পুস্তক পরিচয় ২

পাঠকের বুদ্ধির খোপে প্রবেশের চেষ্টা

অ তীনের লেখার ধরনটাই আলাদা। তার কোনও নির্দিষ্ট ছক নেই, মাপজোক করে হিসেব মিলিয়ে গল্প লেখার ধাত তাঁর নয়। প্রায় সব লেখাই স্বতঃস্ফূর্ত, ভেতরের তাগিদেই নিজের মতন করে গড়ে উঠেছে। কোনও কোনও সময় মনে হয়, অতীন বুঝি গল্পের পটুয়া।’ বিমল কর লিখেছিলেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০১

অ তীনের লেখার ধরনটাই আলাদা। তার কোনও নির্দিষ্ট ছক নেই, মাপজোক করে হিসেব মিলিয়ে গল্প লেখার ধাত তাঁর নয়। প্রায় সব লেখাই স্বতঃস্ফূর্ত, ভেতরের তাগিদেই নিজের মতন করে গড়ে উঠেছে। কোনও কোনও সময় মনে হয়, অতীন বুঝি গল্পের পটুয়া।’ বিমল কর লিখেছিলেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে। সে লেখা ফিরে পড়া গেল গল্পসরণি-র (সম্পা: অমর দে) ‘অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ সংখ্যা’য়। বেশ কিছু রচনায় তাঁর কথাসাহিত্য নিয়ে মূল্যায়ন, আবার তাঁকে নিয়েই গদ্য— যেখানে সৃষ্টিশীল মানুষটির কাজ ও জীবনের সেতুটিকে স্পর্শ করা হয়েছে। রয়েছে তাঁর বংশলতিকা, জীবনপঞ্জি ও পুরস্কার, গ্রন্থপঞ্জি। সঙ্গে সন্দীপ দত্ত-কৃত পত্রপত্রিকায় তাঁকে নিয়ে আলোচনার পঞ্জিও।

বাণিজ্যকরণের বাইরে বেরিয়ে ‘আমরা চেষ্টা করেছি পাঠকের মন ও বুদ্ধির খোপের ভেতর প্রবেশ করতে। কেননা পাঠকই গল্পকথার সম্পদ ও সম্বল। পাঠকের জন্যই গল্পকথা।’ জানিয়েছেন গল্পকথা-র সম্পাদক শ্রীকুমার চক্রবর্তী। পত্রটির নব পর্যায়ের এই দ্বিতীয় সংকলনটিতে রবিশঙ্কর বলের আখ্যান ‘লিম্বো লেন’ ও কমল চক্রবর্তীর উপন্যাস ‘ওহে!’ আর পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘ত্রিকালজয়ী প্রেমেন্দ্র মিত্র’।

Advertisement

‘এ মুহূর্তে মনে পড়ছে দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জটায়ু’ ও দেবেশ রায়ের ‘নিরস্ত্রীকরণ কেন’ গল্প দুটি। আপাতদৃষ্টিতে গল্প নেই, কিন্তু গল্পকারদের বীক্ষায়, ফর্ম চেতনায়, সময়ের সম্পর্কে প্রশ্নে, এরা হয়ে উঠেছে দুটি অসামান্য ছোট গল্প।’ পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনায় তাত্ত্বিকতার পাশাপাশি হালফিল গল্পকারদের রচনা নিয়ে পর্যবেক্ষণও। এমন ‘গল্প ও গল্পকার সংখ্যা’ আগেও প্রকাশ করেছে এবং মুশায়েরা (সম্পা: সুবল সামন্ত), সমকালীন গল্পকারদের নিয়ে, এটি সাম্প্রতিক উপস্থাপন।

‘বাঙালির কাজ’ নিয়ে এ বারের অগ্রবীজ (এই সংখ্যার সম্পাদক: সৌম্য দাশগুপ্ত)। ‘বঙ্গভাষী মানুষের পেশা, ক্রিয়া, কর্মপদ্ধতি, কর্মনির্বাচন, পেশানির্বাচন, সামাজিক, ও বৌদ্ধিক চিন্তাজগত... সমস্ত দিকগুলি নিয়েই এই সংখ্যার আগ্রহ।’ জানিয়েছেন সম্পাদক। পেশার ভিতর দিয়ে দেখলে বাঙালির চেহারাচরিত্র কেমন; প্রাচীন বা মধ্যযুগ পেরিয়ে এই আধুনিক যুগে বাঙালির পেশা ও কর্মনির্বাচন পদ্ধতি কী রকম— এ সব নিয়ে দীনেশচন্দ্র সেন, নীহাররঞ্জন রায়ের রচনা থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অবধি অনেকের লেখাই সংখ্যাটিতে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ, এবং এর বাইরের প্রবাস, পৃথিবীর নানা প্রান্তের বাঙালিরই কর্মবৃত্তান্ত এই পত্রে।

