অষ্টমীর ঘণ্টার আওয়াজ। ফুলের অঞ্জলিতে যে এত নীরব বিষাদ, আগে তো খেয়াল করিনি।
দেবীপক্ষে যে মেয়ে পিতৃহারা হল, তাকে কী বলা যায়!
দুর্গাষ্টমীর পদ্মফুলে এমন ঝড়? যে ঝড়ে আপনার শৈশব উড়ে যায়, চলে যাওয়া মায়ের মুখ মনে পড়ে, সেই ঝড় ঘর শূন্য করে দিল!
এ বার চরণমূলেই মরণ।
আপনার বাবা গোপাল গোবিন্দ ভাদুড়ি সামনে থেকে সরে গেলেন। অষ্টমীর সকালে।
আপনি রবীন্দ্রভক্ত মানুষ। আপনি বুঝতেই পারছেন শরতের মধ্যে কত কান্না জমিয়ে রেখেছেন রবীন্দ্রনাথ! আমাদের সঙ্গে যখন শোক থাকে আমরা তা বুঝতে পারি। গান আপনার নিত্যসঙ্গী। আপনার বাবাও গান শুনতে ভালবাসতেন। তাই এই অষ্টমীর সকাল বাবা তার আদুরে মেয়েকে হয়তো বলছে, "যে ওই শিউলিদলে ছড়ালো কাননতলে, সে যে ওই ক্ষণিক ধারায় উড়ে যায় বায়ুবেগে!'
কিন্তু হৃদয়ে তিনি তো চিরকালের!
আপনার দুর্গাপুরের সেই বাড়ি যেখানে আপনার বাবা দুই সন্তানকে শিক্ষা -মেধা- রুচি- সংস্কৃতি দিয়ে এমন করে মানুষ করলেন যে আজ আপনি এবং আপনার ভাই অঞ্জন ভাদুড়িকে মানুষ ঘুরে ঘুরে দেখে। ওই যে, 'মানুষের মতো মানুষ'!
রোগ দেখা দিয়েছিল আপনার বাবার শরীরে। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে সে দিন দেখেছিলাম আপনাকে। পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও মহিলার সমস্যার সামনে দাঁড়ানো, অন্যের পাশে নীরবে থাকা, লেখক, পরিচালক লীনা সে দিন ছটফটিয়ে উঠছেন তাঁর বাবার জন্য। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা যাবে না। লন্ডন থেকে ফোন আসছে ভাইয়ের। এই লীনাকে দেখে সে দিন মনে হয়েছিল বাবার উদার ছায়ায় আশ্রয় বড় হওয়া ছোট্ট এক মেয়ে। তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘুমোন আপনি। তার পরে শুধুই কাজ। তার মধ্যেও দেখছিলাম বাবাকে রোজ দেখতে যেতেন। রোজ। আপনার প্রযোজনা সংস্থা দুর্গা পুজো (যার দিকে তাকিয়ে থাকা টলিপাড়ার সবাই) এ বার তারাও চুপ।
'দাদুর শরীর খারাপ'।
কাজ, কাজের মানুষকে সত্যিকারের পরিবার করে তোলা আপনি আজ পিতৃহীন। কিন্তু বাবা তো চলে গেলেন শুধু সামনে থেকে।
মনে আছে?
আপনিই তো শিখিয়েছেন লড়াই করতে। শক্ত হতে।
আপনিই তো বলেছিলেন, 'শরীরটাই শুধু যায়। মন থাকে। আমরা দেখতে পাই না বলে মন খারাপ হয়। আসলে তো যে যায়, তাকে অন্তরে পাই।'
বাবা চলে যাওয়ার আগের দিন সপ্তমীর রাতে যখন বাবাকে দেখতে গিয়েছিলেন জানি না, বাবার সঙ্গে মেয়ের কী কথা হয়েছিল?
তবে এই অঞ্জলিতে যে বিসর্জন, সেখানে অবশ্যই আগমনের বার্তা আছে। থাকবে।
শোক সঙ্গে থাকুক আপনার। যেমন থাকবেন বাবা। আপনার নতুন লেখা। ধারাবাহিক-সব কিছুর অপেক্ষায় থাকবেন তিনি। আগের মতোই খুঁটিয়ে দেখবেন আর মনে মনে আপনাকে ঠিক মতামত জানিয়ে দেবেন।
এই শারদপ্রাতে বাবাই আপনাকে বাঁশিটা দিয়ে গেলেন।
এই বাঁশির সুর চিরকালের।
তার মৃত্যু নেই।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy