শার্লি এবদো পত্রিকার দফতরে হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি এবং ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী লর্যাঁ ফাবিউস। শুক্রবার প্যারিসে। ছবি: এএফপি।
ওদের কবরস্থান ঘিরে জঙ্গিদের তীর্থস্থান তৈরি হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই প্যারিস-হামলার পর নিহত জঙ্গিদের দেহ নিতে অস্বীকার করল তাদেরই শহর। শার্লি এবদোর দফতরের পাশাপাশি শহরের একাধিক জায়গায় হামলা চালানোর পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় শেরিফ এবং সঈদ কুয়াশি। পুলিশের গুলিতেই খতম হয় আর এক জঙ্গি আমেদি কুলিবে। সূত্রের খবর, এই তিন জনেরই দেহ কবর দেওয়া নিয়ে দ্বিধায় স্থানীয় প্রশাসন।
জন্মস্থান কিংবা মৃত্যুস্থানেই শেষকৃত্যের রেওয়াজ ফ্রান্সে। দেশের আইনও একই কথা বলে। সেই মোতাবেক দেশের উত্তর-পূর্বে দামার্ত্যা-ও-গোয়েল গ্রামেই কুয়াশি ভাইদের শেষকৃত্য হওয়ার কথা। কারণ এখানেরই একটি ছাপাখানায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় তারা। আপত্তি উঠে আসছে স্থানীয় প্রশাসনের তরফেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ কোনও আত্মীয়ও নেই এই দুই জঙ্গির। তাই শেষকৃত্যের দায় নিতে হবে প্রশাসনকেই। প্রশাসনের তরফে এক শীর্ষ কর্তা আজ সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আইনের পথে চলতে গেলে আমাদের হয়তো এখানেই কোথাও কবর দিতে হবে ওদের। তবে এ দায় এড়াতে পারলেই ভাল হয়।”
শেরিফ কুয়াশি থাকত প্যারিসের উত্তর-শহরতলি জেনভিয়ের্সে। আর সঈদের বাসস্থান উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের রাইম শহর। দু’টি শহরের কাউন্সিলরই এ দিন জঙ্গিদের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবু দোলাচল যে আছেই, প্রশাসন সূত্রে তা সাফ।
গত সপ্তাহেই কোশার সুপারমার্কেট দখল নেওয়ার পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় বছর বত্রিশের কৃষ্ণাঙ্গ জঙ্গি আমেদি কুলেবি। ফঁতেনে-ও-রোজেস শহরের বাসিন্দা ছিল সে। আজ তার দেহ নিতে নিমরাজি সেখানকার প্রশাসনও। তবু আইনি বাধ্যবাধ্যকতার কারণে হয়তো সেখানেই কবর দেওয়া হতে পারে নিহত জঙ্গির।
এক দিকে যখন নিহত জঙ্গিদের দেহ নিতেই অস্বীকার, অন্য দিকে তখন চোখের জলে বিদায়। আজ বীরের মর্যাদাতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হল জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে হত পুলিশ অফিসার ফ্রাঙ্ক ব্রিনসোলারোর।
জাতি-দাঙ্গা এর আগেও হয়েছে দেশের বিভিন্ন অংশে। তবে উপর্যুপরি জেহাদি সন্ত্রাসের চেহারা এ বারই প্রথম দেখল ফ্রান্স। সাম্প্রতিক এই হামলায় নিহত ১৭ নাগরিক। সেই সন্ত্রাসের জের অব্যাহত থাকল আজও। শার্লি এবদোর দফতরে জঙ্গি হামলায় মদত দেওয়ার অভিযোগে রাতারাতি ১২ জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে প্যারিস পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে তিন জন মহিলাও রয়েছে বলে সূত্রের খবর। পুলিশের সন্দেহ, জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি অন্য মদতও দিয়েছিল এরা। জোর তল্লাশি চলছে দেশের আরও বেশ কিছু শহরে।
বোমাতঙ্কের জেরে আজই প্যারিসের গ্যের দ্য লে রেলস্টেশনে বহু ক্ষণ ব্যাহত হয় পরিষেবা। স্টেশন চত্বর খালি করে বন্ধ রাখা হয় ট্রেন চলাচল। উদ্বেগ বাড়ে নিত্যযাত্রীদের মধ্যে। যদিও পুলিশের দাবি, বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতেই এই পদক্ষেপ।
স্টেশনের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আতঙ্ক ছড়ায় একটি ডাকঘর ঘিরে। প্যারিসের উত্তর-পশ্চিমের এক শহরতলির ঘটনা। দু’জনকে পণবন্দি বানায় এক বন্দুকবাজ। তবে পুলিশের দাবি, এর সঙ্গে জঙ্গি হামলার কোনও সম্পর্ক নেই। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই বন্দুকবাজ পরে নিজেই ফোন করে পুলিশকে ডেকে আত্মসমর্পণ করে। ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর নেই। তবে পণবন্দিরা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।