Bangladesh

ধর্মনিরপেক্ষতা খারিজের পক্ষে ইউনূস সরকার

মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানালেন, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ বাসিন্দা যখন ইসলাম ধর্মের অনুসারী, রাষ্ট্রব্যবস্থার চরিত্রের সংজ্ঞায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ রাখা অর্থহীন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৬
Share:

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল ছবি।

নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে করা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করতে চেয়ে হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল। সেই মামলার সওয়াল করতে গিয়ে নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা সরাসরি বলে দিলেন বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি জানালেন, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ বাসিন্দা যখন ইসলাম ধর্মের অনুসারী, রাষ্ট্রব্যবস্থার চরিত্রের সংজ্ঞায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ রাখা অর্থহীন। সংশোধনীতে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর কথা বলা হয়েছে, যা ধর্মপালনের স্বাধীনতার পরিপন্থী। শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা করাও হয়েছিল এই সংশোধনীতে। সরকার চায় তা খারিজ করা হোক। সংবিধানে বাংলাদেশে যে সমাজতন্ত্রের কথা বলা হয়েছেতা-ও বাদ দেওয়ার কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

Advertisement

সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৭২-এ প্রবর্তিত বাংলাদেশের সংবিধানে সংশোধনী এনে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে তার বদলে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ২০১১-র ৩০ জুন এই পঞ্চদশ সংশোধনী এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ করেছিলেন, পাশাপাশি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ছেড়ে আবার ধর্মনিরপেক্ষতায় ফেরান বাংলাদেশকে। একই সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ বলে ঘোষণা করেন। হাই কোর্টে বুধবার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু এক জন ব্যক্তি সব কিছু করেছেন– এটি আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার ধারণা নয়।” তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার চায় শেখ মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ ঘোষণা বাতিল করা হোক। সম্প্রতি বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রকের দফতর থেকেও ‘ফ্যাসিবাদী নেতা’ আখ্যা দিয়ে মুজিবের ছবি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

২০০৫-এ খালেদা জিয়া সরকার মেয়াদ শেষে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পরে সেই সরকার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা করে। দুই প্রধান নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে বন্দি করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক চাপে দু’বছর পরে নির্বাচনের বন্দোবস্ত করতে হয় ওই সরকারকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের পরে ঘোষণা করে, আর কোনও অনির্বাচিত সরকারের হাতে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা তুলে দেবে না। সেই অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে তারা। এ দিন ইউনূস সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে জনগণ ও গণতন্ত্রের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে।” অন্য বিষয়গুলি নিয়ে অ্য়াটর্নি জেনারেল বলেন, “সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র নয়। আমরা ‘সমাজতন্ত্র’ বাদ দিতে চাই। ‘জাতির পিতা’ নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে জোর করে ঢুকিয়ে এমন করা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে।”

Advertisement

১৫ বছর এক টানা শাসন চালানোর পরে শেখ হাসিনা এ বছর ৫ অগস্ট গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে ভারতে চলে এসেছেন তিনি। সেখান থেকে দু’বার বিবৃতি দিয়েছেন তিনি, সর্বশেষ বিবৃতিটি দিয়েছেন দিন কয়েক আগে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে। কিন্তু এ ভাবে অন্য দেশে বসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দেওয়াকে বাংলাদেশ সরকার ভাল ভাবে দেখছে না বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র তৌফিক হাসান। তৌফিক জানিয়েছেন, ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনকে তাঁরা অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। তবে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement