কাবুলের রাস্তায় মহিলাদের বিক্ষোভ। শনিবার। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
প্রতিবাদে-প্রতিরোধে উত্তাল আফগানিস্তান। তালিবদের কাবুল দখলের তিন সপ্তাহ পরেও। তালিবরাও প্রমাণ করেছে মহিলাদের উপর তাদের আচরণ এখনও বদলায়নি। আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘টোলো নিউজ’ জানাচ্ছে, দলে খুব ভারী না হলেও কাবুলে, হেরাটে তালিবদের গোঁড়া ইসলামি মতাদর্শের বিরোধিতা ও সমানাধিকারের দাবিতে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন মহিলারা। পথে নেমে। গত এক সপ্তাহে অন্তত বার তিনেক। কাবুল ও তার লাগোয়া এলাকায় শুক্র ও শনিবার পর পর দু’দিন। প্রতিবাদী মহিলাদের বাধা দিয়েছেন তালিব-রক্ষীরা। পথে নামা মহিলাদের হঠাতে ছোড়া হয়েছে কাদানে গ্যাস। বৈদ্যুতিক শক দিতে পারে এমন রাইফেল দিয়ে আঘাত করা হয়েছে প্রতিবাদী মহিলাদের। ধাক্কা মেরে তাঁদের রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। তালিবরা বন্দুকের ম্যাগাজিন দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করায় মাথা ফেটেছে এক মহিলার।
ও দিকে, তালিবদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এখনও সিংহবিক্রমে লড়ে যাচ্ছেন পঞ্জশির উপত্যকার তাজিক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। পঞ্জশির-সহ উত্তর আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় তালিবদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তাজিক, উজবেক, তুর্কমেনি-সহ বহু জাতিগোষ্ঠীর সম্মিলিত বাহিনী নর্দার্ন অ্যালায়েন্স।
সমাজমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া টোলো নিউজের তোলা ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, শনিবার কাবুল লাগোয়া এলাকায় মহিলাদের বিক্ষোভ মিছিলের ছবি। গোঁড়া মতাদর্শের বিরোধিতা, সমানাধিকার ও রাজনীতিতে এবং নতুন সরকারে সক্রিয় অংশগ্রহণের অধিকারের দাবিতে মহিলাদের মিছিল রুখে দিচ্ছেন তালিব-রক্ষীরা। এক মহিলাকে চিৎকার করে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমাকে মারছ কেন?” মিছিলটি যাচ্ছিল আফগান প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দিকে। সরকারি কর্মী সোরেয়া সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “শনিবার আমরা যখন আমাদের দাবি জানাতে যাচ্ছিলাম প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দিকে, তখনই তালিব-রক্ষীরা আমাদের বাধা দেয়। ওরা মারধর করে। আঘাত করে বৈদ্যুতিক শক দিতে পারে এমন রাইফেল দিয়ে। ধাক্কা মেরে মহিলাদের রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। তালিবরা বন্দুকের ম্যাগাজিন দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করায় মাথা ফেটে গিয়েছে একজনের।”
নাজরিস সাদাত নামে ওই রক্তাপ্লুত মহিলার ছবিও পরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। ওই সময় আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন নাজরিস।
মহিলাদের বিক্ষোভ মিছিলের উপর তালিবদের আক্রমণের ঘটনাটি অবশ্য স্বীকার করেনি তালিবান। তালিবদের কালচারাল কমিশনের প্রধান মহম্মদ জালাল বলেছেন, “ভিডিয়োটি সঠিক কি না জানা নেই। তবে ওই বিক্ষোভকারীরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই আইন ভাঙছিলেন। এঁরা অবশ্য সংখ্যায় খুবই সামান্য। আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার ০.১ শতাংশ।”
হেরাটে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা সিএনএন-কে জানিয়েছেন, তিনি যাতে বিক্ষোভ মিছিলে না যান সে জন্য তাঁকে খুনের হুমকি দিয়েছিল তালিবরা।