পড়িমরি: ‘কান্ট্রি মিউজিক’ অনুষ্ঠানে বন্দুকবাজের হামলা থেকে বাঁচতে প্রাণ হাতে করে দৌড়। লাস ভেগাস ভিলেজে। এএফপি
গায়ক জেসন অ্যাল্ডিনের গিটারের পিছনে লুকোনো গুলির শব্দে প্রথমটায় অনেকে ভেবেছিলেন অনুষ্ঠানে বুঝি বাজি ফাটানো হচ্ছে! কিন্তু ভুল ভাঙে কয়েক সেকেন্ডে। গুলির আওয়াজ যেন থামছেই না। চোখের সামনে একে একে ঢলে পড়ছেন শ্রোতারা। লাস ভেগাসে কান্ট্রি মিউজিক ফেস্টিভ্যাল শেষের রাত নিমেষে বদলে গেল কান্না আর আর্ত চিৎকারে। ভিড় ঠেলে প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিকে পারছেন, ছুটছেন।
রবিবার রাতে লাস ভেগাস ভিলেজ এরিনার ওই অনুষ্ঠানে মঞ্চের কাছাকাছি ছিলেন র্যাচেল ডেকার্ফ। ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শোনা গেল তাঁর গলায়, ‘‘আমাদের সারি থেকে ছ’টা আসন পরেই মঞ্চ। গানের মধ্যে হঠাৎ ছন্দপতন। মানুষ পাগলের মতো ছুটছে।’’ তাঁর দাবি, অন্তত দশ-পনেরো মিনিট টানা গুলি চলেছে। কেউ কেউ অনুষ্ঠানের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করছিলেন। সেই ভিডিও-র মধ্যেই শোনা যায় গুলির শব্দ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্ত।
আরও পড়ুন: লাশের পাহাড় লাস ভেগাসে, হত ৫৮
অ্যাল্ডিনের ব্যান্ড কয়েক সেকেন্ডে বুঝে যায়, গণ্ডগোল হচ্ছে। মঞ্চ ছেড়ে দ্রুত সরে যান সবাই। শিল্পী জেসন অ্যাল্ডিন ইনস্টাগ্রামে পরে লিখেছেন, ‘‘আজকের রাতটা ভয়ঙ্করের চেয়েও বেশি কিছু। জানি না কী বলা উচিত। আমি আর দলের সবাই ঠিক আছি। প্রত্যেকের পাশে আছি। সুন্দর রাতটা এ ভাবে বিষাদময় হয়ে গেল ভেবে কষ্ট হচ্ছে।’’ অনুষ্ঠানে থাকা আর এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘গুলিবৃষ্টির মধ্যে যে যেখানে পেরেছে, আশ্রয় নিয়েছে। হামাগুড়ি দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে অনেকে। আমি আর আমার স্বামী নিজেদের গাড়ির দিকে দৌড়লাম। গিয়ে দেখি প্রাণ বাঁচাতে গাড়ির নীচে লোকজন ঢুকে পড়েছে।’’
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাইক ক্রঙ্ক তাঁর বন্ধুর বুকে গুলির তিনটি আঘাত দেখে হতভম্ভ হয়ে যান। কোনওমতে তাঁকে বাইরে এনে অ্যাম্বুল্যান্সের কাছে পৌঁছন। বন্ধুকে তাতে তুললেও আর এক অপরিচিত প্রাণ হারান ক্রঙ্কের কোলেই। সে অভিজ্ঞতা এখনও তাড়া করছে তাঁকে। মৃতদের মধ্যে আছেন ছুটিতে থাকা দুই পুলিশ অফিসার। সেনা ও পুলিশের বহু পদস্থ অফিসারই অনুষ্ঠানে ছিলেন। কর্তব্যরত দুই পুলিশ অফিসার জখম হয়ে হাসপাতালে। পর্যটকদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। হোটেল থেকে ভয়ে বেরোচ্ছেন না কেউ। এখানকার ম্যাককারান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছনোর কথা ছিল যে সব বিমানের, সেগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।