স্টাডি টেবিল বা পড়াশনার ডেস্ক। ডেস্ক, তার সঙ্গে বসার চেয়ার। চেহারা প্রধানত এমনটাই। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এমন ডেস্ক ব্যবহারের চল শুরু হয়, যেখানে বসে লেখালেখির কাজ করতেন লেখক। সে সময়ে ডেস্কগুলো ওজনে ভারী এবং জমকালো কাঠের কাজে সাজানো থাকত। শুধু কাঠের কাজই নয়, সোনা-রুপো বা অন্য দামি ধাতুর তবক কিংবা জলে ডেস্কের বাইরের আবরণ ঢাকা থাকত। আজ থেকে কয়েকশো বছরের আগের আসবাবপত্রে দেখা যায়, বহু ক্ষেত্রেই গোল্ডেন বা সিলভার লিফ দিয়ে ঢাকা থাকত আসবাব। সে সময়ের ডেস্কগুলোও মূলত তা-ই ছিল।
শুধু তাই নয়, ডেস্কগুলো প্রধানত চেস্ট অফ ড্রয়ারের মতো ব্যবহার করা হত। যেটাকে আমরা কনসোল বলি, প্রবেশ দরজার পাশে একটা উঁচু ডেস্কের মতো, যেখানে ড্রয়ার রয়েছে, সঙ্গে একটা আয়নাও থাকে, সেই কনসোলের ভাবনার অনেকটাই ডেস্কের সঙ্গে মেলে। সতেরো কিম্বা আঠেরো শতকে ডেস্ক স্টাডি টেবিলে পরিণত হতে থাকে। ডেস্কের সঙ্গে বসার চেয়ার যোগ করা হয়। আসবাব যেন নিজের চরিত্র খুঁজে পায়।
স্টাডি টেবিল মূলত পড়াশোনার ডেস্ক। আসবাবের ডিজাইনও অন্য ধারার। মধ্য যুগের ইউরোপে, মূলত ফ্রান্সে এবং ইংল্যান্ডে ডেস্কের প্রচলন শুরু হয়। গথিক শিল্পরীতি এবং পরবর্তীতে ভিক্টোরিয়ান স্টাইল, শিল্পকলার পার্থক্যে তফাত হলেও বেসিক স্ট্রাকচার বা ভাবনায় বদল হয়নি। বহুদিন ধরেই স্টাডি টেবিল বা ডেস্ক একাকী নিভৃতে লেখাপড়া কিংবা এ ধরনের অন্য কোনও কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: সোফা, চেসেস নাকি অটোমান, আপনার পছন্দের ‘কুর্সি’ কোনটা?
আলাদা স্টাডি রুম থাকলে স্টাডি টেবিলের মাধুর্য ও কদর দুই-ই বাড়ে।
এখনকার আধুনিক স্টাডি টেবিল চেহারা পাল্টেছে প্রয়োজনের খাতিরে। ডিজাইনও তাই বিভিন্ন ধরনের হয়। স্টাডি টেবিলের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপার ক্যাবিনেট থাকে- যাতে বইখাতা বা প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা যেতে পারে। স্টাডি টেবিলের নীচের অংশে একদিকে ড্রয়ারের সারি থাকতে পারে। ডেস্কটপ কম্পিউটার হলে ইউপিএস বসানোর জন্যে যে জায়গা লাগে, স্টাডি টেবিলের একধারে তার ব্যবস্থা করা হয়। ল্যাপটপ হলে অসুবিধে নেই। টেবিলেই বসিয়ে নেওয়া যায়। যদিও সেক্ষেত্রে প্রিন্টার থাকলে আলাদা প্লাগ পয়েন্ট দরকার।
আলাদা স্টাডি রুম থাকলে স্টাডি টেবিলের মাধুর্য ও কদর দুই-ই বাড়ে। অনেকটা জায়গা নিয়ে সুন্দর করে বানিয়ে নেওয়া যায়। তবে আজকাল ছোট ফ্ল্যাট বা বাড়িতে জায়গা কম। ফলে অনেক ক্ষেত্রে স্টাডি রুম বা আলাদা করে স্টাডি টেবিল রাখার মতো সুযোগ থাকে না।
আরও পড়ুন: কর্নার, রিডিং, ডাইনিং, ড্রেসিং, কোন টেবিলের সাজ কেমন
অগত্যা নিজস্ব স্টাডি রুম, গেস্ট রুম, ড্রইং বা বেডরুম- যে কোনওঘরে প্রয়োজনীয় জায়গাটুকু নিয়ে স্টাডি টেবিল রাখা যেতে পারে। স্টাডি টেবিলের অনুষঙ্গ হিসেবে আপার ক্যাবিনেট, সাইড ক্যাবিনেট, লোয়ার ক্যাবিনেট, কিংবা একটা চেয়ার রাখার যথেষ্ট জায়গা- এই অনুযায়ী স্পেসের দরকার পরে। স্টাডি টেবিলে আলোর ব্যবস্থা আবশ্যিক। ক্যাবিনেটের তলা দিয়ে আলো আসতে পারে টেবিলের উপর। সেক্ষেত্রে ক্যাবিনেটের নীচে এলইডি দু’ফুটের টিউব লাগানো যেতে পারে। বাইরের ক্যাবিনেটের পাল্লায় আড়ালে দেখা যাবে না আলোর উৎস। কিন্তু আলোয় আলোকিত হবে আপনার পড়ার টেবিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy