ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি।
গভীর সমুদ্র। বহু দূরে চোখে পড়ে সৈকত। নৌকার দুই মাঝি হঠাৎই দেখেন, কী যেন ভাসছে! ভেবেছিলেন কাঠের পাটাতন হবে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখেন, একটি টিউব দু’হাতে জড়িয়ে জলে ভাসছেন এক মহিলা।
গত শনিবার কলম্বিয়ার এই ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভোরবেলা মাছ ধরতে গিয়েছিলেন রোনাল্ডো ভিসবাল ও তাঁর বন্ধু। জলজ্যান্ত একটি মানুষকে ও-ভাবে ভাসতে দেখে এগিয়ে যান তাঁরা। ভিডিয়োয় দেখা যায়, তাঁরা চিৎকার করতে থাকেন, ‘হোলা’, ‘হ্যালো’। কিন্তু সাড়াশব্দ নেই। নৌকা সামনে নিয়ে যেতেও শরীরটা যেন প্রাণহীন। কোনও মতে টেনে তুলতেই যেন জীয়নকাঠি ছুঁল। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন মহিলা। আগে তাঁকে জল খাওয়ান রোনাল্ডো। জানতে পারেন, মহিলার নাম অ্যাঞ্জেলিকা গাইতান। বয়স ৪৬। আট ঘণ্টারও বেশি তিনি ও-ভাবেই ভেসেছেন সমুদ্রে। উদ্ধারের পরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘পুনর্জন্ম হল। ঈশ্বর চান না, আমি মরে যাই।’’
কিছুটা শান্ত হওয়ার পরে অ্যাঞ্জলিকা জানালেন, ২০ বছরের দাম্পত্য জীবন বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। স্বামী প্রায়ই গায়ে হাত তুলত। প্রথম বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে শুরু হয় অত্যাচার। বেশ কয়েক বার পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরেই পুলিশ ছেড়ে দিত স্বামীকে। আবার শুরু হত মারধর। ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে স্বামী মেরে মুখ ফাটিয়ে দেয়। এর পর আর স্থির থাকতে পারেননি অ্যাঞ্জেলিকা। বাড়ি ছেড়ে পালান। সেই থেকে বাড়ির কেউ তাঁর খোঁজ জানত না। ছ’মাস রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন। শেষে একটি আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই হয়। কিন্তু সেই আশ্রয়ও যায়। অ্যাঞ্জেলিকা বলেন, ‘‘এর পর বেঁচে থাকার ইচ্ছে ছিল না। সব কিছু শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম।’’ এর পরই সমুদ্রে ঝাঁপ দেন তিনি। এ বারে হয়তো অ্যাঞ্জেলিকার জীবন বদলাবে। তাঁর বোন ও মেয়ে অর্থের বন্দোবস্ত করছে। মেয়ে বলেছে, ‘‘দু’বছর ধরে মাকে খুঁজেছি। আর কষ্ট পেতে দেব না।’’