অন্দরসজ্জায় আরামকেদারা বা ইজিচেয়ার আজকের নয়, অনেক দিন আগে থেকেই প্রচলিত এর ব্যবহার। আসবাবপত্রের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ইউরোপে বহু আগে থেকেই আরামকেদারার প্রচলন ছিল। মোটামুটি ভাবে সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে এ ধরনের চেয়ারের শুরু হয়। যদিও ইজিচেয়ারের অনেকগুলো ভাগ আছে, যেমন ‘ক্লাব চেয়ার্স’, ‘উইং ব্যাক’, ‘রিক্লাইনার চেয়ার্স’ ইত্যাদি।
ক্লাব চেয়ার জনপ্রিয় হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যদিও ফ্রান্সে তার আবির্ভাব হয়েছিল অনেক আগে। ১৯২০ সালের আশেপাশে ফ্রান্সে ভিজুয়াল আর্টস, সৃজনশীল স্থাপত্য বা আর্কিটেকচার, অন্দরসাজ প্রভৃতি ডিজাইনে বিপ্লব আসে। ‘আর্ট ডেকো এরা’ বলা হয় এই বিষয়টিকে। ‘ক্লাব চেয়ার’-এর উৎপত্তি প্রধানত সে সময়ে।
‘রিক্লাইনার চেয়ার’ ফ্রান্সেই ১৮৫০ নাগাদ এসেছিল। যদিও তখন সেটা নানা বিষয়ে কাজে লাগত। তৃতীয় নেপোলিয়ন প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রথম ‘রিক্লাইনার চেয়ার’-এর মালিক ছিলেন। এ রকম নানা ইতিহাস রয়েছে। আসলে আরামকেদারার ইতিহাস চেয়ারের মতই আকর্ষণীয়। যেমন বাড়িতে, এক কোণে একটা আরামকেদারা ভাল লাগার মাত্রাটাই বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: ঘর হয়ে উঠুক মোহময়ী, আলোর উৎস আড়াল করবেন কী ভাবে
শোওয়ার ঘরে জানলার পাশে, যেখান থেকে খুব সুন্দর বাইরের ভিউ দেখা যায়, এবং জানলা যদি বড় স্লাইডিং হয়, সেখানে বসে আরাম করে দিনের অনেকটা সময় কাটানো খুবই আকর্ষণীয়।
বাড়ির প্রবীণ মানুষরাও খুব আরাম পান ইজিচেয়ারে বসতে, তবে কোমরের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভাল। দক্ষিণের বারান্দায় আশাপূর্ণা দেবীর সুবর্ণলতার বসার ইচ্ছে আমরা সকলেই জানি। আচ্ছা সেখানে একটা আরামকেদারা থাকলে? দক্ষিণের বারান্দা আর আরামকেদারা, এ যে একেবারে রাজযোটক।
‘রকিং চেয়ার’ও এই আরামকেদারা বা ইজিচেয়ারের আধুনিক নমুনা।
আরামকেদারায় বসে বই পড়া অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। প্রিয় উপন্যাসে চোখ বোলাতে গিয়ে আরামের একটা দিবানিদ্রা, অনেক মানুষের নিত্যদিনের রুটিন। ঘরে বইয়ের তাক বা গ্রন্থাগার থাকলে পাশে আরামকেদারায় রাখা গেলে খুব ভাল হয়।
যেখানেই আরামকেদারা রাখবেন, পাশে স্ট্যান্ড লাইট রাখার চেষ্টা করবেন। স্ট্যান্ড লাইট অবশ্যই ডাউন লাইট হতে হবে। এর ফলে ইজিচেয়ারে বসে বই পড়লে কিংবা কোনও কাজ করলে তার উপরে আলো পড়ে। আজকাল যেমন নানা আরামকেদারা বেরিয়েছে। ‘রকিং চেয়ার’ও এই আরামকেদারা বা ইজিচেয়ারের আধুনিক নমুনা।
আরও পড়ুন: টব হোক বা ফুলদানি, ‘ফ্লাওয়ারি ডেকর’-এ ঝলমলে ঘর
আসলে আরামকেদারা শুধু মাত্র একটা আসবাব নয়। এর সঙ্গে অনেক আবেগ জড়িয়ে থাকে। কারও বাড়িতে বহু বছর ধরে সেগুন বা মেহগনি কাঠের আরামকেদারা রয়েছে। সেখানে বোধ হয় কারও বাবা, মা, কারও ঠাকুরদা বসতেন আরাম করে। বহু দিন চলে গিয়েছে। বাড়ি ভেঙে কারও আবাসন হয়েছে, কিংবা বাড়ি বদলেছেন অনেকে। স্মৃতি আগলে রেখেছেন নিজের মতো করে। অনেক কিছু ছেড়ে দিলেও মার্বেলের ডাইনিং টেবিল বা মেহগনি কাঠের ভিক্টোরিয়ান ড্রেসিং-টেবিল বা ইজিচেয়ারের মায়া কাটাতে পারেননি। আজও অত্যাধুনিক বাড়ির সুন্দর একটা জায়গায় পুরনো কিংবা নতুন নকশার ইজিচেয়ার দেখলেই মনটা নস্টালজিক হয়ে ওঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy