ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই, বিশ্বের বিভিন্ন উপদ্রুত এলাকায় শান্তি স্থাপনে নিরলস চেষ্টার কারণেই এই পুরস্কার।
এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেল বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম)। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, ক্ষুধার বিরুদ্ধে এই সংস্থার লড়াই, বিশ্বের বিভিন্ন উপদ্রুত এলাকায় শান্তি স্থাপনের জন্য নিরলস চেষ্টার কারণেই এই পুরস্কার। যুদ্ধ ও সঙ্ঘাতময় দুনিয়ায় ক্ষুধাকে হাতিয়ার করে যে সব শক্তি তাদের অভিসন্ধি চরিতার্থ করে, এই কর্মসূচির সংগ্রাম তাদের বিরুদ্ধেই।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি খাদ্য সহায়তার উদ্দেশ্যে গঠিত রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি শাখা। ৮৩টি দেশের ৯১.৪ লক্ষ মানুষকে খাদ্যের সংস্থানে সহায়তা করে থাকে এই সংস্থা। ১৯৬০ সালে ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অরগানাইজেশনের কনফারেন্সের পরে ১৯৬৩ সালে এই সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। আমেরিকার ‘ফুড ফর পিস’ প্রোগ্রামের ডিরেক্টর জর্জ ম্যাকগভার্ন এক বহুপাক্ষিক খাদ্য সহায়তা সংস্থার প্রস্তাব রাখেন। এরই ফল হল ১৯৬৩-তে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম-এর প্রতিষ্ঠা। প্রথমে তিন বছরের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে এই সংস্থা গঠিত হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা এবং ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশনের তত্ত্বাবধানে। ১৯৬৫ থেকে এটি একটি নিয়মিত সংস্থার রূপ পায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দান এবং সংস্থাগত ও ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তাতেই এই সংস্থা পরিচালিত হয়।
গত কয়েক বছরে এই কর্মসূচির আওতায় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল, ২০১০ সালে হাইতিতে ভূমিকম্পের সময়ে সেখানকার মহিলাদের মধ্যে খাদ্য বণ্টন। মহিলাদের হাতে খাদ্য তুলে দেওয়ার পিছনে যুক্তি ছিল, এভাবেই বিপর্যস্ত পরিবারগুলিতে খাদ্য যথাযথ উপায়ে পৌঁছবে। সেই সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম স্কুলগুলিতেও খাদ্য পৌঁছে দিতে থাকে। ৭১টি দেশ এই স্কুল-ফিডিং প্রোগ্রামে উপকৃত হয়। ২০১৫-য় ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ৮১টি দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে সমর্থ হয়। ২০১৭-এ জর্ডনের সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের মধ্যে খাদ্য বণ্টনে অগ্রণী ভূমিকা নেয় ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম। ২০২০-য় ইয়েমেনে বিপন্ন মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে সমর্থ হয় এই সংস্থা। বর্তমানে কোভিড-১৯ অতিমারিতে বিপন্ন জনগোষ্ঠীগুলির কাছেও আপৎকালীন ভিত্তিতে খাদ্য-সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম। রিপাবলিক অব কঙ্গো, উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনেও বিশেষ ভাবে সক্রিয় রয়েছে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম।
আরও পড়ুন: ভীমা-কোরেগাঁও হিংসায় গ্রেফতার ৮৩ বছরের মিশনারি স্টান স্বামী
আরও পড়ুন: চিনের সাহায্যে অধিকৃত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি বানাচ্ছে পাকিস্তান
ক্ষুধাকে যাতে কোনও কায়েমি স্বার্থ-প্রণোদিত শক্তি অস্ত্রে পরিণত করতে না পারে, সে দিকে সদা সতর্ক দৃষ্টি রেখেই পরিচালিত হয় ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম। ২০২০-র নোবেল শান্তি পুরস্কার সেই প্রচেষ্টারই স্বীকৃতি।