কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূরজেওয়ালা। —ফাইল চিত্র।
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমলেও, তার সুবিধা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে না বলে ফের মোদী সরকারকে আক্রমণ করলেন বিরোধীরা। বুধবার এক প্রশ্নের উত্তরে সংসদে কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যই তুলে ধরে কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূরজেওয়ালার দাবি, তেলের উপরে কর, সেস, শুল্ক বসিয়ে গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রের আয় হয়েছে ৩৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মাত্রাছাড়া দামে যখন নাজেহাল আমজনতা, তখন ‘ধৃতরাষ্ট্র’ মোদী সরকারের সেই দুর্ভোগ চোখে পড়ছে না। একই দিনে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের তোপ, মোদী সরকারের আমলে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি সঙ্কুচিত হচ্ছে। এই বাস্তবের কথা প্রধানমন্ত্রী কবে স্বীকার করবেন?
বুধবার রাজ্যসভায় করা নিজেরই একটি প্রশ্ন এক্স-এ তুলে ধরেন রণদীপ। সেখানে তেল মন্ত্রকের কাছে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, ২০২৪-এর মার্চের তুলনায় বিশ্ব বাজারে তেলের দর ২১% কমেছে। তাই তেল সংস্থাগুলি কি দেশবাসীকে সুরাহা দেবে? যদি না দেয়, তা হলে তার কারণ কী? ২০১৯ থেকে পেট্রল-ডিজ়েলে উৎপাদন শুল্ক এবং অন্যান্য কর ও সেস বাবদ সরকারের কত টাকা আয় হয়েছে? এর জবাবে তেল মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা। প্রতিমন্ত্রী সুরেশ গোপীর দাবি, দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম নির্ভর করে বাজারের উপরে। তা দেখে তেল সংস্থাগুলি দর স্থির করে। পাশাপাশি, বর্তমানে ভারত চাহিদার ৮৫% তেল আমদানি করে। যে বাস্কেট থেকে তা কেনা হয়, সেই অশোধিত তেলের দাম ২০১৯ সালের অগস্টে ব্যারেলে ছিল ৫৯.৩৫ ডলার। ২০২২-এর মার্চে পৌঁছয় ১১২.৮৭ ডলারে। সে বছরের জুনে ১১৬.০১ ডলার ছোঁয়ার পর থেকে চড়েই রয়েছে। সেই সঙ্গে ২০১৯-২০ সাল থেকে গত এপ্রিল-জুন পর্যন্ত দেশের ১৫টি বড় তেল সংস্থার থেকে কর, সেস, শুল্ক, জিএসটি বাবদ আয়ের তথ্যও দিয়েছেন গোপী। যা বলছে, এই ক’বছরে করোনার মধ্যে ২০২১-২২ সালে এসেছে সবচেয়ে বেশি, ৭.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা। যদিও সূত্রের দাবি, অশোধিত তেলের ভারতীয় বাস্কেট বেশ কিছু দিন হল ওই ১১৬ ডলারের থেকে অনেক কমেছে। চলতি মাসে তার দাম রয়েছে প্রায় ৭৩ ডলারে।
সূরজেওয়ালার দাবি, কেন্দ্রের তথ্যেই প্রমাণিত কী ভাবে তারা ‘লুট’ চালাচ্ছে। এই খাতে কেন্দ্র ৩৬,৫৮,৩৫৪ কোটি টাকা আয় করেছে। ২০১৪ থেকে অশোধিত তেলের দাম ৩২% কমেছে। এখন ব্যারেলে ৭৩ ডলার। সেই হিসাবে দিল্লিতে পেট্রল-ডিজ়েল হওয়া উচিত লিটারে যথাক্রমে ৬৪.৪৪ টাকা এবং ৫৯.৬১ টাকা। অথচ রয়েছে ৯৪.৭৭ টাকা এবং ৮৭.৬৭ টাকা (কলকাতায় যথাক্রমে ১০৪.৯৫ এবং ৯১.৭৬ টাকা)। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, তেলের দাম কমা নিয়ে এ বারও কেন্দ্র কোনও উত্তর দেয়নি। ফলে সাধারণ মানুষ চড়া দামের হাত থেকে আদৌ কোনও সুরাহা পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই।