Manipur Violence

কে জানত যে, সেটাই তার শেষ ফোন

তখনই চারদিক থেকে জকুয়াডহরে হানা দেয় মার দুষ্কৃতীরা। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে উল্লাস করছিল তারা। দু’জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান।

Advertisement

এল উত্তম সিংহ (মণিপুরের প্রত্যক্ষদর্শী)

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০৯
Share:

বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে উল্লাস করছিল দুষ্কৃতীরা। —প্রতীকী চিত্র।

সে দিন ছিল ১১ নভেম্বর, নিঙ্গল চকৌবা। শাশুড়ির আমন্ত্রণে একমাত্র কন্যাকে নিয়ে আমার স্ত্রী বাপের বাড়ি যায়। জিরিবাম জেলার জাকুয়াডহরে এক কিলোমিটার দূরত্বে দুই বাড়ি। শ্যালিকা লাইস্রম হৈতম্বী সিংহ পারিবারিক বিবাদের দরুন দুই ছেলেকে নিয়ে মায়ের সঙ্গেই থাকে। আমি মেঘালয়ে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। কাজের চাপে এ বার নিঙ্গল চকৌবায় বাড়ি আসা হয়নি। একই কারণে বাড়ি আসতে পারেনি আমার শ্যালকও। সে মুম্বইয়ে থাকে। আমাদের অতি সাধারণ পরিবার। তবু নিঙ্গল চকৌবায় সবাই মিলে আনন্দ করি।

Advertisement

সে দিনও ৬৫ বছরের শাশুড়ি তাঁর তিন নাতি-নাতনিকে নিয়ে আনন্দ করছিলেন। দুই বোন ব্যস্ত ছিলেন রান্নাবান্নায়। তখনই চারদিক থেকে জকুয়াডহরে হানা দেয় মার দুষ্কৃতীরা। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে উল্লাস করছিল তারা। দু’জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। ফিরে যাওয়ার পথে আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে সবাইকে তুলে নিয়ে যায়। শাশুড়ি, স্ত্রী,শ্যালিকা, কন্যা ও শ্যালিকার দুই ছেলে, কাউকে ছাড়েনি।

বেলা ১২টা নাগাদ স্ত্রী ফোন করেছিল। তখন কাজে প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিলাম। ফোনটা ধরলেও তাকে বলার সুযোগ দিইনি। ‘কাজে আছি, পরে ফোন করব’ বলে রেখে দিই। সেটাই যে তার শেষ ফোন কে জানত! কাজ সেরে বিকাল ৪টেয় যখন ফোন করি, দেখি সুইচড অফ। আর সে মোবাইল অন হয়নি, কখনও হবেও না।

Advertisement

আমার শ্যালকেরও আমার মতোই অবস্থা। ওরা চার বোন, এক ভাই। মা-সহ দুই বোনকে একসঙ্গে হারাল সে। অন্য দুই বোন ইম্ফলে থাকে। সে দিন মায়ের ফোনেই দিন শুরু হয়েছিল তার। কিছু টাকা চেয়েছিলেন তিনি। তার অ্যাকাউন্টে ছিল পঁচিশ হাজার টাকা। পুরোটাই সে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আসতে না পারার আক্ষেপ থাকলেও মনে মনে আনন্দ হচ্ছিল, টাকা পেয়ে নিঙ্গল চকৌবা ভালই কাটবে পরিবারের।

কিন্তু সন্ধ্যার আগেই ফোন পাই আমরা। মেঘালয়ে আমি, মুম্বইয়ে শ্যালক। ছুটে আসি জিরিবামে। কিন্তু পাড়ায় ঢোকার উপায় নেই। সবাই বললেন, জিরিবামে আশ্রয় শিবিরে থাকতে। সেখানেই আছি। পাড়ার অন্যরাও একই শিবিরে। কিন্তু সবাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে। আর আমি শুধু অপেক্ষায়, কখন মৃতদেহ শনাক্ত করার ডাক পড়বে। দু’দফায় শিলচর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে গিয়ে এই কাজটাই করলাম। এখনও বসে আছি, কখন খবর আসবে, আরও এক মহিলার দেহ পাওয়া গিয়েছে। আর আমাকে গিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে, সে হৈতম্বীই কি না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement