প্রতীকী চিত্র
উৎসবের মরসুমে বেলাগাম খাওয়াদাওয়ায় মাতেন অনেকেই। দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটা পেরিয়ে উৎসবের সেই আমেজ চলতে থাকে বছর শেষে বড়দিন পর্যন্ত। তবে মাথায় রাখা জরুরি, এমন বেনিয়মের খাওয়াদাওয়া সবার জন্য নয়। বিশেষত, যাঁদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে গ্যাস বা হজমের সমস্যা। এই অবস্থায় অতিরিক্ত তেল, ঝাল, মশলাযুক্ত খাবার সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। উদযাপনের মেজাজে যদি স্বাস্থ্যের পরোয়া না করে যা ইচ্ছে খেয়ে কাটিয়ে দেন, রোগের ঝুঁকি বাড়তেই পারে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে যেমন বাড়তে পারে হার্টের সমস্যা। রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদরোগের আশঙ্কা তৈরি হয়। কমতে চায় না হজমের সমস্যা। স্রেফ আনন্দ করতে গিয়ে এ ভাবে বিপদ না ডেকে বরং জীবনধারায় বেশ কিছু বদল আনুন। এই সামান্য বিষয়গুলো মেনে চললেই উৎসবের মরসুমেও শরীর থাকবে ফিট। আনন্দও করতে পারবেন জমিয়ে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
সামনেই কালীপুজো-দীপাবলি, ভাইফোঁটা। জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া নিশ্চয়ই করবেন। তন্দুরি চিকেন থেকে শুরু করে কচি পাঁঠার ঝোল, সবই থাকবে। কিন্তু সে সবের মাঝে স্বাস্থ্যের কথাও মাথায় রাখতে হবে। স্বল্প পরিমাণ খাবার এবং বিভিন্ন পদ সহযোগে বাড়ির খাবারের মেনু ঠিক করুন উৎসবে।
অনুশ্রী ডায়েট এন্ড ওয়েলনেস ক্লিনিকের কর্ণধার, পুষ্টিবিদ অনুশ্রী মিত্রের কথায় “উৎসবের মরসুমে আমাদের অনেকের স্বাভাবিক কারণেই খাওয়াদাওয়া বেড়ে যায়। তবে যেটা মনে রাখতে হবে, তা হল– যা খাব, পরিমাণ যেন সীমিত হয়। মিষ্টি ভালবাসি বলেই একসঙ্গে পাঁচটা মিষ্টি খাওয়া উচিত নয়। ঠিক তেমনই কালীপুজো বা ভাইফোঁটায় মাটন দেখলেই একসঙ্গে এক বাটি খেয়ে ফেললাম– এটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ ঠিক এর পরেই শুরু হয় কোলেস্টেরল, গ্যাস এবং হজমের সমস্যা সংক্রান্ত নানা অসুবিধা। শরীর জানান দেয় অসুখের কথা। তাই যে খাবারই খাই না কেন, শাকসবজি বা ফল এবং প্রচুর পরিমাণে জল আমাদের খাওয়ার রুটিনে রাখা উচিত।”
অনুশ্রীর মতে, “ইদানীং বাচ্চাদের শরীরেও নানা অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। বহু বাচ্চার খুব অল্প বয়স থেকেই ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা দেখা যায়। তাই মা-বাবাকে প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। বাচ্চা কী খাচ্ছে এবং কখন খাচ্ছে– সে দিকে নজর রাখাটা খুব জরুরি। একসঙ্গে এক বাটি চিপস বা মাঝে মাঝেই ভাজাভুজি, চানাচুর-চিপস জাতীয় খাবার, যে বাচ্চা মিষ্টি ভালবাসে সে খেতে চাইলেই তাকে মিষ্টি দিয়ে দেওয়া, নাড়ু মোয়ার মতো মিষ্টি খাবার দিনের যে কোনও সময়ে বাচ্চাদের হাতে দেওয়া, পাতে চিকেন মাটনের আধিক্য বিপদ ডেকে আনছে। তা ছাড়া, রেস্তরাঁর খাবারে একদমই ভরসা রাখা উচিত নয়। বাচ্চাদের ফল খাওয়ানোর অভ্যাস করাটাও খুব দরকার। আর এই অভ্যাস তৈরি হয় বাড়ির বড়দের দেখেই। তাই মা-বাবাকে প্রাথমিক স্তরে বাচ্চার খাদ্যাভ্যাস তৈরির দায়িত্ব নিতে হবে।"
কী ভাবে গড়ে তুলবেন খাওয়াদাওয়ার সুঅভ্যাস? বিশেষজ্ঞরা বলছেন রোজকার খাওয়াদাওয়ায় থাক নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টিগুণ। আর সঙ্গে থাক নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। তাতেই আপনার শরীর থাকবে সুস্থ ও তরতাজা। জেনে নিন কী কী খাবেন বা করবেন এবং কী কী এড়িয়ে চলবেন।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
স্বাস্থ্য ভাল রাখতে যে কোনও এক বেলা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান। ব্রেকফাস্ট কিংবা ডিনারে গোটা শস্যে তৈরি খাবার রাখুন। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা চট করে বাড়তে দেয় না।
ফল ও শাক-সবজি
প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খান। তাজা ফল ও শাকসবজির মধ্যে বেশ ভাল পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন, আয়রন-সহ নানা পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রয়োজনে ফল কিংবা সবজির স্মুদিও পান করতে পারেন। বাইরে বেরোলে সঙ্গে রাখতে পারেন ফলের রস, সবজির স্মুদি। এতে শরীরও হাইড্রেটেড থাকবে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়বে না।
ভিটামিন ই-যুক্ত খাবার
সকালের জলখাবারে আমন্ড, আখরোট, কাঠবাদাম রাখুন। বাদামে আছে ভিটামিন ই। তাতে টোকোট্রাইনল নামক উপাদান রয়েছে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। দিনের শুরুতে ৪-৬টা আমন্ড খেলেই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
ধূমপান ও মদ্যপান
ধূমপানের অভ্যাস খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি এটি ফুসফুসের ক্ষতি করে। একই সঙ্গে মদ্যপানের অভ্যাস শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু উৎসবের মরসুমে আপনাকে সচেতন হতে হবে। ধূমপান কোনও ভাবেই চলবে না। মদ্যপান করলেও সীমিত পরিমাণে। তবেই কোলেস্টেরলের মাত্রা বশে থাকতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম
উৎসবের মরসুমে শিকেয় ওঠে রুটিন। তবে শরীরচর্চা না করলে সমস্যা বাড়তে পারে। উৎসবের দিনগুলোয় ভারী ব্যায়াম না করলেও হালকা যোগব্যায়াম করতেই পারেন। করতে পারেন যোগাসন। এতেও হজমের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
পুষ্টিবিদ অনুশ্রী মিত্র বলছেন, “উৎসবের সময়ে স্কুল-কলেজ-অফিস বন্ধ থাকে অনেকেরই। কাজকর্মও বন্ধ থাকে অনেকেরই। তাই স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ ব্যাহত হয়। রোজকার হাঁটাচলা বা দৌড়ঝাঁপও কম হয়। এ ক্ষেত্রে যদি বাড়ির ছাদে, পাড়ার গলিতে, বা ঘরের মধ্যেও একটু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা হাঁটাহাঁটি করা যায়, তা হলে হজমের ক্ষমতা এবং শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ে। মেটাবলিজম রেটও বাড়ে। পেটের গোলমাল বা হজমের সমস্যা এড়াতে রিকশা ছেড়ে কিছুক্ষণ পায়ে হাঁটা, অল্প সিঁড়ি ভাঙার মতো সহজসাধ্য শারীরিক ব্যায়ামগুলি জীবনযাত্রার অভ্যাস হয়ে উঠুক। বাচ্চা থেকে আবালবৃদ্ধবণিতা, সকলেরই অল্প বিস্তর শরীরচর্চা দরকার। পেটের গণ্ডগোলে তা সদর্থক ভূমিকা পালন করে।”
এই প্রতিবেদনটি আনন্দ উৎসব ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy