নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অধিকার পেতে চলেছে কানাডা।
মৃতপ্রায় রোগীর নিষ্কৃতি-মরণের দাবি উঠেছিল বহু বছর আগেই। কিন্তু ১৯৯৩ সালে কানাডা সরকার সর্বসম্মত ভাবে খারিজ করে দেয় সেই আবেদন। সম্প্রতি শীর্ষ আদালতে ফের ওঠে সেই আর্জি। এ বার আবেদনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিল পুরনো নিষেধাজ্ঞা। জানানো হয়েছে, আগামী এক বছরের মধ্যেই জারি করা হবে নয়া আইন।
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কোনও শয্যাশায়ী ব্যক্তি যদি এমন কোনও রোগে আক্রান্ত হন, যার নিরাময় নেই, এ দিকে তিনি দিনের পর দিন অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করে চলেছেন, সচেতন অবস্থায় ওই রোগী যদি নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অধিকার দাবি করেন, তা হলে তা মেনে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে ওই রোগী জীবন থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন। ঠিক যেমনটা হয়ে থাকে সুইৎজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ ও আমেরিকার কিছু প্রদেশে।
মামলাটি আদালতে উঠেছিল দুই মহিলাকে কেন্দ্র করে। দু’জনেই মারাত্মক কষ্ট পেয়ে শেষমেশ মারা যান। প্রথম জন গ্লোরিয়া টেলর। স্নায়ুর রোগে ভুগছিলেন তিনি। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ২০১১ সালে মরতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সেই মামলার নিষ্পত্তির আগেই ২০১২ সালে গ্লোরিয়া মারা যান। দ্বিতীয় মহিলা কে কার্টার অবশ্য আদালতের ভরসায় না থেকে সুইৎজারল্যান্ড চলে যান। কারণ সে দেশে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অধিকার বৈধ।
গ্লোরিয়া ও কে-র মৃত্যুর পরেও তাদের মামলা চলতে থাকে। আর সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ সুপ্রিম কোর্ট নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অধিকারকে বৈধতা দিয়েছে। এ বারেও কিন্তু কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের সরকার নিষ্কৃতি-মৃত্যুর বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু শেষমেশ তা ধোপে টেকেনি।
আদালতে চ্যালেঞ্জটা প্রথম ছুড়ে দিয়েছিলেন আইন-বিশেষজ্ঞ গ্রেস প্যাস্টিন। এ দিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর জয়ীর হাসি হেসে তিনি বললেন, “আজকের দিনটাই দারুণ ছিল...।”
তবে বৈধতা পেতে এখনও পেরোতে হবে পার্লামেন্টের চৌহদ্দি। একমাত্র পার্লামেন্টই সংবিধানের কোনও ফাঁকফোকড় দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে বাতিল করে দিতে পারে। জানালেন গ্রেস। তবে একই সঙ্গে বললেন, “সেটা হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।” এই পার্লামেন্টই কিন্তু আগে বেশ কয়েক বার নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অধিকার খারিজ করে দিয়েছিল। তবে সে বার মাথার উপর সুপ্রিম কোর্টের রায় ছিল না। তা ছাড়া ধর্মীয় সংগঠনগুলোর চাপও রয়েছে। প্রতিবন্ধী সংস্থাগুলোও বরাবরই চরম বিরোধিতা করে এসেছে। তাদের দাবি, এতে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর আড়ালে খুনের ঘটনা বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে কানাডায় গ্লোরিয়ার মতো রোগীদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা বলে দেবে সময়ই।