‘বস্তুত পাকিস্তানই প্রথম নিজেকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র বলে ঘোষণা করে। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের সময় থেকেই সে ইসলামি প্রজাতন্ত্র।’ মিলন দত্তের এই লেখাটি ‘ইসলামি রাষ্ট্র, ইসলামি প্রজাতন্ত্র, ইসলামি গণতন্ত্র ইত্যাদি’ নিয়ে। এবং অন্যকথা-য় (প্রধান সম্পা: বিশ্বজিৎ ঘোষ জলধি হালদার) রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাও ‘ছোটোলোক এবং/ বনাম গণতন্ত্র’ নিয়ে। কাশ্মীর প্রসঙ্গে বিশাল ভরদ্বাজের ছবি ‘হায়দার’ নিয়ে জরুরি লেখা ইরাবান বসুরায়ের। সিনেমা ও সাহিত্য নিয়ে বাংলাদেশের তানভীর মোকাম্মেলের ‘সাহিত্যিক সমর মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা’টি প্রকাশের পাশেই তাঁর প্রামাণ্যচিত্র ‘১৯৭১’-এর আলোচনা সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের কলমে।

‘তিনিই বুঝিয়েছিলেন সিনেমা বুঝতে বা বানাতে হলে... মরমিয়া হলেই চলে।’ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মেঘদূত রুদ্রের লেখা। এ বারের কালকথা-টি ( সম্পা: মৌলিনাথ বিশ্বাস) ‘সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় সম্মাননা সংখ্যা’। সেখানে তাঁর গ্রন্থাদি, সম্পাদিত গ্রন্থ, আর চিত্রনাট্যের পরিচয়ের পাশাপাশি তাঁর মনন নিয়েও নানা রচনা।

আধুনিক ভারতীয় থিয়েটারের অন্যতম পুরোধা শম্ভু মিত্র-কে নিয়ে শিল্পসাহিত্য-এর (প্রধান সম্পা: অনিন্দ্য সৌরভ) এ বারের সংখ্যাটি। কর্মপঞ্জি, গ্রন্থপঞ্জি, পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার ও আলোচনার পাশাপাশি তাঁকে নিয়ে পুরনো ও নতুন রচনার সমাহার এ-পত্র। অমর্ত্য সেন সহ বিশিষ্ট বাঙালিদের সঙ্গে বিজয় তেণ্ডুলকর, ইব্রাহিম আলকাজি প্রমুখের রচনা।

‘মন্দির স্থাপত্য’ নিয়ে নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ রচনা আরশিনগর-এ (সম্পা: স্বাতী গুহ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়), সঙ্গে স্বাস্থ্য-সংস্কৃতি নিয়ে দিলীপ ঘোষের লেখা।

মিলেমিশে-র (সম্পা: সমীরকুমার গুপ্ত) ‘বাদল বসু স্মরণ সংখ্যা’য় তাঁকে নিয়ে বিশিষ্ট বাঙালিদের লেখাপত্র। বাদল বসুর সঙ্গে মল্লিকা সেনগুপ্তের কথোপকথন, তাঁর নিজেরও একগুচ্ছ বিবিধ রচনা।

বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি, গ্রামীণ স্বাস্থ্য, বা মণিপুরের বীরাঙ্গনা শর্মিলাকে নিয়ে প্রবন্ধ ঝড় সাহিত্যপত্র-এ (সম্পা: অচিন্ত্য সিংহ)। রেজাউল করীম, রোকেয়া সাখওয়াত, মাদাম কামা-কে নিয়েও আলোচনা।

কুনুর কথা-য় (সম্পা: চুনিলাল মুখোপাধ্যায়) নদী নিয়ে ক্রোড়পত্র। বাংলার নদ-নদী-খাল-বিল-পুষ্করিণীর হালহদিশ সংখ্যাটিতে। শুরুতেই কল্যাণ রুদ্রের প্রবন্ধ ‘গঙ্গা-বদ্বীপ থেকে মহানদী-ঔপনিবেশিক কাল থেকে এই সময় নদী-শাসনের পরম্পরা’। নদী নিয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বইকে ভিত্তি করে রচনাটির বিষয়: নদী, জল, পলি, এবং কৃষির আন্তঃসম্পর্ক। এ ছাড়াও মধ্যরাঢ়ের নদী সংস্কৃতি থেকে অজয় নদ হয়ে বাংলা সাহিত্যে নদী-ভাবনার কথা।

মূলত চিকিৎসকরাই লেখক তাঁতঘর একুশ শতক-এর (সম্পা: অরূপ আস) ‘সংগীত চিকিৎসা (মিউজিক থেরাপি)’ সংখ্যাটির। বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক রোগের উপশমে মিউজিক থেরাপি-র উৎপত্তি থেকে প্রয়োগবিধি অবধি বিস্তারিত আলোচনা।

‘আমরা চেয়েছি এই যৌন প্রতিবন্ধী মানুষগুলির আইনি স্বীকৃতির সামাজিক প্রতিষ্ঠা।’ জানিয়েছেন দুঃখানন্দ মণ্ডল, তাঁর সম্পাদিত কোরাস-এর বিশেষ সংখ্যা ‘বৃহন্নলা: তৃতীয় নয়ন’-এ। আমাদের দৈনন্দিনে বৃহন্নলার অস্তিত্ব নিয়ে তথ্য-সমীক্ষা সহ মননশীল নিবন্ধাদি।

আরও পড়ুন
Advertisement