Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Tarapeeth Temple myths

তারাপীঠ! সে কাল থেকে এ কালে বহমান লক্ষ কাহিনির স্রোতে এ বারের আরাধনা

তারাপীঠ। গল্প শুনুন আদি কাল থেকে এ কালের। সঙ্গে এ বারে মা তারার অর্চনার আগাম বার্তা।

তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৫৬
Share: Save:

আশ্বিনের শুক্ল পক্ষ অন্তিম লগ্নে এসে পৌঁছে গিয়েছে। টোল পড়া গোল থালার মতো চাঁদ মাথার উপরে উঠে সাদা আলোয় ভাসিয়ে দিচ্ছে চরাচর। কুলুকুলু শব্দে বর্ষা শেষে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত দ্বারকা ভীম গতিতে বয়ে চলেছে জঙ্গলাকীর্ণ মহাশ্মশানের বুক চিরে। আর তার ঠিক পাশটিতে শিমূল বৃক্ষ তলে সে এক অপূর্ব দৃশ্য!

এক বৃদ্ধ অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছেন মায়ের পা দু'খানি ধরে। আপনার অশ্রুধারায় তিনি ধৌত করেছেন তাঁর মায়ের পদযুগল। তার ঠিক পশ্চাতে সার সার অগ্নিবলয়। স্থির। নিস্পন্দ।

মা এসেছেন, তাই দেখা করতে এসেছেন তাঁর সন্তানসম শিবাকুল ও সারমেয়দল। কম্পিতসরে সে বৃদ্ধ মা’কে বললেন, ”মা তোমারে আমি তো দেখলাম। কিন্তু এই ভীষণ তেজ জগত সহ্য করতে পারবে না। তুমি পাথরে তোমার শক্তি অংশ স্থিত করো। এই শক্তিকে পূজা করে, আপদকালে নিজেদের রক্ষা করুক তাবড় জীবকুল।

মা বললেন, ”তথাস্তু”। ভীষণ আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল সেই প্রান্তর, যেন লক্ষ লক্ষ পূর্ণচন্দ্র এসে স্থিত হয়েছেন ওই স্থানে। তাদের আলো সঁপে গেল মায়ের পদতলের শিলাখণ্ডে! আলো আবার নিভে আসে, দ্বারকার প্রতিটি ধূলিকণার বুকে লেখা হয়ে যায় মাতৃনাম।

বহুকাল পর আরেক আশ্বিন শুক্লের চতুর্দশী। এক বণিক, নাম জয় দত্ত। তিনি ফিরে আসছেন নিজ গৃহে। তাঁর পুত্রের দেহবসান হয়েছে। তার নিথর দেহ তাঁর সঙ্গী।

বিষণ্ণ, বিমূঢ় বৃদ্ধ পিতা কেঁদে ভাসিয়েছেন সারা রাত। তাঁর এক মাত্র সন্তান পথিমধ্যে নৌকায় প্রাণ হারিয়েছেন।

দ্বারকা দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় নৌকা নোঙর করলেন জয় দত্ত। রাত হতে তাঁর মাঝি মাল্লারা কিছুই ভোজন করেনি। পেটের ক্ষুধা বড় ক্ষুধা। তাঁরা রাঁধতে বসলেন। সঙ্গে কয়েকটি শোল মাছ ধরা ছিল। মাছগুলি তাঁরা মেরেছিলেন, রান্না করার জন্য। কিন্তু এ অবস্থায় মাছ খাওয়া যায় না।

মাছগুলি পাশের একটি দহতে ফেলে দিতে গেলেন এক মাল্লা। অবাক কাণ্ড! মাছ গুলি জলে ফেলে দিতেই তারা জীবিত হয়ে ভেসে গেল!

জয় দত্ত বুঝলেন, এটা তাঁর আরাধ্যারই ইঙ্গিত। তিনি তাঁকে সারারাত আকুল হয়ে ডেকেছেন। সঙ্গে সঙ্গে নিজের ছেলের মৃতদেহ সেই দহের জলে স্নান করালেন। প্রাণ ফিরে পেল ছেলে।

রাতে স্বপ্ন দিলেন সর্প বেষ্টিতা, নীল পদ্ম শোভিতা, ত্রিনয়নী মা। শ্মশান মধ্যস্থিত শ্বেত শিমূল বৃক্ষতল হতে বণিক তুলে আনলেন মাতৃমূর্তি।

বহু যুগ আগে, এই তিথিতেই খোদ বশিষ্ঠ দেব আপন হস্তে জাগিয়ে ছিলেন মা'কে, তার পর কেটে গেছে বহুযুগ। আবার মা এলেন প্রকাশ্যে। প্রতিষ্ঠা হল তারাপীঠ। আর সেই দহ হল, জীবৎ কুণ্ড।

এর পর বহু যুগ পেরিয়েছে, মায়ের ডাকে মল্লার পুরের জমিদার এসেছেন। তার পর এসেছেন এক দীর্ঘদেহী যুগপুরুষ। মা'য়ের পাগল ছেলে, এই মহাশ্মশানের বুকে শ্বেত শিমূলের তলে যিনি খুঁজে পেয়েছিলেন গুরু বশিষ্ঠের পঞ্চমুণ্ডির আসন।

মা ছেলের ডাকে দেখা দিলেন, সে সন্তান হলেন বামাক্ষ্যাপা। হ্যাঁ, এতক্ষণ পরম সতীপীঠ তারাপীঠের কথাই বলছি, সর্প বেষ্টিতা, নীল পদ্ম শোভিতা, ত্রিনয়নী মা।

দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয় রূপা, শিব স্তন্য দায়িনী মা তারা এখানে অধিষ্ঠিতা৷ ভাষ্য মতে, মায়ের চোখের মণি বা তারা পড়েছিল এই পীঠে। তাই তারাপীঠ। এখানে দ্বিতীয়া মা তারা অধিষ্ঠাত্রী। মায়ের ডাকে রোজ ছুটে আসে অগণিত ভক্ত। মা তাদের কথা শোনেন।

তারাপীঠ কথা

মা এখানে উত্তরমুখী। শিলা স্থাপিতা। তবে, গুহ্যরূপিনী। সাধারণে পূজা দেন মূর্তিতে। নিত্য দিন শীতল ভোগ, মহাভোগ, রাত্রীকালীন ভোগে মায়ের পূজা চড়ে। বিশেষ বিশেষ তিথিতে হয় বিশেষ পূজা।

কার্তিক অমাবস্যা

অমাবস্যার দিনে মা'কে দক্ষিণা কালী রূপে ও ধ্যানে পূজা করা হয়। মায়ের মহাভোগের সাথে, সেবাইতদের হাত ধরে যজমানরা চড়ান দুপুরের ভোগ। পোলাও, মৎস অত্যাবশ্যক। নাম ও গোত্র ধরে পূজা হয়। এছাড়াও হয়, বিভিন্ন তান্ত্রিক কার্য। তবে তা মন্দিরে নয়, শ্মশান এবং বর্ধিত মন্দির চত্বরের বাইরে।

সেবাইত শ্যামাচরণ চক্রবর্তীর কথায়, আসল হোম-যজ্ঞটি হয় অমাবস্যার আগের দিন, ভূতচতুর্দশীতে। কথিত, এই দিন যজ্ঞ ও বিধি দ্বারা শত্রু নাশ হয়। এই দিন, সেবাইত ও সাধকরা রাত্রে গর্ভগৃহে মাতৃমূর্তি দর্শন করেন। অদ্যাবধি এই দিন, শ্মশান শূন্য যায়নি। মৃতদেহ এসেছেই।

তিথি

পরশু রাত পোহালেই অমাবস্যা। অমাবস্যা তিথি ১২ নভেম্বর ২ টো ৪৪ মিনিটে শুরু হচ্ছে এবং ১৩ নভেম্বর ২ টো ৫৬ মিনিটে শেষ হচ্ছে।

পুজোর প্রদোষ কাল

বিকেল ৫ টা ২৯ মিনিট থেকে সন্ধে ৮ টা ০৮ মিনিট পর্যন্ত। বৃষভকাল ৫ টা ৩৯ মিনিট থেকে ৭ টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত।

অমৃত যোগ

দিনে ঘ ৬।৫০ গতে ৮।৫৭ মধ্যে, ১১।৪৮ গতে ২।৩৯ মধ্যে

রাতে ঘ ৭।২৭ গতে ৯।১৪ মধ্যে, ১১।৫৩ গতে ১।৪০ মধ্যে

২।৩৩ গতে ৫।৫৩ মধ্যে

দর্শন করে আসতে পারেন মাকে। সঙ্গে দেখে নিতে পারেন, বামাক্ষ্যাপা ঠাকুরের পঞ্চমুণ্ডি আসন, দ্বারকা শ্মশান এবং বামাক্ষ্যাপা ঠাকুরের বসত বাটি।

ঋণ: শ্যামাচরণ চক্রবর্তী ও বিবিধ প্রবন্ধ।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy