ছবি: সংগৃহীত
আজ জানা যাক এক ব্যতিক্রমী দুর্গাপুজোর গল্প। এমনধারা পুজো বঙ্গদেশে কেবল দু’টি হয়। দুর্গা এখানে মহিষাসুরমর্দিনী নন। বরং অধিষ্ঠান করছেন দশানন রাবণের কাঁধে! পাতাল ভৈরবী মা স্বয়ং দুর্গা রূপে এখানে পূজা পান। ফিরে দেখা যাক তার সূচনার কাহিনি।
ঘরে কান্নার রোল পড়েছে। ঘাটকাজের আয়োজন সারছেন ব্রাহ্মণ। পিছনে তিওর ( জেলে) সাগর সর্দারের ছেলেরা মুণ্ডিত মস্তকে বসে। তিন দিন আগে বল্লুকার দহে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তিত্তর সর্দার। একেবারে নদীর মাঝখানে, সামান্য স্থলরেখা পরিবেষ্টিত হয়ে বল্লুকা দহ। দারুণ স্রোত এবং স্বাভাবিক নির্জনতা ঘিরে তার দারুণ বদনাম। তবুও অকুতোভয় সাগর শোনেননি। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছিল। তিনি আর ফিরে আসেননি। দহে জাল দিয়েও দেহ পাওয়া যায়নি। তাই অপঘাত মৃত্যু ধরে নিয়ে তিন দিনে শ্রাদ্ধের কাজ সারা হচ্ছিল।
ছেলেরা আঙুলে কুশাঙ্গুরীয় পরতে যাবেন, এমন সময়ে পুকুরের পাড় ধরে হেঁটে আসতে দেখা যায় কাউকে! সমবেত জনগণ কান্না থামিয়ে উৎসুক। হাঁটার ছন্দ যেন বড় পরিচিত! খানিকটা সাগর সর্দারের মতোই।
বিশাল পুকুর। নিস্পন্দ বক্ষে সবাই অপেক্ষা করে থাকে। ক্রমে আগন্তুকের দূরত্ব কমে আসতে থাকে। স্পষ্ট হয় মুখ। হইহই পড়ে যায় ঘাটকাজের প্রাঙ্গণে। যাঁর শ্রাদ্ধ হচ্ছে, সেই সাগর সর্দার যে নিজে এসে উপস্থিত হয়েছেন! সাগরের পত্নী ও ছেলেরা কেঁদে ভাসায়। খানিক সুস্থ হয়ে সাগর সর্দার শোনান তাঁর কাহিনি।
তিনি জলে ডুবেই গিয়েছিলেন। সেখানেই পাতালে অনিন্দ্যসুন্দরী এক নারীর দেখা পান। সেই নারী আর কেউ নন, সাক্ষাৎ মা মহামায়া। তিনি সাগরকে দর্শন দিয়ে বলেন, পার্শ্ববর্তী বেতলন গ্রাম থেকে মায়ের প্রতিমা কাঠামো তুলে এনে তাতে মাটি দিয়ে অবয়ব গড়ে পূজা করতে। তার পরে কী ঘটেছিল, সাগর আর জানেন না। জ্ঞান ফেরার পরে ঘরে না ফিরে তাই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন মায়ের সেই কাঠামো তুলে আনতে।
এ দিকে বাধল আর এক বিপত্তি! মায়ের মূর্তি গড়া হয়েছে। কিন্তু যত বারই মহিষাসুরের গায়ে মাটি দেওয়া হয়, তত বার সে মাটি খসে পড়ে। মহিষাসুরের কাঠামোয় আর মাটি ধরে না! কিন্তু কাঠামোর পরিবর্তন করা যাবে না। বারবার প্রায় দশ বার চেষ্টাতেও সাগর ব্যর্থ।
তিনি আবার আকুল হয়ে পড়েন। ফের মায়ের নির্দেশ পান, যে পুকুর পাড় থেকে তিনি মাটি তুলে নিয়ে আসছেন, সেখানেই আর একটি বার যাওয়ার। সে রাতেই সাগর দর্শন পেলেন অপরূপা এবং আশ্চর্য সেই মাতৃমূর্তির। মা দশানন এক অসুরের স্কন্ধে উপবিষ্টা! মা-ই সাগরের ভুল ভাঙান। এই দশানন অসুর নন, স্বয়ং রাবণ!
সে এক অপূর্ব গাথা। রাবণ শিবের ভক্ত হলেও মা দুর্গাকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পূজা করতেন। স্বয়ং পাতাল ভৈরবী যোগাদ্যা (মা আজও জলেই থাকেন) ছিলেন রাবণপুত্রের আরাধ্যা দেবী। মায়ের আশীর্বাদে রাবণ প্রায় অবধ্য ছিলেন। তাই তো শ্রীরামচন্দ্রকে অকাল বোধন করে মাকে সন্তুষ্ট করতে হয়েছিল।
পুকুর থেকে তুলে আনা মাটি দিয়ে কাঠামোয় সাগর গড়ে তুললেন রাবণের দশানন মূর্তি। রাবণের কাঁধে উপবিষ্ট হয়ে মা পূজা নিলেন। এই প্রতিমায় গণেশ বা কার্তিক ঠাকুর নেই। দুর্গার সন্তান বলতে কেবল লক্ষ্মী এবং সরস্বতী। আজ প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে ইন্দাস গ্রামের এই পুজো প্রচলিত। এমন অদ্ভুত দুর্গাপুজোর কথা বঙ্গদেশে আর শোনা যায়নি।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy