India

সম্পাদক সমীপেষু: কেবল ব্যর্থতা

আইএসএল আট বছরে পা রাখলেও ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়ন দূরবিনেও খুঁজে পাওয়া যায় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:২৪

ভারতীয় ফুটবলের ক্রমাগত অবনতির কারণ কী? সুদীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দেশের ফুটবলের দৈন্যদশা ক্রমেই যেন আরও প্রকট হচ্ছে। অথচ, তা নিয়ে ফেডারেশনের কোনও মাথাব্যথা নেই। প্রাক্তন ফুটবলাররাও এই বিষয়ে খুব বেশি‌ আগ্রহ দেখান না, যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কবে এ দেশের মানুষ অপর দেশের প্রশংসা ছেড়ে নিজের দেশের ফুটবলকে আপন করে নিতে পারবেন? অলিম্পিক্স, বিশ্বকাপ তো অনেক দূরের কথা, এশিয়ান পর্যায়েও দীর্ঘ কাল বড় মাপের কোনও জয় নেই ভারতের। এমনকি বাংলাদেশ, নেপাল, আফগানিস্তানের মতো র‌্যাঙ্কিং-এ পিছিয়ে থাকা ছোট দেশগুলোর সঙ্গে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে গিয়েও রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে দেশের ফুটবলারদের। কিন্তু কয়েক বছর আগেও পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। প্রাক্তন কোচ স্টিফেন কনস্ট্যান্টাইনের সময় আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং-এ ভারত প্রথম একশোর মধ্যে প্রবেশ করেছিল। দেশের ফুটবল নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতেও শুরু‌ করেছিল ফুটবলপ্রেমীরা। পরবর্তী কালে নতুন কোচ ইগর স্টিমাচ আসতেই আবার সেই চরম অবনতির পথে অগ্রসর হয় দেশের ফুটবল। এক সময় জাতীয় লিগ আইএসএল নিয়েও দেশের ফুটবলের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের স্বপ্ন দেখা হয়েছিল। কিন্তু আইএসএল আট বছরে পা রাখলেও ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়ন দূরবিনেও খুঁজে পাওয়া যায় না। ২৯ মাস ধরে একটা দেশের কোচ হয়েও দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে তিনি ব্যর্থ।

একই দোষে দুষ্ট ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনও (এআইএফএফ)। দেশের ফুটবলের এই ধারাবাহিক অবনতির দায় তাদের উপরও বর্তায়। অ্যাথলেটিক্স, শুটিং, হকি, ব্যাডমিন্টন, কুস্তি, বক্সিং, ওয়েটলিফটিং, টেবিল টেনিস প্রভৃতি খেলায় ভারতীয় খেলোয়াড়রা ক্রমাগত উন্নতি করছে এবং বিশ্বমঞ্চে সেরা দেশগুলিকে টেক্কা দিচ্ছে। একমাত্র ফুটবলের ক্ষেত্রেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এখনই ফেডারেশনের উচিত ক্রোয়েশিয়া, সুইৎজ়ারল্যান্ড, ডেনমার্কের মতো দেশকে মডেল হিসাবে অনুসরণ করে ভারতীয় ফুটবলের পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো। এ ভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এ দেশে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলাটাই উঠে যাবে!

Advertisement

সুদীপ সোম

হাবরা, উত্তর ২৪ পরগনা

ভারমুক্তি

বিরাট কোহলিকে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ান ডে-র অধিনায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া পরে ভারতীয় ক্রিকেটের বোর্ড প্রেসিডেন্ট, তথা প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রতিবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অতীতে আমরা দেখেছি সচিন তেন্ডুলকর নিজে যখন অধিনায়কত্ব করেছিলেন, একটা মানসিক চাপের মধ্যে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়াতে তেমন সফল হতে পারেননি। প্রভাব পড়েছিল নিজের পারফরম্যান্সেও। বিরাট অবশ্য ব্যতিক্রমী, তাঁর পারফরম্যান্স বরাবরই ঈর্ষণীয়। কিন্তু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের পরেও পুরো দল পরিচালনায় কোনও এক অজ্ঞাত ঘাটতি মেটাতেই ভারতীয় বোর্ডের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। অতীতে সৌরভ নিজেও ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। একটা সময়ে প্রবল চাপানউতোর তাঁর কেরিয়ারে প্রভাব ফেলেছিল। অকালেই শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার, সে কথা ক্রিকেটপ্রেমীদের অজানা নয়। বিরাটের এখনও ভারতীয় ক্রিকেট ও বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতি অনেক অবদান বাকি রয়ে গিয়েছে। তাঁর প্রয়োজন ভারমুক্ত আবহ। সৌরভ নিজের অতীত দেখেই কোহলির দায়ভার কমিয়েছেন। এটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত, যার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে বদলে যেতে পারে বিশ্ব ক্রিকেটের খতিয়ান। কোহলির ভক্তদেরও এই সিদ্ধান্তে আস্থা রাখা, ও তাঁর প্রতিভাকে উপভোগ করা উচিত।

শুভজিৎ বসাক

কলকাতা-৫০

পদকের সন্ধানে

আমেরিকায় নীরজের মহড়া শুরু হয়ে গেল, ক্যালিফর্নিয়ার চুলা ভিস্টা শহরে জার্মান কোচ ক্লাউস বার্তোনিজ়ের সঙ্গে। চুলা ভিস্টা এলিট ট্রেনিং সেন্টারে ৯০ দিনের নিরবচ্ছিন্ন ফিটনেস ও স্ট্রেংথ ট্রেনিং নেবেন নীরজ, আগামী বছরের কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসাবে। স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার সবুজ সঙ্কেত পেয়ে ‘টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম’ (টপ) প্রকল্পের অধীনে আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা খরচের এই ট্রেনিং নেবেন তিনি। ২০১৬-য় এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে রুপো জিতে জ্যাভেলিন হাতে তুলে নিয়ে বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ, দক্ষিণ এশীয় গেমস, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস— সব ক’টাতে সোনা জিতেছেন নীরজ। অলিম্পিক্সের আসরে প্রথম আবির্ভাবেই ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তিগত স্বর্ণপদকজয়ী হিসাবে ভারতকে গর্বিত করেছেন।

তবে নীরজই একমাত্র অলিম্পিক পদক আনতে পারেন, এমন তো নয়। বরং তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, দেশের মাটিতে উন্নত মানের ফসল ফলানো সম্ভব। প্রয়োজন হল সঠিক দিশায় এগোনো, প্রতিভা খুঁজে আনার নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস। স্কুলস্তর থেকে শরীরের গঠন, উচ্চতা, পেশির গঠন, ফুসফুসের ক্ষমতা, এ সব যাচাই করে প্রতিভা তুলে আনতে হবে। তাঁদের ক্রীড়া বিদ্যালয়ে ভর্তি করে পড়াশোনা ও খেলাধুলা অনুশীলনের সুযোগ দিতে হবে। তার পর তো রয়েছে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া, রাজ্যে রাজ্যে পুরোপুরি বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। এ ভাবে আরও নীরজ বেরিয়ে আসবেন এ দেশের মাটি থেকে।

তবে তাঁদের কত জনকে ট্রেনিং নিতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বাইরে পাঠাবে সরকার! বরং প্রশিক্ষকদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থাকলে ভারতের বহু অ্যাথলিট সারা বছর উন্নত প্রশিক্ষণ পেয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিতে পারবেন। তৈরি অ্যাথলিটদের অবশ্য যে কোনও প্রতিযোগিতার আগে বিদেশে বিভিন্ন সার্কিটে পাঠানো দরকার, নিজেদের প্রস্তুতির তুল্যমূল্য মূল্যায়নের জন্য। একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এগোলে উত্তরোত্তর ভাল ফল করবে ভারত।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা

কলকাতা-১৫৪

পুঁজির দাপট

সম্প্রতি চোখে পড়ল, একটি বিখ্যাত শিক্ষা সংস্থার বিজ্ঞাপন। ওই সংস্থা মূলত মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রবেশের প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য শিক্ষা দিয়ে থাকে। এখন তারা পঞ্চম শ্রেণি থেকেই ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর কথা ঘোষণা করছে বহু দৈনিক সংবাদপত্রের প্রথম পাতার বিজ্ঞাপনে। দেখে গলসওয়ার্দির লেখা ‘কোয়ালিটি’ নামক ছোট গল্পের কথা মনে পড়ল, যেখানে গেসলার ভ্রাতৃদ্বয় তাদের জুতো তৈরি করছে পরম যত্নে। অথচ, গল্পের শেষে বহুজাতিক কোম্পানি দখল করে নিচ্ছে তাদের দোকান। অনলাইন-নির্ভর এই বাজারে বিশ্ব জুড়ে মালিক গুটিকয়, বাকিরা বাইকে বাইকে পণ্য বিক্রয় করা স্বল্প মাইনের শ্রমিক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে এই পুঁজিপতি শ্রেণির অধীনে কম বেতনের এই বিরাট শ্রমিক সমাজ কিছু দিন পরে মালিকপক্ষের বিরাট পণ্যরাজি ক্রয় করতে পারবেন তো? আবার কৃষক তাঁর জমির সম্ভাবনাকে পূর্ণ ভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না। পরিকাঠামো বা লোকবলের অভাবে তিন ফসলি জমিও এক ফসলি চাষ হয়ে পড়ে আছে। আগামী দিনে এই রকম বহু জমি ধনী মালিকের কব্জায় চলে যাবে। সেখানে উন্নত প্রযুক্তিতে আরও বেশি ফসল হবে। তখন আজকের জমির মালিক হয়তো কৃষি শ্রমিক হিসাবে কোম্পানির ড্রেস পরে সেখানে চাকরি করবেন। হয়তো নির্মাণশিল্পের বালি, সিমেন্ট, স্টোন চিপের জোগান আসবে বহুজাতিক সংস্থার ভ্যানে, তাদের লোগো-দেওয়া পোশাক পরা শ্রমিকের মাধ্যমে।

শোভন সেন

সাঁতরাগাছি, হাওড়া

আরও পড়ুন
Advertisement