দুর্ঘটনা এড়াতে চালক আপ্রাণ চেষ্টা করলেও এয়ার এশিয়ার কিউজেড-৮৫০১ বিমানের সব বিপদঘণ্টা শেষ মুহূর্তে বেজে উঠেছিল একসঙ্গে। গত সপ্তাহেই জাভা সাগর থেকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বিমানটির ব্ল্যাক বক্স। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পরিবহণ নিরাপত্তা কমিটির তদন্তকারী অফিসারেরা বুধবার জানিয়েছেন, ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে ধরা পড়েছে বিপদঘণ্টার সেই তীব্র আওয়াজ। তাঁদের কথায়, শব্দ এতটাই জোরালো ছিল যে চালকদের গলার স্বরও চাপা পড়ে গিয়েছে তাতে।
গত ২৮ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে চাঙ্গি যাওয়ার পথে ১৬২ জন যাত্রী ও কর্মী সমেত জাভা সাগরে তলিয়ে যায় এয়ারবাস ৩২০-২০০। দুর্ঘটনার পর প্রায় এক মাস কাটতে চলল। এখনও অধিকাংশ যাত্রীর দেহই রয়ে গিয়েছে সমুদ্রের গভীরে। জঙ্গি আক্রমণ বা বিস্ফোরণের তত্ত্ব অবশ্য আগে খারিজ করে দিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। ইন্দোনেশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী এ দিন জানান, শেষ কয়েক মিনিট কিউজেড-৮৫০১ যে রকম খাড়া ভাবে এবং যে গতিতে পাড়ি দিয়েছিল, তা তার ক্ষমতার বাইরে। সাধারণ যাত্রিবাহী বিমানের প্রায় দু’-তিন গুণ বেশি গতি ছিল ওই বিমানটির।
ব্ল্যাক বক্স থেকে পাওয়া ডেটার বিশ্লেষণ এখনও পুরোপুরি করা যায়নি। তবে এরই মধ্যে তদন্তকারীরা ২০০৯-এর এয়ার ফ্রান্স দুর্ঘটনার সঙ্গে এই বারের বিমান ভেঙে পড়ার অদ্ভুত সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। ২০০৯ সালে রিও থেকে প্যারিসের পথে ৪৪৭ জন সওয়ারিকে নিয়ে অতলান্তিক সাগরে ভেঙে পড়ে এয়ারবাস এ৩৩০। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে তখন প্রবল ঝড়-বৃষ্টিকেই দায়ী করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিউডেজ-৮৫০১-ও বিষুবরেখার উপরে অশান্ত আবহাওয়ার কবলে পড়েছিল। এয়ার ফ্রান্সের ক্ষেত্রে বিগড়ে গিয়েছিল গতি নির্ধারক যন্ত্র। এয়ার এশিয়ার বিমানটিও যে গতিতে শেষ মুহূর্তে উড়েছিল এবং ঠিক তার পরেই যে ভাবে তা মাঝ আকাশে থমকে যায়, তাতেও যন্ত্র ভুল তথ্য দিচ্ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা।
পরে জানা গিয়েছিল, এয়ার ফ্রান্স দুর্ঘটনার জন্য চালকের ভুল ও যান্ত্রিক ত্রুটিসমান ভাবে দায়ী দু’টোই। গত বছরের শেষ বিমান বিপর্যয়ের পিছনেও তা-ই ছিল কি না, সেটা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ হলেই এ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটবে।