একটা বড় কাঠের টেবিল ছিল ঠাকুরদাদার আমলের। সে টেবিলে মিলত হোমিওপ্যাথি ওষুধের শিশি থেকে দেশভাগের ইতিহাসের বই। পিসির ভাঙা কাচের চুড়ি রাখা বাক্স, ভাইয়ের ছোটবেলার ছবি, কী নেই তাতে। কিন্তু সময় বদলেছে। দিনে দিনে বিশ্বায়নের হাওয়া লেগেছে প্রত্যেক ঘরে। এখন ঘরের দরকার অনুযায়ী বিবিধ টেবিল প্রত্যেক ঘরে। তার সাজও আলাদা হয় টেবিলের আকার, আয়তন ও ভূমিকা হিসেবে।
কোন টেবিলের কেমন সাজ হলে দেখতে ভাল লাগবে, জেনে নেওয়া যাক।
কর্নার টেবিল: এই টেবলে মনের মতো জিনিস রাখতে পারেন। ভারী সাজ পছন্দ হলে কর্নার টেবিলের পিছনের দেওয়ালে ছবি রাখুন। সাদা-কালো বাঁধানো ছবি কিংবা হাতে আঁকা। পুরনো রেডিয়ো, দূরবীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি জিনিস দিয়েও সাজাতে পারেন। বেশ স্মৃতিমেদুর মনে হবে। এ ছাড়া মাটির ভারী মূর্তিও রাখতে পারেন। সেটাই নতুন বৈশিষ্ট যোগ করবে ঘরের। আবার বিভিন্ন রকমের ক্যান্ডল, বনসাই, চিনামাটির পাত্র দিয়েও সাজিয়ে ফেলতে পারেন কর্নার টেবিল। বেশি ঘিঞ্জি সাজ পছন্দ না হলে একটা কুরুশে বোনা কভার দিয়ে ঢেকে তার উপরে অ্যান্টিক টেলিফোন বা গ্রামোফোন রেখে সাজানো যায়।
পড়ার টেবিল: সাজানোর চেয়েও গুছিয়ে রাখা বেশি দরকার। অনেকেই বই পড়ে তা ফেলে রেখে উঠে যান। পরে এসে আবার অন্য একটা বই টেনে পড়তে শুরু করেন। এ ভাবে পড়ার টেবিল অবিন্যস্ত বইয়ে ভরে ওঠে। তার চেয়ে প্রত্যেকটা বই পড়ার পরে গুছিয়ে রাখার অভ্যেস করুন। পড়ার টেবিলে ল্যাম্প রাখতে পারেন। বিভিন্ন বুকমার্কও সংগ্রহে রাখতে পারেন। পেন্ট করা কাচের বোতলে জল ভরেও রাখা যায়। দেখতেও ভাল লাগবে, দরকার মতো গলাও ভিজিয়ে নেওয়া যাবে। আর রাখতে পারেন গাছ। তবে একগাদা নয়, একটা বা দুটো। আর গাছের মাটি, শুকনো পাতা পরিষ্কার করবেন নিয়মিত। গাছের বদলে ফুলদানিও রাখতে হবে। তবে খুব সাবধানে, যেন জল উলটে পড়ে না যায়।
বৈঠকখানায় টেবিল থাকে সোফা ও চেয়ারের মাঝে।
ডাইনিং টেবিল: এই টেবিলের সাজ হবে হালকা। যেহেতু খাওয়াদাওয়া করার সময়ে প্লেট, গ্লাস রাখার জন্য জায়গা প্রয়োজন, তাই কোনও ভারী জিনিস দিয়ে না রাখাই ভাল। টেবিলের আকার অনুযায়ী সাজান। দু’চারজন বসার মতো ছোট টেবিল হলে, সাজানোর আলাদা শো-পিস ব্যবহার না করাই ভাল। বরং একটা সুন্দর রানার পেতে দিন। তার উপরে নুন আর মরিচদানি রাখুন নকশা করা। মুরগি, পেঁচা বা বিড়ালের মতো দেখতে চিনামাটির শো-পিসও রাখতে পারেন। ছোট রঙিন বয়ামে আচার রাখুন। কিংবা সাদা জারে রঙিন পাথর। এতেই রূপ খুলবে। একান্তই ফুল দিয়ে বা গাছ দিয়ে সাজাতে চাইলে যথাসম্ভব ছোট গাছ বা ফুলদানি রাখুন। মাদুর বা বেতের ম্যাট কিনতে পাওয়া যায় অনলাইনেও, এ গুলিও ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুন: অন্দরসজ্জার রকমফেরে বৈঠকখানাই হয়ে উঠুক আপনার সাধের গানঘর
