সম্মান রক্ষার্থে হত্যা ইসলাম-বিরোধী। সম্প্রতি এই মর্মে ফতোয়া জারি করল পাকিস্তান উলেমা কাউন্সিল। সম্প্রতি পরিবারের অমতে বিয়ে করার অপরাধে ফরজানা পরভিন নামে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে পিটিয়ে খুন করেছিল তাঁরই আত্মীয়রা। তার পরেই এই ফতোয়া।
পাক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সম্প্রতি উলেমা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তাহির আশরফি ফতোয়ার খসড়া প্রকাশ করেন। সে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজনীতি, ধর্ম-শিক্ষা জগতের কর্তাব্যক্তিরা। ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও। সকলের সামনেই তাহির জানান, বেশিরভাগ সময় এ ধরনের খুনের পিছনে থাকে অমূলক সন্দেহ। এবং তা এতটাই জোরালো থাকে যে সন্দেহের সমর্থনে কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ না মিললেও খুন করতে পিছপা হয় না অপরাধীরা। তাঁর আরও দাবি, “অবিবাহিত মহিলাদের বিরুদ্ধে আনা এ হেন অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলেও তাঁকে খুন করা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়।”
পাক বাসিন্দাদের অনেকেরই অবশ্য প্রশ্ন, আপাত রক্ষণশীল উলেমা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হঠাৎ কেন এমন ফতোয়া জারি করলেন? স্পষ্ট উত্তর না মিললেও জল্পনা, ফরজানা-হত্যার জেরেই এই ফতোয়া। আদালত চত্বরে পুলিশের সামনে ফরজানাকে খুন করে তাঁরই আত্মীয়রা। ঘটনায় তোলপাড় হয় গোটা বিশ্ব। রিপোর্ট চেয়ে পাঠান পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তার পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেফতার হয় পরভিনের বাবা, দুই ভাই, প্রাক্তন স্বামী, ও আরও ক’জন আত্মীয়। পাকিস্তানের এক বিশেষ আদালত পরভিনের আত্মীয়দের ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তৎপরতা যে অবশ্য শুধু আদালতেই সীমাবদ্ধ নেই, তা বুঝিয়ে দিল উলেমা কাউন্সিলের ফতোয়া।
তবে শুধু সম্মান-রক্ষার্থে হত্যাকে ইসলাম-বিরোধী বলেই থেমে যাননি তাহির। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং সংখ্যালঘুদের উপর নানা জায়গায় যে অত্যাচার চলে, তারও প্রকাশ্যে নিন্দা করেছেন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী মহম্মদ ইউসুফও বক্তৃতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়ানোর কথা বলেন। জানান, জোর করে ধর্মান্তকরণ ইসলাম সমর্থন করে না।
ইতিবাচক এই ফতোয়া ও বক্তৃতার প্রভাবে বাস্তব ছবিটাও এ বার বদলায় কি না, সেটাই দেখার।