আগুন দামের আঁচে বাজার প্রায় ফাঁকা।
পাল্লা দিয়ে ছুটছে সোনা-রুপোর দাম। বৃহস্পতিবার কলকাতার বাজারে দু’টিই উঠল নজিরবিহীন উচ্চতায়। ১০ গ্রাম খুচরো পাকা সোনা দাঁড়াল ৬১,৬০০ টাকা। বাট ৬১,৩০০। একলপ্তে ৭৫০ টাকা বেড়ে রুপোও এই প্রথম পৌঁছে গেল ৭৬,০০০ টাকায়। এক কেজি বাট বিকিয়েছে ৭৬ হাজারে, আর খুচরো রুপো ৭৬,১০০ টাকায়। দাম দেখে মাথায় হাত ক্রেতার। হতাশ বিক্রেতারাও। কাল পয়লা বৈশাখ। এক সপ্তাহ বাদে অক্ষয় তৃতীয়া। ৩ বৈশাখ থেকে শুরু বিয়ের মরসুম। রয়েছে ইদও। গয়না ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, এই সময়ে সোনা কিনতে উপচে পড়া ভিড় দেখার আশায় হা-পিত্যেশ করে বসেছিলেন তাঁরা। বাস্তবে আগুন দামের আঁচে বাজার প্রায় ফাঁকা। সাধারণ ক্রেতারা কার্যত উধাও। হাতে টাকা-পয়সা আছে কিংবা বৈশাখেই বিয়ে, এমন দুই শর্ত না মিললে পারতপক্ষে দোকানমুখো হচ্ছেন না অনেকেই।
বিক্রেতাদের একাংশ বলছেন, গয়না কিনতে এসে বিপাকে পড়ছেন বহু মানুষকে। বিয়ের বরাদ্দ কাটছাঁট করছেন কেউ, অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। বাড়ির সোনা দিয়ে গয়না কেনার ঝোঁকও বেড়েছে। তবু কিছু ক্রেতা এ দোকান-ও দোকান ঘুরছেন একটু কমে কিনতে পারার আশায়। আরও দাম বৃদ্ধির আশঙ্কাও কাজ করছে। একই অবস্থা রুপো কেনার ক্ষেত্রে। সোনার বিকল্প হিসাবে তাতেও হাত ছোঁয়ানো দুষ্কর হয়েছে, বলছেন হলদিয়ার দূর্গাচকের মাঝারি মাপের এক গয়নার দোকানের মালিক মধুসূদন কুইলা। গয়নার বরাত কমায় বহু দিন ধরেই আর্থিক সমস্যার মধ্যে রয়েছেন সেগুলির কারিগরেরা। গত দু’দিনে সঙ্কট আরও বাড়ার ইঙ্গিত মিলেছে।
বেলঘরিয়ার ছোট গয়নার দোকানের মালিক এবং কারিগরদের সংগঠন বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার বলছেন, “দাম বেড়ে যাওয়ায় গয়নার বাজারের যা হাল হয়েছে, তাতে কোভিডের সময়ও এমন খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়নি। ছোট দোকান এবং কারিগরদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। দাম তো আজকে নয়, গত বেশ কিছু দিন থেকেই বাড়ছে। অতীতেও অনেক বার বেড়েছে। কিন্তু এমন অবস্থা আগে হয়নি। মানুষ প্রয়োজন মেটাবে নাকি গয়না কিনবে?’ ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই গয়নার বরাত দিয়ে পরে তা বাতিল করে পয়সা ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।’’
দাম বাড়লেও বিয়ের কেনাকাটা না করে উপায় নেই অনেকের। তেমনই এক ক্রেতা বাসুদেবপুরের ঝর্না দাসের দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থা। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের জন্য গয়না কিনতে এসে কিছু পছন্দ করে কিনতে পারছেন না। বরাদ্দ কমাতেই হয়েছে তাঁকে। হালকা সোনার গয়না দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন তিনি।