টেবিলের আকার একটু বড় হলে তাতে বিভিন্ন রকমের শো-পিস থেকে শুরু করে পেতলের বাসন দিয়েও সাজাতে পারেন। ফলের রেকাবি বা ঝুড়িও ভাল দেখায়।
সেন্টার টেবিল: সাধারণত বৈঠকখানায় বা বাইরের ঘরে এই টেবিল থাকে সোফা ও চেয়ারের মাঝে। অনেকে দু’র্যাকের সেন্টার টেবিল রাখেন। নীচের র্যাকে জমতে থাকে খবরের কাগজ। সেন্টার টেবিল যেহেতু বসার ঘরে থাকে, তাই তা সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখাই শ্রেয়। সেখানে কাগজ জমিয়ে রাখলে কিন্তু ভাল দেখাবে না। তার চেয়ে সুন্দর প্রচ্ছদ আছে, এমন দু’চারটি বই রাখতে পারেন। তার পাশে একটা কাচের পাত্রে ভাসিয়ে দিতে পারেন বাগান থেকে তুলে আনা ফুল। তবে একই ভাবে সাজাতে হবে, তার কোনও মানে নেই। পোর্সেলিনের মূর্তি রেখেও সাজাতে পারেন। তবে তার ভার যেন টেবিল বইতে পারে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাকুল্যান্টস বা ছোট গাছও রাখতে পারেন, সঙ্গে সুগন্ধী মোমবাতি। ইন্ডোর গেম ভাল লাগলে সুন্দর কাঠের বা মার্বেলের দাবার বোর্ড বানিয়ে রাখতে পারেন উপরে। অবসরে সেখানে দাবা খেলাও যাবে।
এ বার আসা যাক, শোওয়ার ঘরে, যে খানে একান্তে নিজেকে মাঝে মাঝে দেখেন আপনি। এই জায়গাটির প্রতি সবচেয়ে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন, এমনই জানালেন অন্দরসজ্জাবিদ উর্বশী বসু।
শো-পিস থেকে শুরু করে পেতলের বাসন দিয়েও সাজাতে পারেন।
ড্রেসিং টেবিল: সাজগোজের জিনিস বেশি থাকলে এই টেবিলের সাজ নষ্ট হতে সময় বেশি লাগে না। তাড়াহুড়োর সময়ে, লিপস্টিক, কাজলটা লাগিয়ে অনেকেই বেরিয়ে পড়েন। চুল আঁচড়েই চিরুনিটা ফেলে যান। তা জমা হয় আয়নার সামনে। প্রথমেই এই অভ্যাস বদলান। আয়নার সামনে ফুল দিয়ে সাজাতে পারেন। এথনিক গয়নার বাক্স রাখতে পারেন টেবিলের উপরে। দেখতেও ভাল লাগবে। রোজকার কানের দুল রাখতে পারেন ওর মধ্যে।
আরও পড়ুন: বই পড়া, আলসেমি, নস্টালজিয়ার সঙ্গী থাকুক ‘ইজিচেয়ার’
অনেক সময়ে দেখা যায়, সাজানোর ভারে এতই ভারাক্রান্ত টেবিল যে তাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাই কোন টেবিল কী ধরনের কাজে ব্যবহার করতে চান, সেটা মাথায় রেখেই সাজান। তা হলে সাজও সুন্দর হবে, ব্যবহারযোগ্যতাও বাড়বে।
ল্যাপটপ বা কম্পিউটার টেবিল: ল্যাপটপ টেবিল বেশিরভাগেরই থাকে খাটের কিংবা নীচে পাতা গদির উপরে। সেখানে এখন স্যানিটাইজারের ছোট শিশি রাখতে পারেন বরং। কারণ তার আয়তন খুবই ছোট। কম্পিউটার টেবিলের পাশে যেটুকু জায়গা থাকে, তাতে সবুজের ছোঁয়া বজায় রাখুন। রেখে দিন ছোট কোনও সাকুল্যান্টস। চাইলে ডোকরার ছোট মূর্তি কিংবা কাঠের পুতুলও রাখতে পারেন। সবটাই নির্ভর করছে আপনার রুচির উপরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy