ঢাকার পথতরুদের কথা

উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার প্রথম পরিচয় অনুবাদক হিসেবে। সাবেক সোভিয়েত দেশ থেকে আসা প্রগতি প্রকাশনের অন্বিষ্ট হৃদয় অপচিত হৃৎপিণ্ড কিংবা কেন আমি বাবার মত তাঁর অনুবাদেই আপামর বাঙালির কাছে লভ্য হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০২
শ্যামলী নিসর্গ, দ্বিজেন শর্মা। কথা প্রকাশ (ঢাকা), ৪০০.০০

শ্যামলী নিসর্গ, দ্বিজেন শর্মা। কথা প্রকাশ (ঢাকা), ৪০০.০০

উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার প্রথম পরিচয় অনুবাদক হিসেবে। সাবেক সোভিয়েত দেশ থেকে আসা প্রগতি প্রকাশনের অন্বিষ্ট হৃদয় অপচিত হৃৎপিণ্ড কিংবা কেন আমি বাবার মত তাঁর অনুবাদেই আপামর বাঙালির কাছে লভ্য হয়েছে। কিন্তু মস্কো যাত্রার বহু আগে ঢাকা নটর ডেম কলেজে শিক্ষকতাকালীন ১৯৬৫ সালে এক আশ্চর্য বই লিখেছিলেন তিনি। পথতরুদের নিয়ে ইংরাজি ভাষায় কাওয়েনের ফ্লাওয়ারিং ট্রিজ অ্যান্ড শ্রাবস অব ইন্ডিয়া, কিংবা বেনথালের ট্রিজ অব ক্যালকাটা জাতীয় বই থাকলেও বাংলা ভাষায় সে অভাব দূর করতে এ এক পথিকৃৎ গবেষণা। পরবর্তীতে ভারত-পাক যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭৪ সালে তাঁর মস্কোযাত্রা বইয়ের প্রকাশকে পিছিয়ে দেয় পনেরো বছর। ১৯৮০-তে ঢাকার বাংলা আকাদেমি থেকে শ্যামলী নিসর্গ প্রকাশিত হলেও বইটির প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণ বিক্রি হতে লেগে যায় যথাক্রমে ১৪ ও ১৭ বছর। অবশেষে লেখকের ৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি ঢাকার ‘কথা প্রকাশ’ থেকে নব কলেবরে প্রকাশ পেয়েছে বইটি।

সুদৃশ্য এই বইটি হাতে নিয়ে চমকে উঠতে হয়। উদ্ভিদবিদ্যার সঙ্গে নন্দনতত্ত্বের এক অদ্ভুত যোগ ঘটেছে প্রতি পাতায়। বিভিন্ন গাছ, ফুল বা ফলের বর্ণনায় ফিরে ফিরে এসেছে ময়মনসিংহ গীতিকা, জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দিন, মুহম্মদ কবীর থেকে শ্রীহট্টের লোকগীতি, কালিদাসের ‘ঋতুসংহার’ এবং সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রকাব্যে তরুলতা বিষয়ে তো এক আলাদা পরিশিষ্টই যোগ করেছেন লেখক। তা বলে উদ্ভিদবিদ্যাও অবহেলিত হয়নি। প্রতিটি গাছের সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত সচিত্র বর্ণনা, উৎস ও বিস্তার, উদ্ভিদজগতে তার অবস্থান ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে। ভূমিকায় দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে ভারতীয় উদ্যান ঐতিহ্য নিয়ে। লেখকের মন্তব্য, ‘মোগল উদ্যানের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এদেশে পরবর্তীকালে পরীক্ষানিরীক্ষায় বিবর্তিত হয়নি। আমাদের অবহেলায় একটি আশ্চর্য সম্ভাবনা বিলুপ্ত হল।’ আবার তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘[ঢাকা] শহরের নিসর্গ-পরিকল্পনার কাজ শুরু হয় ১৯০৮ সালে। লন্ডনের কিউ উদ্যানের অন্যতম কর্মী আর. এল. প্রাউডলক এর স্থপতি।... ঢাকার পথে তরুরোপণের অসম্পূর্ণ কাজ তাঁর সহযোগীদের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ হয় ১৯২৮ সালে।’ প্রাউডলকের প্রধান সহকর্মী বাবু অখিলচন্দ্র চক্রবর্তীর কাছ থেকে দ্বিজেনবাবু এই তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।

Advertisement

তবে লেখক বাজিমাত করেছেন অন্য জায়গায়। ঢাকা শহরের যেখানে যেখানে তাঁর বর্ণিত বিশেষ গাছটি লভ্য বা পূর্বে লভ্য ছিল, তারও বর্ণনা দিয়েছেন মেদহীন, স্বাদু গদ্যে। শিউলি (শেফালি) গাছ (নিকটেনথাস্‌ আরবরট্রেস্টিস) সম্পর্কে যেমন লিখছেন, ‘নিকটেনথাস্‌ গ্রিক শব্দ, অর্থ হলো নিশিপুষ্প। শিউলি ব্যতীত কোনো বাগানই পূর্ণ নয়। আমাদের সৌন্দর্য চেতনার অনুষঙ্গ হিসেবে এই তরুটি অবশ্যই যত্ন ও সমাদর দাবি করতে পারে। পাবলিক লাইব্রেরির দেয়ালঘেঁষা সেই শিউলি গাছটি আজও আছে, প্রস্ফুটিত হয়, গন্ধ বিলোয়।’ (পৃ ২২৪)

সুমুদ্রিত বইটির গুণমান বহু গুণে বাড়িয়েছে সব গাছের রঙিন ছবি ও বাঁধাই। রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী অনেক দিন আগে কলকাতার গাছ একটি বই লিখেছিলেন। কিন্তু দ্বিজেন শর্মার বইয়ের মতো একটি হ্যান্ডবুক আশু প্রয়োজন।

আরও পড়ুন
Advertisement