করাচির রাস্তায় মিছিলে শামিল মহিলারা। রবিবার। ছবি: এপি
নারী দিবসের আগ দিয়ে ইসলামাবাদ ও লাহৌরের আদালতে দুটি মামলা হয়েছিল। মামলাকারীদের দাবি, নারী দিবসের মিছিল বন্ধ করা হোক, কারণ তা ‘ইসলাম বিরোধী’। দু’টি মামলাই খারিজ হয়ে গিয়েছে। ইসলামাবাদের আদালত জানিয়েছে, এই দিবসকে ‘সুযোগ’ হিসেবে গ্রহণ করা হোক। ইসলামের নিয়ম অগ্রাহ্য করে সমাজে নারী-পীড়নের যে ধারাবাহিক ‘ঐতিহ্য’ ও ‘মানসিকতা’ চলে আসছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও ক্ষোভ প্রকাশ করার ‘সুযোগ’।
এর পরেও নারী দিবসের আগে পাকিস্তান জুড়ে এই দিনটি পালন না করার দাবি জোরদার হয়েছিল। কট্টরপন্থী সংগঠন ‘অ্যাসেম্বলি অব ইসলামিক ক্লেরিকস’-এর প্রধান ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা মৌলানা ফাজ়রুল রেহমান তাঁর সমর্থকদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন নারী দিবস উপলক্ষে কোনও মিছিলে অংশ না নেওয়ার জন্য। তাঁর মতে, এ সব মুসলিম সংস্কৃতির পরিপন্থী ও মানবাধিকারের নামে ‘অসভ্যতা ও অশ্লীলতার’ অজুহাত। এক সাংবাদিক রিম খুরশিদ বলেছেন, ‘‘বছরের পর বছর এই আন্দোলন বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অনলাইনে হেনস্থা করা হচ্ছে। তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে দেওয়া হচ্ছে।’’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশীয় শাখার প্রচারক রিমেল মোহিদিন অবিলম্বে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ও নেতৃত্ব দেওয়া মহিলাদের হেনস্থা বন্ধের ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভয়মুক্ত পরিবেশ প্রত্যেকের মানবাধিকার দাবি করার হক রয়েছে।’’
গত তিন বছর ধরে ৮ মার্চ পাকিস্তানে ‘অউরত মার্চ’ হচ্ছে। তাতে অংশ নেন হাজার হাজার মহিলা। পুরুষও। মূলত কম বয়সিরা। হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে প্রতিবাদ। গত বছর চোখে পড়েছে ‘ছেলেরাও বাড়িতে রুটি বানাতে শিখুক’ এমন লেখা। চোখে পড়েছে, ‘বিবাহবিচ্ছিন্ন ও সুখী’ এমন বার্তাও। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘গেল গেল’ রব উঠেছিল। পার্লামেন্টেও সে সময়ে হইচই হয় এ নিয়ে। সাংবাদিক রিম খুরশিদের কথা, ‘‘এই মিছিলগুলি পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে বড় ধাক্কা। অতীতে নারীবাদী আন্দোলন এ ভাবে পাক সমাজে চ্যালেঞ্জ ছোড়েনি। এটা নতুন।’’ গত বছর পাক পার্লামেন্টের সদস্য আব্দুল রশিদ এই প্রতিবাদের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের মা-বোনেরা রাস্তায় নেমেছেন, আমরা কেউই এটা মেনে নিতে প্রস্তুত নই।’’
আরও পড়ুন: এক্সপ্রেস বা মালগাড়ি, নারীর হাতে স্টিয়ারিং
পাক মানবাধিকার সংগঠনের এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, পাকিস্তানে ৫০ লক্ষ প্রাথমিক স্কুলের পড়ার বয়সি শিশু স্কুলছুট। ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায় ২১ শতাংশ মেয়ের। ‘‘বদল আসছে। আমরা হয়তো পৃথিবী কাঁপিয়ে দিতে পারছি না, বা আকাশ বিদীর্ণ করতে পারছি না, কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে’’, বলেছেন সমাজকর্মী তমসিন আহমের।