দৈনন্দিন কাজকর্মের একটা খুব সহজ হিসাব নিলেই দেখা যাবে,রান্নার সঙ্গে যুক্ত মানুষরা সারাদিনের প্রায় তিন ভাগের একভাগ সময়ই রান্নাঘরে কাটাচ্ছেন।শুধু মাত্র সারাদিনে বেশ কয়েকবারের খাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া বাদ দিলেও দেখা যায়, অন্য অনেক কারনেও রান্নাঘরে যেতে হয়।সুতরাং রান্নাঘরে সময় কাটানোর সময়টা মোটের উপর একেবারেই কম নয়।আর তাই বাড়ির অন্দরসজ্জা করার সময় অন্য বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘরকে সাজিয়ে তোলা খুবই দরকার।
যদিও সময় এবং সমাজ বলে, মহিলা এবং পুরুষদের সমানাধিকারের কথা। তবে, আমার মতে, অন্দরসজ্জার ক্ষেত্রে মেয়েদের ভাবনাকে সবসময়ই বেশি প্রাধান্য দেওয়া দরকার।কারণ বাইরের কাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ঘরের দরকারি খুঁটিনাটি,ঘর সাজিয়ে রাখা, রান্নাঘরের ব্যবহার এ সব মেয়েরা বোঝেন বেশি।সুতরাং বাড়ির মেয়েদের বাদ দিয়ে রান্নাঘর সাজানো কিংবা গৃহসজ্জা একেবারেই নয়।
রান্নাঘরের মূল ভাবনাটা সবসময়ই আবর্তিত হয় কিচেন ট্রায়াঙ্গেলের ভাবনার উপরে নির্ভর করে।অর্থাৎ সিঙ্ক, আভেন এবং ফ্রিজের মধ্যে একটা ট্রায়াঙ্গেল দূরত্ব বজায় রাখা।যদিও এখন রান্না ঘরে অনেক ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার করা হয়।একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে সেগুলোকে রাখতে হবে। আভেন কিংবা সিঙ্কের থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখেই বাকিগুলোকে রাখার ব্যবস্থা করা দরকার।জায়গা যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেই মাইক্রোওভেন,মিক্সিকিং বা ফ্রিজার ব্যবহার করলে সেটা রান্নাঘরে রাখবেন।নাহলে বাইরের অন্য কোনও ঘরে সেগুলোকে রাখার ব্যবস্থা করবেন।
আরও পড়ুন: ঘরের কোণ সাজান মনের মতো করে
কিচেন রান্নার সঙ্গে সঙ্গে যথেষ্ট পরিমানে সুরক্ষিত কিনা,সেটাও দেখে নেবেন।বিশেষ করে বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো।প্রতিটা সুইচের সঙ্গে আর্থিং ঠিকমতো আছে কিনা সেই ব্যপারে আপনার নিশ্চিন্ত হওয়া দরকার।রান্নাঘরের সুইচগুলো মডিউলার হলে সবচেয়ে ভাল হয়।
রান্নাঘরে আলো চিরদিনই সমস্যা তৈরি করে এসেছে।জানালা থেকে যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যের আলো এলে খুবই ভাল।অন্তত দিনেরবেলা যথেষ্ট আলোর দরকার মিটবে। যখন কেউ রান্নায় ব্যস্ত থাকেন, তখন কিচেন কাউন্টারে,ঘরে জ্বলা আলো ঠিকমতো এসে পৌঁছয় না।তাই রান্নাঘরের বিভিন্ন কাজ করতে বেশ অসুবিধা হয়। তাই আলোর ব্যবস্থা যথেষ্ট রাখুন।
এ ক্ষেত্রে অবশ্যই রান্নাঘরের আপার ক্যাবিনেটের পাল্লার নীচের দিকে বাড়িয়ে রাখা অংশে এলইডি আলো লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।যাতে রান্নাঘরের কাউন্টারের উপরে আলো সমান এবং যথেষ্ট এসে পৌঁছয়।কিছু প্লাগ পয়েন্ট রাখাও দরকার।যদিও বলা হয়,শুধু রান্নাঘর নয়,সারা বাড়িতেই প্লাগ পয়েন্ট বেশি রাখার প্রয়োজন।ভারী ইলেকট্রনিক গ্যাজেট পনেরো অ্যাম্পিয়ারেই চলে।
আরও পড়ুন: এ বার বাড়িতে বসেই পাবেন সিনেমা হলের আমেজ!
আন্ডার ক্যাবিনেট কিচেন ট্রেগুলো বিভিন্ন মাপের হয়।চার ইঞ্চি,ছয় ইঞ্চি,আট ইঞ্চি ইত্যাদি।এই চ্যানেলগুলোর গভীরতা আপনার কিচেনের ক্যাবিনেটের মাপ অনুযায়ী হওয়া প্রয়োজন। স্টিলের ট্রেগুলো একজোড়া টেলিস্কোপিক চ্যানেল ক্যাবিনেটে বসিয়ে তারপর লাগাতে হয়।টেলিস্কোপিক চ্যানেলগুলো ইঞ্চির মাপে বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।স্টিলের ট্রেগুলোও তাই।আপনি ক্যাবিনেটেকতগুলো ট্রে লাগাবেন, সেই হিসাবটা আগে করে নিয়ে তারপর ট্রে এবং ট্রে-র হিসাবে চ্যানেল কিনে নেওয়া দরকার।
কিচেনের ঠিক যেখানে সিঙ্ক থাকবে, তার নীচে অর্থাৎ ক্যাবিনেটের নীচে একটা কল লাগানো খুবই প্রয়োজনীয় কাজ।রান্নাঘরে মেঝের থেকে, কল লাগানো ক্যাবিনেটের সারফেস অল্প নীচু হবে,যাতে বাসন মাজা হলেও জল ছিটকে এসে রান্নাঘরের মেঝেকে ভিজিয়ে দিতে না পারে।
রান্নাঘরের মেঝের দিকেও নজর রাখুন। জলের কাজ এ ঘরে বেশি, তাই মেঝে পার্টেক্স হোক বা মার্বেল— বেশি ঘষবেন না। বরং একটু রাফ থাকলে পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। পর্দার ক্ষেত্রেও ভারী ও হালকা রঙকে প্রাধান্য দিন। এতে রান্নাঘরে আলো ঢুকবে বেশি।
যাঁরা কিচেন গার্ডেন করবেন, তাঁরা ক্যাবিনেটের পাশে একটা জায়গা করুন বা জানালার ধাপে লাগান গাছ, যাতে সহজেই হাত বাড়িয়ে দরকারি সব্জি তুলে নেওয়া যায়। গাছ যেনন জল-হাওয়া বেশি পায়, এমনটা লক্ষ রাখবেন।
উৎসবের মরসুমে পেটপুজোর সঙ্গে রান্নাঘরের সাজ বদলে বাড়ির চেহারায় আনুন নতুনত্ব।
ছবি সৌজন্য: পিক্সাবে।
(লেখক অন্দরসজ্জা বিশেষজ্ঞ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy