এই পুজোয় ঘর হোক ঝকঝকে।
গরমের সময় হালকা রং আর শীতের সময় একটু জমকালো, উজ্জ্বল রং ঘরের পরিবেশটাকেই পাল্টে দেয়। উজ্জ্বল রংয়ের বিছানার চাদর থেকে জানালার পর্দা, কুশন কাভার থেকে ওয়ালপেপার, অন্দরসজ্জায় অন্যরকম একটা ভাল লাগা তৈরি করে দেয়।
রঙের পরত যা-ই হোক ওয়ালপেপার যে অন্দরসজ্জার চিরকালীন প্রয়োজনীয় এবং দৃষ্টিনন্দন উপাদান সে কথা নতুন ভাবে আর কীই বা বলার আছে! একটা ঘরের সজ্জার চরিত্রটাই পুরোপুরি পাল্টে যেতে পারে দেওয়ালে সঠিক ওয়ালপেপার থাকলে।
ওয়ালপেপারের ইতিহাস হালের নয়। কয়েকশো বছরের পুরনো। মূলত ইউরোপের দেশগুলোতে এবং চিনে ওয়ালপেপারের প্রচুর ব্যবহার ছিল। ওয়ালপেপার প্রিন্টিং মেশিন অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আবিষ্কার হলেও হ্যান্ড পেন্টেড ওয়ালপেপারের খুব চল ছিল। রাজপ্রাসাদ সাজাতে বড় বড় পেন্টিং দেওয়ালে লাগানো হত।
আরও পড়ুন: রান্নাঘরের সাজ বদলে বাড়িকে দিন নতুনত্বের স্বাদ
তবে সে সময়ের ওয়ালপেপার বিষয়টি অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য ব্যপার ছিল। ১৭০০ সালের পর থেকে প্রায় ১৩০ বছর পর্যন্ত ইউরোপের কিছু দেশে ওয়ালপেপার ঘরে লাগালে ট্যাক্স দিতে হত যথেষ্ট পরিমাণে। আর তাই মধ্যবিত্তর কাছে সে সময়ে ওয়ালপেপার লাগানোটা রীতিমত কষ্টসাধ্য ছিল।
যদিও এখন ওয়ালপেপার লাগানো খুব একটা ব্যয়বহুল নয়। প্রতি বর্গফুট মোটামুটি ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ টাকার মধ্যে বেশ ভাল ভাবে হয়ে যায়। ওয়ালপেপারের একটা রোলের দাম শুরু হয় মোটামুটি ভাবে এক হাজার টাকা থেকে। অনেক দামীও আছে। একটা রোলের মধ্যে পঞ্চান্ন থেকে সাতান্ন বর্গফুট মাপের ওয়ালপেপার থাকে। এক একটা রোলকে মিস্ত্রি আর আঠা দিয়ে লাগাতে খরচ পরে আড়াইশো থেকে তিনশো টাকার মতো। এই দামগুলো শহর কলকাতার প্রেক্ষিতে। শহরের বাইরে হলে দামের কিছুটা হয়তো হেরফের হতে পারে। কলকাতার এস এন ব্যনার্জি রোড, লেলিন সরণি এ সব জায়গায় ওয়ালপেপার পাইকারি দামে পেয়ে যাবেন।
ওয়ালপেপার লাগানোর জন্য খুবই মসৃণ দেওয়ালের দরকার। খুব ভাল করে প্যারিসের ফিনিশ কিংবা পুট্টি ফিনিশ কিংবা পাটা প্যারিস। দেওয়াল মসৃণ হলে তার পর ওয়ালপেপার লাগানো যাবে। দেওয়াল একটুও অসমান হলে বাবল্স থেকে যাবে পেপারের মধ্যে। খুব অসমান দেওয়াল হলে প্লাই লাগিয়ে নিতে পারেন দেওয়ালে। প্লাই দু’ভাবে লাগানো যায়। কাঠের ফ্রেম করে তার উপর ছয় মিলিমিটারের প্লাই দিয়ে দেওয়া যায়। নতুবা বারো মিলিমিটারের প্লাই সরাসরি দেওয়ালে লাগানো যায়। দু’টো ক্ষেত্রেই ওয়ালপেপার অত্যন্ত মসৃণ ভাবে লাগিয়ে দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই বদলে ফেলুন চেনা বাথরুম
ওয়ালপেপার লাগানোর সময় কয়েকটা ব্যপার একটু খেয়াল করা দরকার। সামান্যতম স্যাঁতসেঁতে ভাব যে দেওয়ালে আছে, সে দেওয়ালে ওয়ালপেপার একেবারেই লাগাবেন না। ওয়ালপেপার যখন লাগানো হবে, তখন দেখে নেবেন কোনও রকম বাবল বা এয়ার গ্যাপ যেন না থেকে যায় ভিতরে। থেকে গেলে কিন্তু কিছু দিন পর সেখান থেকে পেপার খুলে যেতে শুরু করবে।
এসি যে ওয়ালে থাকবে, সেখানে ওয়ালপেপার না লাগানোই ভাল। কোনও ভাবে এসি-র জল যদি লিক করে, তা হলে পেপার নষ্ট হয়ে যাবে। যদি লাগাতেই হয়, এসি-র নীচ পর্যন্ত লাগাবেন। ওয়ালপেপার রোল চওড়ায় খুব ছোট হয়। ভার্টিকালি এর চলন। সুতরাং একটা চওড়া ওয়ালে লাগাতে গেলে অনেকগুলো জোড়া দিতে হয়। একটু দেখে নেবেন এই জোড়ার মধ্যে কোনও ফাঁক যেন না থাকে। ওয়ালপেপার বর্গফুটের মাপে কেনা যায় না। রোল ধরে কিনতে হয়। প্রতি রোলে সাধারণত পঞ্চান্ন বর্গফুটের মতো থাকে। তাই নষ্ট হওয়ার খুব সম্ভবনা থাকে। সেটা ভেবে নিয়েই বাজেট বানাবেন।
যদি সম্ভব হয় বেঁচে যাওয়া অংশ অন্য ছোট জায়গায় লাগিয়ে দেবেন। ফল্স সিলিংয়েও কিছু কিছু জায়গায় নকশার চাহিদা অনুযায়ী ওয়ালপেপার ব্যবহার করা হয়। এখন পিভিসি জাতীয় ওয়ালপেপার কিংবা ফোম জাতীয় ওয়াললেপার বাজারে এসেছে। এগুলো পুরু বেশি। তাই সরাসরি দেওয়ালে লাগালেও অসুবিধা হয় না। ওয়ালপেপার যে দেওয়ালে থাকবে, সে দেওয়ালে যাতে ভাল করে আলো পরে সেদিকে নজর রাখতে হবে। আলোর উৎস লুকানো থাকলেও সেই আলো যেন দেওয়ালে সরাসরি এসে পড়ে।
ছবি সৌজন্য: পিক্সাবে।
(লেখক অন্দরসজ্জা বিশেষজ্ঞ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy