কৃষ্ণের শতনামের মতো অতটা না হোক, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উৎসবেরও কিন্তু অনেক নাম!
বাঙালির ঘরে ঘরে ভাই-বোনদের ভিতর এই মিষ্টি-মধুর মঙ্গলময় উৎসব, যার নাম ভাইফোঁটা, সেটিকেই মহারাষ্ট্র, গুজরাতের মতো পশ্চিম ভারতে বলা হয় ভাইদুজ।
আবার কর্ণাটক, গোয়ায় ভাইফোঁটাকে বলে ভাইবিজ।
আমাদের উত্তরবঙ্গেই ভাইফোঁটাকে বলে ভাইটিকা।
দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে অবশ্য বিজয়া দশমীর পরেই ভাইটিকা উৎসব পালিত হয়ে থাকে
পড়শি দেশ নেপালেও আছে ভাইটিকা উৎসব।
দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের মতোই ওদেরও ভাইটিকা পালিত হয় বিজয়ার দশমীর পরেই।
ভাইফোঁটা বাঙালিদের চিরকালীন সম্প্রীতির উত্সব।
হিন্দুদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই উত্সবটি ভ্রাতৃদ্বিতীয়া নামেও অতীব পরিচিত।
কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে, কালীপুজোর পরের পরের দিন এই বিশেষ পারিবারিক উৎসবটি পালিত হয়।
ভাইফোঁটা নিয়ে নানান পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে।
কথিত, সূর্য ও তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞার ছিল যমুনা নামে এক কন্যা ও যম নামে এক পুত্র।
পুত্র ও কন্যা সন্তানের জন্মদানের পর সূর্যের উত্তাপ স্ত্রী সহ্য করতে না পেরে প্রতিলিপি ছায়ার কাছে রেখে চলে যান।
সংজ্ঞার প্রতিরূপ হওয়ায় কেউ ছায়াকে চিনতে পারে না। ছায়ার কাছে ওই দুই সন্তান কখনও মায়ের মমতা, ভালবাসা পায়নি। দিনের পর দিন ধরে অত্যাচার করতে থাকে।
অন্য দিকে, সংজ্ঞার প্রতিলিপি ছায়াকে বুঝতে না পেরে সূর্যদেবও কোনও দিন কিছু বলেননি।
ছায়ার ছলে স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হন যমুনা। এক সময় যমুনার বিয়েও হয়। বিয়ে হয়ে যমের থেকে অনেক দূরে সংসার করতেন যমুনা।
দীর্ঘ কাল ধরে দিদিকে দেখতে না পেয়ে মন কাঁদে যমের।
মন শান্ত করতে এক দিন দিদির বাড়ি চলে যান যমরাজ। প্রিয় ভাইয়ের আগমনে হাসি ফোটে দিদির মুখেও।
দিদির আতিথেয়তা ও স্নেহে মুগ্ধ হয়ে ফেরত যাওয়ার সময় যম একটি বর চাইতে বলেন যমুনাকে।
তখন যমুনা বলেছিলেন, এই দিনটি ভাইদের মঙ্গল কামনা চেয়ে প্রত্যেক বোন যেন ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হিসেবে পালন করে। সেই বর দান করে যম পিতৃগৃহে চলে যান।
যমের মঙ্গল কামনায় এ দিনটি পালন করায় যমরাজ অমরত্ব লাভ করেন।
এ কাহিনি থেকেই নাকি প্রতি বছরে কার্তিক মাসের এই বিশেষ তিথিতে পালন করা হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া।
আরও একটি পৌরাণিক কাহিনিতে বলা হয়, এক সময় বালির হাতে পাতালে বন্দি ছিলেন বিষ্ণু।
সে কারণে চরম বিপদের মুখে পড়লেন স্বর্গের সব দেবতারা।
কোনও ভাবেই যখন বিষ্ণুকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না, তখন লক্ষ্মীর উপর সকলে ভরসা করতে শুরু করেন।
নারায়ণকে উদ্ধার করার জন্য লক্ষ্মী ভাই পাতিয়ে ফেলেন বালিকে। তাঁকে ফোঁটাও দেন লক্ষ্মী।
সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথি।
ফোঁটা পেয়ে লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী তখন বিষ্ণু তথা নারায়ণের মুক্তি চেয়ে নেন।
ভাইফোঁটা নিয়ে কৃষ্ণ ও সুভদ্রার পৌরাণিক কাহিনিও শোনা যায়।
কথিত, ধনত্রয়োদশীর পরের দিন চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেন কৃষ্ণ। তার পর দ্বারকায় ফিরে এলে বোন সুভদ্রার আনন্দের সীমা থাকে না।
কৃষ্ণের আদরের বোন সুভদ্রা। কৃষ্ণকে অনেক দিন পর দেখতে পেয়ে তাঁর কপালে বিজয় তিলক পরিয়ে দেন। কপালে ফোঁটা দিয়ে দাদাকে মিষ্টিও খেতে দেন।
সেই থেকে নাকি ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা উত্সব পালন করা হয়।
চতুর্থ একটি কাহিনিও আছে। চতুর্দশ শতাব্দীর পুথি অনুসারে, জৈন ধর্মের অন্যতম প্রচারক মহাবীর বর্ধমানের মহাপ্রয়াণের পরে তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন।
সে সময় তাঁর বোন অনসূয়া নিজের বাড়িতে নন্দীবর্ধনকে নিয়ে যান কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে।
সেখানে অনেক প্রার্থনার পরে নন্দীবর্ধন বোনের হাতে খেয়ে নিজের অনশন ভঙ্গ করেন।
এই কাহিনি সত্য হলে ভাইফোঁটা উৎসবের বয়স আড়াই হাজার বছরেরও বেশি।
কারণ, মহাবীরের প্রয়াণ ঘটেছিল ৫২৭ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy