পুজো এসে পড়ল। এই সময়টায় মনের মধ্যে একটা খুশির বাতাস বয়। নিজেদের এবং নিজের চারপাশকে সাজিয়ে তুলতে মন চায়। বাড়ি তো শুধু ইট-কাঠ-পাথরের অবয়ব নয়, বাড়ি একটা আবেগ। মনের শান্তি, প্রাণের আরাম। যাঁরা অগোছালো, তাঁরাও এই সময়ে ঘরবাড়ি একটু সাফ করতে চান। এ বার কোভিডের কারণে আমরা সবাই কিছুটা বিষাদগ্রস্ত। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরনো প্রায় বন্ধ। ঘরের অন্দরেই খুঁজে নিচ্ছি নিজের শরীর-মন ভাল রাখার রসদ। অন্দরমহলের সঙ্গে অন্তরমহলের যোগাযোগ তাই এখন আরও নিবিড়।
শারদোৎসবের শুরুতে ঘরের চেহারা খানিক ফেরাতে পারলে মনের মধ্যে জমা গুমোটও কেটে যাবে খানিক। উৎসবের রং লাগবে মনের আনাচেকানাচে। ঘেমেনেয়ে একসা না হয়ে, পকেটের দিকেও যথাসাধ্য খেয়াল রেখে কী ভাবে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে তুলবেন আপনার ঘর? আসুন জেনে নিই।
১) পুরনো খবরের কাগজ, তামাদি হয়ে যাওয়া প্রেসক্রিপশন, কাজে না লাগা টুকরোটাকরা জিনিস, বাচ্চার বাতিল বই-খাতা- এমন নানা জিনিসপত্র ঘরের অনেকটা জায়গা দখল করে থাকে। এই বাড়তি সামগ্রী থেকে মুক্ত হতে পারলেই ঘর অনেক পরিচ্ছন্ন দেখাবে।
আরও পড়ুন: থাক হোম থিয়েটারের ঘর, বাড়িতেই পান সিনেমা হলের মজা
ঘর সাজাতে পারেন সুগন্ধি মোমবাতি দিয়ে।
২) কিছুটা সময় দিন আলমারি গুছিয়ে তুলতে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী থাকে থাকে ভাগ করে পোশাক সাজিয়ে রাখুন। খুঁজতে সুবিধা হবে। দৈনন্দিন ব্যবহারের ও উৎসব-অনুষ্ঠানে পরার জামাকাপড় আলাদা রাখুন। ড্রেসিং টেবিলে জমে থাকা ভিড় একটু হাল্কা করুন। আবশ্যিক জিনিসগুলো টেবিলে সাজিয়ে রেখে বাকি সব চালান করে দিন ড্রয়ারে। করোনা পরিস্থিতি আমাদের বুঝিয়েছে জীবনের অনিশ্চয়তা। কিছু বাড়তি জামাকাপড় কোনও সংস্থায় পাঠিয়ে দিতে পারলে কয়েক জন মানুষের মুখে হাসি ফোটে। সেটাই বা কম কী!
৩) বাচ্চাদের পড়ার টেবিল খানিক ওলটপালট, অগোছালো হবেই। বুক শেলফ পরিষ্কার করে বেশির ভাগ বইখাতা তুলে দিন। একান্ত প্রয়োজনীয় বইপত্র টেবিলে রাখুন। হাতে তৈরি কিছু রংবেরঙের ডিভাইডার দিয়ে ওদের পেনসিল বক্স, পেন স্ট্যান্ড-সহ আরও টুকিটাকি থাকুক এক ধারে। টেবিল লাগোয়া দেওয়ালে সেঁটে দিন বাচ্চার প্রিয় কার্টুন চরিত্রের পোস্টার। আপনার খুদের মন ভাল হতে বাধ্য!
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী থাকে থাকে ভাগ করে পোশাক সাজিয়ে রাখুন।
৪) ভুলেও অবহেলা করবেন না রান্নাঘর এবং বাথরুমকে। হেঁশেলের দেওয়ালের হুক লাগিয়ে বড় তাওয়া, সসপ্যান ঝুলিয়ে রাখুন। ক্যাবিনেটে কিছুটা জায়গা ফাঁকা হবে। ভালো এক শিশি গ্লাস ক্লিনার কিনে মুছে ফেলুন গ্যাস আভেনের চারপাশে লেগে থাকা তেলচিটে দাগ। মশলার কৌটোগুলো ঝেড়েঝুড়ে গায়ে লেবেল সেঁটে ফেলতে পারলে ভাল। রান্নাঘরে রাখুন ঢাকনা দেওয়া ডাস্টবিন। এখন বেশকিছু বাড়ি বা ফ্ল্যাটে ওপেন কিচেন থাকে। তাই রান্নাঘর তকতকে না থাকলে আপনার ঘর গোছানো মাটি। বাথরুম থেকে অনেক সময়েই পুরনো শ্যাম্পুর বোতল, প্রায় শেষ হয়ে আসা সাবান ইত্যাদি সরাতে ভুল হয়ে যায়। সে সব সরিয়ে ফেলে আপনার টয়লেট বক্স গুছিয়ে ফেলুন এ বার।
আরও পড়ুন: পড়ুয়া মনের সঙ্গী হোক সুন্দর একটা স্টাডি টেবিল
৫) আসবাবের সামান্য স্থান পরিবর্তনও এনে দিতে পারে নতুনত্বের আমেজ। শুধু খেয়াল রাখতে হবে এই বদল যেন দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা না ঘটায়। জানলা-দরজার পর্দা, বেডকভার, টেবিল ক্লথ, কুশন কভার পাল্টে ফেললে অনেকটাই বদলে যাবে অন্দরমহলের চেহারা। আলোর ব্যবহারের কিঞ্চিৎ এ দিক-ও দিকও প্রভাব ফেলবে ঘরের সজ্জায়। শোওয়ার ঘরে টিউবলাইটের পরিবর্তে লাগাতে পারেন একটু অন্য ধরনের আলো। সিএফএল বা এলইডি উপযোগী হতে পারে। অনেকে বই ভালোবাসেন, বাড়িতে মিনি লাইব্রেরি বানিয়ে রেখেছেন। শেলফে বইগুলো সারিবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে ফেলুন। ডিসপ্লে ইউনিট হলে আরও ভাল। একটা আলাদা পরিতৃপ্তি আসবে। কারও শখ থাকে গান শোনার, সিনেমা দেখার। বাড়িতে রয়েছে সিডি-ডিভিডির সংগ্রহ। হ্যাঁ, এই ডাউনলোডের যুগেও। সেগুলোও সিরিজ অনুযায়ী গুছিয়ে রাখুন না! বেশ লাগবে।
টেবিল লাগোয়া দেওয়ালে সেঁটে দিন বাচ্চার প্রিয় কার্টুন চরিত্রের পোস্টার।
৬) পরিবেশ-সচেতনতা বাড়ছে। সবুজের ছোঁয়া আজ তাই ঘরে ঘরে। অর্কিড, পাতাবাহার, ক্যাকটাস, পিস লিলি, অ্যালোভেরা স্নেক প্ল্যান্ট, আজেলা- এদের বারান্দায়, ঘরের কোণে সাজিয়ে রাখা যায় অনায়াসে। ঠাঁই হতে পারে সেন্টার টেবিল বা রান্নাঘরেও। বারান্দার দেওয়ালে রংবেরঙের হ্যাঙ্গিং পটে ঝুলিয়ে রাখা যায় ছোট ছোট গাছ। এতে আপনার চোখ ও মন দুইয়েরই আরাম। ঘরের বাতাসও থাকবে দূষণমুক্ত। মন ভাল রাখতে ফুলের কোনও বিকল্প আছে কি? উৎসবের সময়ে ঘর সাজান ফুল দিয়ে। ফুলদানি ছাড়া কাচের পাত্র বা কফি মগেও রাখতে পারেন এদের। ঘরের চেহারা পাল্টে যাবে মুহূর্তেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy