লোহার তৈরি আভূষণে সজ্জিত হয়ে দেবী উঠলেন। লক্ষ্মী দেবীর রূপ যেমন স্মিত এবং স্নিগ্ধ। এই দেবী ঠিক তার বিপরীত তিনি ক্রুর এবং ভয়াল। ভীষণ তাঁর গাত্রবর্ণ। চর্ম কুঞ্চিত, কাল গর্দভে উপবেশন করে তিনি উঠে এলেন!
সমুদ্র মন্থনেরত দেব ও অসুরকুল যুগপথ স্তম্ভিত এবং হতবিহ্বল হয়ে পড়ল।
দেবী মহালক্ষ্মীকে তারা প্রণাম করবে কিন্তু এ দেবীকে কীরূপে গ্রহণ করবে! মাতা লক্ষ্মীর পূর্বে লক্ষ্মীর ছায়া নিয়ে তিনি উত্থিত হয়েছিলেন বলে তার নাম রাখা হয়েছিল অলক্ষ্মী।
মাতা লক্ষ্মীর ঠিক বিপরীত অর্থাৎ মাতা যদি সৌভাগ্য ও ধনৈশ্চর্যের প্রতীক হন। ইনি দুর্ভাগ্য এবং কলহের প্রতীক। আর ভণিতা না করে কাহিনিতে ফিরি, শোনা যায় এই কার্তিক মাসেই সমুদ্র মন্থন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সমুদ্রমন্থন কালে দ্রব্যাদির উত্তোলন হয় যেমন পারিজাত বৃক্ষ কামধেনু, অমৃত, কৌস্তুভ,কালকূট হলাহল।
কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে সমুদ্রমন্থনে ধন্বন্তরী, দেবী লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মী সমুদ্র থেকে উঠে আসেন। লক্ষ্মী পুরাণ অনুযায়ী মাতা লক্ষ্মী সাময়িক সমুদ্রে অবতরণ করেন। সমুদ্র মন্থন কালে পুনরায় উত্থিত হয়ে স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করেন, কার্তিক-অমাবস্যায়।
তাই মাতা লক্ষ্মীর স্বর্গে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে স্বর্গকে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল আলোকমালায়। আর এ ভাবেই, দীপান্বিতা কালীপুজো এবং দীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজো মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
কিন্তু মাতা লক্ষ্মীর ছায়া হল অলক্ষ্মী। তাই তিনি সদাই মা'য়ের পিছে চলেন। কিন্তু তিনি দেবী তাঁকে গৃহে যেমন রাখা যায় না, অস্বীকারও করা যায় না। তাই, গোবর বা কাদার তৈরি অলক্ষ্মী তৈরী করে, কলা গাছের খোলে করে ধূপ-দীপ সহকারে তাঁকে পুকুর বা দীঘির খোলে রেখে আসা হয়।
তার পর আর পিছনে না তাকিয়ে, কুলো, শাঁখ-কাঁসর বাজিয়ে ফিরে আসা হয় গৃহে। এই প্রসঙ্গে একটু প্রচলিত ধ্বনি হল, "অলক্ষী বাইরে যা, লক্ষী ঘরে আয় বা লক্ষ্মী আয়, অলক্ষ্মী যা...।"
তার পর সাড়ম্বরে লক্ষ্মীপুজো সেরে তারপর কালীপুজো করা হয়। এই রূপ অলক্ষ্মী বিদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্মী বা শুভর আগমনকে দিয়ে কালীপুজোর সূচনা বা লক্ষ্মীপুজোর সূচনা করা হয়।
দ্বিতীয় আরেকটি ভাষ্য পাওয়া যায়, সেটিতে অলক্ষ্মী তত্ত্ব না থাকলেও, মাতা লক্ষ্মীর আগমনকে সূচিত করা হয়। লঙ্কা বিজয় সেরে সীতা ও লক্ষ্মণকে নিয়ে রামচন্দ্র যে দিন অযোধ্যায় ফেরেন, তিথি হিসেবে সেই দিনটি ছিল কার্তিক-অমাবস্যা। সমগ্র অযোধ্যাবাসী তাদের প্রভু শ্রীরাম এবং সীতা মাতার আবির্ভাব উপলক্ষে সমগ্র অযোধ্যাকে আলোয় ভরিয়ে রেখেছিলেন।
একই কারণে, স্বর্গলোক সেজে ওঠে দীপমালায়। ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রামের লীলাসঙ্গিনী সীতাদেবী তথা লক্ষ্মীদেবীকে বরণ করে নেওয়ার জন্য সেই রাতে অযোধ্যা নগরীর সাথে স্বর্গালোককেও সাজানো হয়েছিল অগণ্য দীপমালায়। মাতা লক্ষ্মীর আগমনের দিন, তাই লক্ষ্মীপুজো।
তৃতীয় পৃথক ভাষ্য, নরকাসুর বধ। কার্তিক-চতুর্দশীতে শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করে তাঁর কারাগারে বন্দি ষোলো হাজার গোপিনীকে মুক্ত করেন। সেই উপলক্ষে, পরের দিন অর্থাৎ কার্তিক-অমাবস্যাতে আলোকমালা সাজিয়ে উৎসব হয়েছিল।
এ ভাবেই কার্তিক মাসের অমাবস্যা দীপান্বিতা অমাবস্যা। কারণ যাহাই হোক, সকল ভাষ্যগুলিই অন্ধকারকে দূরীভূত করে আলোর কথা বলে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy