক যে, যাঁদের কাজগুলোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা অনেকে ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করেন না। তাই বলে জনগণ নিজের দায়িত্বটা এড়িয়ে যেতে পারে না। দোষ ধরা খুব সহজ। হাসপাতালে ভাঙচুর করার কথা উল্লেখ করে এই চিকিৎসক প্রশ্ন তুলেছেন, চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ থাকলে কেন জনগণের করের টাকায় তৈরি হাসপাতাল নষ্ট করা হবে? এগুলো বেশির ভাগ সময় রোগীর বাড়ির লোকেরা করেন না বলেই মনে হয়। কারণ, তাঁরা তখন যে দুঃখের মধ্যে থাকেন, তখন এ সব করার কথা তাঁদের মাথায় থাকে না। পরিবারের বাইরের লোকেরা এটা করে থাকে, যারা সত্যিটা কী, সেটা জানার চেষ্টা করে না। তবে চিকিৎসকদের গাফিলতি যে একেবারে হয় না, সেটাও সব সময় ঠিক নয়। কিন্তু ভাঙচুর করে লাভ কিছু হয় কি?

যেটা সত্যি, সেটা মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে, আমরা নিজেদের খুব ভাল প্রতিপন্ন করার চেষ্টা না কমালে কখনও উন্নতি হবে না।

Advertisement

অসীম গুপ্ত

কলকাতা-৯৯

জল কেন জমে

বৃষ্টির জমা জলে বানভাসি হয় কলকাতা। সাবওয়ের তলায় বৃষ্টির জমা জলে অর্ধেক ডুবে যায় যাত্রিবাহী বাস। মহানগরীর রাস্তায় চলে নৌকা। জল জমলে তার জন্য সবাই পুরসভার পরিকল্পনাহীন ভূগর্ভস্থ নিকাশিব্যবস্থাকেই দায়ী করি। অনেকে আবার অভিযোগের আঙুল তোলেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার দিকে। ‘পুরসভার সাফাই কর্মীরা আমাদের এলাকায় আসেন না’, কিংবা ‘মান্ধাতার আমলের নিকাশিব্যবস্থা। সরকারের টাকা শুধু নয়ছয় করা হচ্ছে’— এ সমস্ত অভিযোগ হামেশাই শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু জল জমার ক্ষেত্রে কেবল কি পুর-প্রশাসনের কর্তব্যে গাফিলতি থাকে? দোষ কি আমাদেরও নয়? ভাল করে নিজেদের বাড়ির চার পাশে লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, আমরা প্রতি দিন আনাজের খোসা, বিস্কুট আর মশলাপাতির ছোট-বড় প্যাকেট, থার্মোকলের থালা-বাটি, দুধ আর পাউরুটির প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে ভরে বাড়ির পিছনে নালা-নর্দমায় অথবা ড্রেনে ছুড়ে ফেলে দিয়ে থাকি। বহু দোকানদার আবার জিনিস বিক্রির পর অবশিষ্ট খাবারের প্যাকেট-সহ অন্যান্য জিনিসপত্রের পলিব্যাগ ছুড়ে ড্রেনে ফেলে দেন। সেগুলি জলে ভেসে এক জায়গায় গিয়ে জমা হয়। ড্রেন বা নালা দিয়ে মসৃণ ভাবে জল যাওয়ায় বাধার সৃষ্টি করে। দিনের পর দিন এই ভাবে চলতে থাকায় সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়ে গোটা নিকাশিব্যবস্থা। ফলে মাঝারি মানের বৃষ্টিপাত হলেই বৃষ্টির জমা জল সঠিক ভাবে ড্রেন বা নালা দিয়ে বার হতে পারে না। আমরা নিজেরাই প্রতি দিন কর্তব্যজ্ঞানহীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছি, আর জল জমলেই স্থানীয় পুর-প্রশাসনের নিকাশিব্যবস্থা
এবং সাফাই কর্মীদের কর্তব্যে গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগের আঙুল তুলছি।

সৌরভ সাঁতরা

জগদ্দল, উত্তর ২৪ পরগনা

নামও চাই

কলকাতা পুরসভার ভোটের খবরে প্রতি দিনই কাগজে দেখা গেল, অমুক ওয়ার্ডে তমুক প্রার্থী ভোট প্রচার করতে গিয়েছেন ও হাসিমুখে এলাকাবাসীর সঙ্গে জোড়হাতে নমস্কার, করমর্দন ইত্যাদি করে ভোট চেয়ে চলেছেন। বেশির ভাগ মানুষের কাছে বোধগম্য হয় না, উল্লিখিত নম্বরের ওয়ার্ডটি কোন এলাকায় অবস্থিত। তাই অনুরোধ, যখন ওয়ার্ড নম্বরটি উল্লেখ করবেন, তখন দয়া করে এলাকাটির নামও যদি জানিয়ে দেন, বুঝতে সুবিধে হয়।

সুব্রত সেনগুপ্ত

কলকাতা-১০৪

শহরের লজ্জা

হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশে ‘অনার কিলিং’ হয়— অর্থাৎ, মেয়ে অপছন্দের পাত্রকে বিয়ে করলে তাকে মেরে ফেলা হয়, এমন আমরা শুনেছি। নিজেদের বুঝিয়েছি, ওরা যথেষ্ট সংস্কৃতিমান নয়, তাই। কিন্তু কলকাতায় যা ঘটেছে, তার খবর (“নেশামুক্তি কেন্দ্রে এখনও ‘বন্দি’ তরুণী, নিয়ম মানা হচ্ছে তো” , ১৬-১১) পড়ে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমাদের কলকাতায় ‘অনার কিলিং’-এর মনোভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন অভিভাবকরা? প্রেমিকের কাছ থেকে মেয়েকে আলাদা করতে বাবা তাকে জবরদস্তি ভর্তি করেছেন একটি অনুমোদনহীন, বেআইনি নেশামুক্তি কেন্দ্রে। অথচ, মেয়েটি কোনও রকম নেশা করত না, তা সাংবাদিকের কাছে তিনি স্বীকার করেছেন। অর্থাৎ, মেয়েটিকে ওখানে ভর্তির উদ্দেশ্য পরিষ্কার— প্রেমিকের থেকে তাকে আলাদা করা। অবশ্য আরও কোনও খারাপ উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। এই বেআইনি নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলি অনেককে মেরেও ফেলেছে, এমন সংবাদ আগে প্রকাশিত হয়েছে। মেয়েটির পরিবারের সে রকম কোনও উদ্দেশ্য আছে কি না, কে বলতে পারে? সুতরাং সাধু সাবধান। এখনই এর বিরুদ্ধে সরব হতে হবে নাগরিকদের।

অরুণ মেহেরা

ইমেল মারফত

এত্তা জঞ্জাল

কলকাতা পুর এলাকায় দৈনিক ৪৫০০ টন বর্জ্যের মধ্যে মাত্র ৫১৫ টন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম রাজ্য সরকার, জানাল সম্পাদকীয় নিবন্ধ (‘ফাঁক এবং ফাঁকি’, ১০-১২)। ‘মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়েস্ট (ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হ্যান্ডলিং) রুলস ২০০০’ আইন পাশ করার ২০ বছর কেটে যাওয়ার পরেও বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি।

অর্থাভাবের কথা বলে রাজ্য সরকার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। ক্লাবে অনুদান, দুর্গাপুজোয় অনুদানে রাজ্য সরকার যখন জলের মতো অর্থব্যয় করছে, তখন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবহেলা কেন? এর সঙ্গে সরাসরি ভোটব্যাঙ্ক জড়িত নেই বলেই কি এই প্রকল্পে বিমাতৃসুলভ আচরণ? স্তূপীকৃত বর্জ্যের দূষণের ধাক্কায় যদি কলকাতার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তা সামাল দিতে সক্ষম হবে তো রাজ্য সরকার? প্রতিটি পুর এলাকায় অবিলম্বে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হোক।

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল

কোন্নগর, হুগলি

সিঙ্গুরে বিজেপি

ত্রিপুরায় সন্ত্রাসের পর গেরুয়া দল হয়তো আশা করেছিল যে, কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল তার বদলা নেবে, আর সংবাদমাধ্যম ফলাও করে তা প্রচার করবে। কিন্তু তৃণমূল দলীয় কর্মীদের সংযত থাকার কড়া নির্দেশ জারি করল। ভোটের আগে হামলা, ভীতি প্রদর্শন, হুমকি— যা যা তৃণমূল দুর্দান্ত ভাবে করে দেখিয়েছিল ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে, তার কিছুই সংবাদমাধ্যমে আসেনি, প্রশাসন বা আদালতের কাছে লিপিবদ্ধ হয়নি। অগত্যা বিজেপি সিঙ্গুরে তিন দিনের অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছে। অভিযোগ? কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঔদাসীন্য! ভাবা যায়? যে দল দিল্লির আন্দোলনকারী কৃষকদের ‘খলিস্তানি’ বলে দাগিয়ে দিল, যার নেতা দিলীপ ঘোষ প্রমুখ শতাধিক কৃষিজীবীর মৃত্যুর পরেও ছিলেন সম্পূর্ণ নীরব, সেই বিজেপি এখন বঙ্গের চাষিদের কষ্টে চোখের জল ফেলছে? তাও যখন সামনেই কলকাতা পুরসভার ভোট? ‘খেলা হবে’ স্লোগানের মুখে বিজেপি কি তবে পুরভোটের খেলা ছেড়েই বেরিয়ে গেল?

দেবাশিস মিত্র

কলকাতা-৭০

আরও পড়ুন
Advertisement