Greg Woolf

প্রকৃতিকে ধ্বংস করে শহর এগোয় বিলুপ্তির পথে

যখনই শহুরে সভ্যতার সঙ্গে প্রাকৃতিক ও গ্রামীণ সভ্যতার দূরত্ব বেড়েছে, তার অস্তিত্ব তখনই সঙ্কটে পড়েছে— উল্‌ফের মডেল ইঙ্গিত করছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৩৪

দ্য লাইফ অ্যান্ড ডেথ অব এনশিয়েন্ট সিটিজ়: আ ন্যাচরাল হিস্ট্রি
গ্রেগ উল্‌ফ
৬২৩.০০ (কিন্ড্‌ল সংস্করণ)
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস

ভাইরাস বেআব্রু করেছে শহরের লুকিয়ে থাকা দৈন্যদশা। শহরের আপাত বৈভবের নীচেই লুকিয়ে রয়েছে দারিদ্র, অনাহার, হিংসা, হানাহানি, মানুষের স্বার্থপরতা। আজকের বিশ্বময় পরিচিত এই আবহে গ্রেগ উল্‌ফ-এর বইটি অতি প্রাসঙ্গিক। ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ উল্‌ফ প্রাচীন সভ্যতা বিষয়ে প্রথম সারির বিশেষজ্ঞদের এক জন। সভ্যতার শুরুতে গ্রামীণ সমাজ স্থাপনের মাধ্যমে মানুয সমাজবদ্ধ হয়। সেই গ্রামীণ সমাজ বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরে তৈরি হয় শহুরে সভ্যতা। ঠিক কী ভাবে শহুরে সভ্যতার জন্ম হল? বইয়ে উল্‌ফ খুঁজেছেন এই প্রশ্নের উত্তর। শহর-পত্তন বা শহর-সভ্যতা (‘আরবানাইজ়েশন’) বলতে আমরা যা বুঝি, তার সূত্রপাত রোমের গোড়াপত্তন ও বিবর্তনের হাত ধরে। সম্রাট অগাস্টাসের সময় রোমের জনসংখ্যা ছিল সে সময়ের পৃথিবীর ০.৩ শতাংশ। এই ধরনের বড় শহরের প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মহামারি ও অভ্যন্তরীণ কলহে কতটা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলোচনা করেছেন উল্‌ফ। যদিও রোম নয়, উল্‌ফের মতে পৃথিবীর প্রথম শহর সুমেরীয় সভ্যতার উরুক। এই শহরের সৃষ্টি ও ধ্বংস ছাড়াও বইয়ে জায়গা পেয়েছে মহেঞ্জোদরো, জেরুসালেম ও জেরিকো, পম্পেই, আলেকজ়ান্দ্রিয়া ও বাইজ়ান্টাইন সাম্রাজ্যের শহরগুলোর প্রাকৃতিক ইতিহাস। শহরের জনসংখ্যা, জলের উৎস এবং ফসল উৎপাদনের তথ্যের সঙ্গে প্লেগ, পতঙ্গের আক্রমণ, সম্পদের অসম বণ্টন ও দুর্ভিক্ষের তথ্য জুড়েছেন গ্রেগ উল্‌ফ।

Advertisement

যখনই শহুরে সভ্যতার সঙ্গে প্রাকৃতিক ও গ্রামীণ সভ্যতার দূরত্ব বেড়েছে, তার অস্তিত্ব তখনই সঙ্কটে পড়েছে— উল্‌ফের মডেল ইঙ্গিত করছে। এই বইয়ে তিনি মূলত প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শহরের ধ্বংসের বৈজ্ঞানিক কারণ পর্যালোচনা করলেও, তা বর্তমান পৃথিবীর ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ সত্যি। ২০২০-র ভয়ঙ্কর বাস্তব জানিয়ে দিয়ে গেল, প্রকৃতি থেকে পাঠ নিয়ে নয়, প্রকৃতিকে ধ্বংস করে বেড়ে চলেছে শহুরে বৈভব, যা শহরকে এবং সভ্যতাকে এগিয়ে দিচ্ছে বিলুপ্তির দিকে।

আরও পড়ুন
Advertisement