আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও পথ ছিল না। লাঞ্ছনা আর অপমান থেকে বাঁচতে তাই প্রথমে দু’হাতের শিরা কেটে গলায় দড়ি দিয়ে বাথরুমেই ঝুলে পড়ে বছর উনিশের তরুণী জ়িলান। ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া-র (আইএসআইএস) সেই ডেরাতেই একই কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিল আরও দুই বোন। শেষমেশ অবশ্য জঙ্গিদের খপ্পর থেকে পালিয়ে বাঁচে তারা। অভিযোগ, তাদের জোর করে জঙ্গিদের শয্যাসঙ্গী হতে বলা হয়েছিল।
এ সব বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। গত কয়েক মাসে ইরাকের ইয়াজিদি ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিশোরী-তরুণীদের অপহরণ করে অকথ্য যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ক্রমশই বাড়ছে আইএসের বিরুদ্ধে। নিশানায় মূলত ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে মেয়েরাই। প্রাণের ভয় দেখিয়ে জোর করে বিয়ে, ধর্ষণ প্রভৃতিই যেন আজ নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের একটা বড় অংশের কিশোরীদের। পালিয়ে বাঁচার বিকল্প পথ একটাই আত্মহত্যা।
ব্রিটেনের মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনােলের তরফে আজ এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। রিপোর্ট মোতাবেক, শুধু নিজেদের ডেরায় নয়, দেশের একটা বড় অংশ জুড়েই মেয়েদের উপর নানা বিধিনিষেধের ছড়ি ঘুরিয়ে আসছে এই জঙ্গি গোষ্ঠী। শিক্ষার পাশাপাশি কোপ পড়ছে মেয়েদের কর্মসংস্থানেও। মানবাধিকার সংগঠনটির এক কর্তার মতে, “মসুল শহরে দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের আধিপত্য কায়েম রেখেছে আইএস। যেন সমান্তরাল একটা সরকার চালাতে চাইছে। মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে আপত্তি, এমনকী তাদের স্বাধীন ভাবে ঘোরাফেরার উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চাইছে এরা।” দেশের মেয়েরা কার সঙ্গে মেলামেশা করবে, তা-ও কড়া নজরদারির মধ্যে রাখতে চাইছে আইএস। সেই কারণে তৈরি হয়েছে বিশেষ প্রমীলা বাহিনীও।
তবে অ্যামনেস্টি-র মতে, সব চেয়ে খারাপ ছবিটা আইএসের ডেরাতেই। কোনও ভাবে যে মেয়েরা গত কয়েক মাসে জঙ্গিডেরা থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছে, তাদেরই জনা চল্লিশের সঙ্গে কথা বলে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলে জানালেন সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ কর্তা ডোলাত্তেলা রোভেরা। জঙ্গিডেরায় জ়িলানের সঙ্গেই ছিলেন আরও বহু কিশোরী। তাদেরই এক জন জানায়, “ঘটনার দিন ওরা আমাদের কিছু পোশাক এনে দিয়ে বলল, ‘যাও স্নান করে এগুলো পরে এসো।’ পোশাকগুলো দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের দিয়ে ওরা অশালীন নাচ করাতে চাইছে। বাধ্য হয়েই আমরা সবাই স্নানে যাই। কিন্তু জ়িলান আর বেঁচে ফেরেনি।”
রিপোর্টে বছর ষোলোর কিশোরী রান্ডার কথাও উঠে এসেছে। তার জবানবন্দি অনুযায়ী, বাবার বয়সি এক জঙ্গিনেতা তাকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে এক দিনে দু’বার পরপর ধর্ষণ করে। সংগঠন কর্তাদের দাবি, শুধু জোর করে বিয়ে কিংবা ধর্ষণ নয়, কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চা-বাচ্চা মেয়েদের বেচেও দেওয়া হয়েছে জঙ্গিডেরা থেকে।