Know the significance of different forms of goddess kali dgtl
Kali Puja Myths and Facts
মা কালী কেন চতুর্ভুজা, কেন তিনি কৃষ্ণবর্ণা? মায়ের এমন রূপকল্পের ব্যাখ্যা শুনুন
কালী মায়ের রূপকল্প গভীর অর্থবহ! কেন তিনি চতুর্ভুজা, কেনই বা তিনি কৃষ্ণবর্ণা? এমনই তাঁর রূপের ব্যাখ্যা এই প্রতিবেদনে।
তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
মা শ্মশানবাসিনী অর্থাৎ যে স্থানে মানুষের সমস্ত অহংকার জাগতিক, চাওয়া- পাওয়া সমস্ত কিছুর নাশ হয়। মানুষের স্থুলদেহের বিনাশ হয় সেখানেই তিনি অধিষ্ঠাত্রী স্বরূপ অবস্থান করেন। মায়ের রূপকল্প গভীর অর্থবহ
০২১৮
চতুর্ভুজা: মা হলেন চতুর্ভুজা। চতুর্দিক জুড়ে তার ব্যপ্তি। সর্বত্রই তিনি বিরাজমানা। মাতা চতুর্বর্গ ফলপ্রদায়িনী এবং এই চতুর্বর্গফলকে নির্দিষ্ট করছে তাঁর চার হাত। অর্থাৎ, তাঁর চার হস্ত যথাক্রমে ধর্ম, কাম, অর্থ ও মোক্ষকে দর্শায়।
০৩১৮
০৪১৮
ধর্মের অর্থ একজন মানুষের অবশ্য পালনীয় সামাজিক কর্তব্য। যেমন, আর্তের সেবা, দীনের সাহায্য, নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইত্যাদি।
০৫১৮
কামের অর্থ হল ইচ্ছা। এখানে কামনাকেই কাম হিসেবে বোঝানো হয়েছে। মানুষের কামনা থাকবে, তার নিজের উত্তরোত্তর উন্নয়ন। নিজের অন্তঃশ্রীর বৃদ্ধির ইচ্ছা জাগরুক করাকেই এখানে কাম বলে অভিহিত করা হয়েছে।
০৬১৮
অর্থ হল জীবনের লক্ষ। বেঁচে থাকার লক্ষ কী? শুধুই যাপন? কেন মানুষ এই সমাজে আসেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে তিনি বেঁচে থাকেন? সেই লক্ষ্যকে বুঝতে পারা এবং তাকে উপলব্ধির মরমে ধারণ করা হলো অর্থ।
০৭১৮
মোক্ষ হল মুক্তি। নিজের লোভ হতে মুক্তি অর্থাৎ আত্মত্যাগ ও আত্মোপলব্ধি হলো মোক্ষ।
০৮১৮
কৃষ্ণ বর্ণা: কালকে কলন করছেন বা কালের উপলব্ধি, তাই তিনি কালী (কাল+ঈ)। ঘটমান সমস্ত সময় বা কাল তাতেই গিয়ে মিশেছে। কৃষ্ণবর্ণে সমস্ত রং মেশে বা কৃষ্ণবর্ণ সমস্ত রংকে শোষন করে, তাই কালী হলেন কৃষ্ণবর্ণা। একই সঙ্গে, এই কারণেই মা করাল বদনা এবং ভীষণা। মা সমস্ত কিছুকে গ্রাস করছেন। এই গ্রাস কথার অর্থ হল, এখানে ভক্তের নিবেদন, ভক্তি গ্রহন ও তাঁর রিপু(তমোগুণ) গ্রাসপূর্বক, সত্ত্ব-তমো-রজঃ এই ত্রিগুণের সাম্যতা প্রদান করছেন।
০৯১৮
উন্মুক্ত কেশদাম: উন্মুক্ত কেশদাম মায়ের মায়ার প্রতীক। ভীষণ কালো কেশ মায়া জালে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। মায়ের পশ্চাতে কেশরাশি দ্বারা সবই অবরুদ্ধ অর্থাৎ তিনিই শুরু তিনিই শেষ। তাঁকে অতিক্রম করে কেউ পশ্চাতে যেতে পারে না। এই কেশরূপ মায়াতে ভ্রমিত হয়। "সৃষ্টিস্থিতি বিনাশাং শক্তিভূতে সনাতনী...."
১০১৮
মুণ্ডমালা: মায়ের গলায় পঞ্চাশটি মুন্ডের মালা আদতে বর্ণমালা (স্বর বর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ)। বাকের অধিশ্বরী তিনি। মন্ত্রও তাঁর, কু-কথাও তাঁর, প্রশংসাও তাঁর— জগতের সমস্ত চলা এবং বলা কিছুই তাঁর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর হস্ত ধৃত ওই একটি মুণ্ড হল আদিধ্বনি, মহাপ্রণব উচ্চারণ— ওমকার। ওমকার ধ্বনি তাঁরই হস্তধৃত।
১১১৮
খড়্গ: খড়গ দ্বারা তিনি তাঁর শরণাগতের যাবতীয় অজ্ঞান অন্ধকার নাশ করছেন। খড়্গে অঙ্কিত চোখ সাধককে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করছে অর্থাৎ তাকে চক্ষুষ্মান করছে।
খড়গে আঁকা চক্ষু
১২১৮
হস্ত মেখলা: মায়ের কোমরে কর্তিত হস্তের মেখলা ( কোমর বন্ধনী)। হস্ত হল কর্মের স্বরূপ। হস্ত দ্বারাই কর্ম হয়। অর্থাৎ মা কর্মের ধাত্রী এবং ফল প্রদাত্রী।
১৩১৮
কর্ণ কুণ্ডল: কর্ণ কুণ্ডলে শিশু শব! আপাতদৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর! কিন্তু আদতে এর অর্থ হল, মা শিশুস্বভাব সাধককে পছন্দ করেন। যিনি শিশুর ন্যায় নির্বিকার, নিষ্কাম ও সরল, মা তাঁকে আপন কর্ণের কুণ্ডল করে রাখেন।
মায়ের কানে শিশুর শব
১৪১৮
রক্ত: মায়ের সর্বাঙ্গে রক্ত। মায়ের দেহ রক্ত লিপ্ত। তাঁর ওষ্ঠ এবং অধরে রক্ত। এর অর্থ হলো মা প্রতিনিয়ত প্রলয় এবং সৃজন করে চলেছেন। এই রক্ত রজঃগুণের দ্বারা ক্রিয়াশীল জগতের প্রতীক। ঋতুচক্রের প্রতীক। ঋতুচক্রের রক্ত আসলে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশুশয্যার লয় এবং ভবিষ্যৎ শিশুশয্যা গঠনের নিদর্শ। চিরন্তন মাতৃত্বের ছবি।
১৫১৮
মহারব: মায়ের মহারব বা হুংকার হল অবধ্য ধ্বনি। যে ধ্বনির অবাধ্য হওয়া যায় না।
১৬১৮
বহির্গত জিহ্বা ও দন্ত: দেবী রক্তবর্ণের জিহ্বাকে শ্বেতদন্তে সংযত করে রয়েছেন। লাল রঙ রজঃগুণের প্রতীক, সাদা রঙ সত্ত্বগুণের প্রতীক। সাদা দাঁত দিয়ে লাল জিহ্বাকে চেপে রাখার অর্থ সত্ত্বগুণ দ্বারা রজঃগুণকে বশীভূত করে রাখা। বাকের নিয়ন্ত্রণ করা, কু প্রবেশের দ্বার রূদ্ধ করা। দাঁত হল কপাট।
১৭১৮
ত্রিনয়ন: দেবীর তিন চোখ তিনটি আলো বা জ্ঞানের প্রতীক— চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি। অর্থাৎ আলোকের প্রতীক। তিন চোখে দেবী অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে অর্থাৎ সৃষ্টি - স্থিতি - লয় যুগপৎ প্রত্যক্ষ করেন।
১৮১৮
পদযুগল: মা এক পা শবরূপ শিবের উপরে রেখে, অপর পা এগিয়ে রেখেছেন অর্থাৎ মা এক পা অতীতে আর এক পা ভবিষ্যতে সমস্ত কাল তাঁর গ্রাসে। মায়ের দু’টি রূপকল্প হয়, ডান পদ অগ্রে অথবা বাম পদ অগ্রে— আলীঢ় ও প্রত্যালীঢ়। সব কিছুই তিনি। সব কিছুই তাঁর। তাই কালীতত্ত্বেই সকল তত্ত্ব এসে মেশে। তথ্যসূত্র: কালীকা পুরান, মাতৃরূপা কালী (ভগিনী নিবেদিতা), বিবিধ প্রবন্ধ। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।