bulgaria

ঋতুমতী হলেই বন্ধ স্কুল, এখানে রয়েছে বিয়ের বাজার, কুমারীদের মেলে মোটা কন্যাপণ

পণ পাওয়ার আশ্বাস থাকলে তবেই মেয়ের বিয়ে দিতে সম্মত হন অভিভাবকরা। যাযাবর এই সমাজে কন্যাপণ যে কোনও পরিবারের কাছে উপার্জনের উৎস। বিয়ের আসরে সেজেগুজে হাজির হয় কুমারীরা। হবু জীবনসঙ্গীকে খুঁজে নিতে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ১১:৪৯
Share:
০১ ১৪

রঙিন ঠোঁট পাউট করে সেলফি। হালফ্যাশনের পোশাক পরে বন্ধুদের সঙ্গে হৈ হৈ। এটাই চেনা ছবি অল্প বয়সি মেয়েদের মধ্যে। কিন্তু বিশ্বে বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে কুমারী বা অবিবাহিতা মেয়েদের দূরে থাকতে হয় সব রকম শখ শৌখিনতা থেকে। সে রকমই একটি দেশ বুলগেরিয়া।

০২ ১৪

অবশ্য এই দেশের সব জায়গায় যে এই ছবি, তা মোটেও নয়। এই দেশের একটি সম্প্রদায় হল ক্যালাইডঝি। এই গোষ্ঠি মূলত যাযাবর বা জিপসি। তাঁদের আর এক পরিচয় ‘রোমানি’ বা ‘রোমা’। জিপসি হলেও ধর্মীয় প্রাচীন রীতিনীতি মানে এরা।

Advertisement
০৩ ১৪

‘রোমানি’ বা ‘রোমা’ সম্প্রদায়ের মধ্যে এশীয় ও ইউরোপীয়, দুই জনজাতির বৈশিষ্ট্য বর্তমান। নৃতত্ত্ববিদদের ধারণা, সুদূর অতীতে আজকের রাজস্থান, হরিয়ানা ও পঞ্জাব এই অঞ্চলগুলি থেকে এই জিপসিদের উৎপত্তি। তার পর তাঁরা ছড়িয়ে পড়েন সারা বিশ্বে।

০৪ ১৪

‘ক্যালাইডঝি’ সম্প্রদায় সতর্ক ভাবে ইউরোপের চলতি খোলা হাওয়া থেকে নিজেদের সনাতন ও রক্ষণশীল রীতিনীতিকে রক্ষা করে এসেছে। এখন এই গোষ্ঠির প্রায় ১৮ হাজার মানুষ বাস করেন বুলগেরিয়ায়। তাঁদের গোষ্ঠির নিয়ম হল, কুমারী মেয়েরা ঋতুমতী হলেই তাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ।

০৫ ১৪

তাদের জীবনযাত্রার আরও একটি বিচিত্র বৈশিষ্ট্য হল, ‘বিয়ের বাজার’। এক বছরে চার বার বসে এই বাজার। তবে বাজার না হএকে আসর বলেই যথাযথ ভাবে বর্ণনা করা যায়। এখানে অবিবাহিত যুবকদের সঙ্গে দেখা হয় বিবাহযোগ্য কুমারীদের। তাঁরা নিজেদের জীবনসঙ্গী এবং জীবনসঙ্গিনী নির্বাচন করেন। সারা বুলগেরিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ক্যালাইডঝি সম্প্রদায় এসে মিলিত হন এই বিয়ের মেলায়।

০৬ ১৪

তার পরেই যে বিয়ে হয়ে গলে রূপকথার মতো, তা একেবারেই নয়। বরং এই পাত্রপাত্রী পছন্দের পরে শুরু হয় আসল পর্ব। এ বার আসরে অবতীর্ণ হন অভিভাবকরা। দু’পক্ষের অভিভাবকদের মধ্যে শুরু হয় দর কষাকষি।

০৭ ১৪

রীতিমতো পণ পাওয়ার আশ্বাস থাকলে তবেই মেয়ের বিয়ে দিতে সম্মত হন অভিভাবকরা। যাযাবর এই সমাজে কন্যাপণ যে কোনও পরিবারের কাছে উপার্জনের উৎস। বিয়ের আসরে সেজেগুজে হাজির হয় কুমারীরা। হবু জীবনসঙ্গীকে খুঁজে নিতে।

০৮ ১৪

পাত্রী কেনাবেচার এই বাজার নিয়ে কয়েক বছর আগে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন সুইডেনের মিলেন ল্যারসন এবং অ্যালিস স্টেইন। ছবি তৈরির আগে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন তাঁরা। উঠে এসেছে চমকে দেওয়ার মতো বহু তথ্য।

০৯ ১৪

কয়েক হাজার বছর ধরে এই যাযাবর গোষ্ঠীর বিয়ের বাজার বসার রীতি প্রচলিত। ইদানীং কিছুটা রাশ আলগা হয়ে খোলা বাতাস প্রবেশ করেছে। এর আগে পাত্রীদের তাঁদের নিজেদের পাত্র নির্বাচন করার সুযোগও থাকত না। পুরোটাই হত তাঁদের অভিভাবকদের নির্দেশে।

১০ ১৪

এই রীতি যে মেয়েদের জন্য অবমাননাকর, তা মনে করেন না এই সম্প্রদায়ের মানুষ। এমনকি, একুশ শতকে বুলগেরিয়ার মতো আধুনিক ইউরোপীয় একটি দেশে দাঁড়িয়ে ক্যালাইডঝি গোষ্ঠীর মেয়েরা সাজপোশাক করে এই বাজারে পা রাখতে দ্বিধা করে না। আশৈশব তাদের শেখানো হয়, এটাই সমাজের নিয়ম।

১১ ১৪

সাধারণত কুমারীদের রূপ ও গুণের উপর নির্ভর করেই নির্ধারিত হয় কন্যার ‘মূল্য’ বা কন্যাপণ। তিনশো থেকে পাঁচশো ডলার দাম পেয়েই থাকে কুমারীরা। কে কত কন্যাপণ দিল, বা কত কন্যাপণ পেল, সেটা এই সমাজে সামাজিক পরিচয়ের মাপকাঠিও বটে।

১২ ১৪

আরও একটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে কন্যাপণ। তা হল, কুমারিত্ব। ফলে বিবাহযোগ্য কন্যার কুমারী থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিয়ের বাজারে কোনও মেয়ে যদি তাঁর হবু জীবনসঙ্গীকে নির্বাচন করে উঠতে না পারেন, আশাহত হয়ে পড়েন তাঁর অভিভাবকরা।

১৩ ১৪

২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী বুলগেরিয়ায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ রোমানি বা জিপসি-র বসবাস। তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশ ক্যালাইডঝি সম্প্রদায়ের। রোমানিরা যে এখনও কঠোর ভাবে যাযাবর জীবন যাপন করে, তা নয়।

১৪ ১৪

অনেক ক্ষেত্রেই লোপ পেয়েছে জিপসি ঘরানার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ‘বিয়ের বাজার’ এখনও পালিত রীতি। তবে এই গোষ্ঠির আধুনিক প্রজন্মের যুবক যুবতীদের একাংশের মধ্যে এই রীতির বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে হলেও ক্ষোভ জমেছে। তাঁরা বিরোধিতাও করছেন। কিন্তু সার্বিক ভাবে ‘বিয়ের বাজার’ অবলুপ্ত হয়নি। কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন এই রীতি এখনও শাসন করছে ক্যালাইডঝি সম্প্রদায়ের বিয়ের ভাগ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement