বন্যা ও ডেঙ্গির প্রকোপে ত্রাহি রব উঠেছে বাংলাদেশে। এক দিকে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও কুশিয়ারা নদ-নদীর জলের ঢলে দেশের উত্তর ও মধ্যাংশের নতুন নতুন এলাকা ভাসছে, অন্য দিকে প্রতিদিন গড়ে ৬৫০ জন করে নতুন ডেঙ্গির রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। সরকারি হিসেবেই দেশে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। ঢাকা পৌরসভা জানিয়েছে, প্রচলিত ওষুধে মশা মরছে না। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দু’সপ্তাহে বন্যা নতুন নতুন এলাকায় যেমন ছড়িয়েছে, তেমনই জলে ভেসে, সাপের কামড়ে এবং জলবাহিত নানা অসুখে মৃতের সংখ্যা ১১৯। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় জামালপুরে মারা গিয়েছেন ৩৩ জন, গাইবান্ধায় ১৭ জন, নেত্রকোণায় ১৬ জন, টাঙ্গাইলে ৭ জন, সুনামগঞ্জে ৫ জন এবং বগুড়া ও লালমণিরহাটে ৪ জন করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর খবর এসেছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও। বন্যা নিয়ন্ত্রণের সরকারি অধিদফতর জানিয়েছে, সব চেয়ে বেশি ৮৩ জন মারা গিয়েছেন জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে। ডায়ারিয়ার মতো পেটের রোগের শিকার প্রায় ১২ হাজার মানুষ। সরকারি উদ্যোগে নৌকা ও স্পিড বোটে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। তা নিয়ে কোথাও কোথাও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলেও, সরকারি কর্মীরা সপ্তাহের ছুটি বাতিল করে কাজ করে চলেছেন।
আবহাওয়া বিভাগ জানাচ্ছেন, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে নেমে আসা নদীর জলে বন্যার শুরু হলেও তার পরে প্রবল বৃষ্টিতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বহু এলাকা থেকে জল নেমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মধ্যাংশে নতুন নতুন এলাকা ভাসছে। বাড়ছে ভাঙনের ঘটনাও।
বন্যার পাশাপাশি ঢাকা ও অন্য কয়েকটি শহরে ডেঙ্গিও ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্কুল কলেজের ছাত্র, সরকারি কর্মী ছাড়া কয়েক জন চিকিৎসকেরও মৃত্যু হয়েছে এই রোগে। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকায় কর্তব্যরত রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংস্থার আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো-ও। কয়েক দিন জ্বরে ভোগার পরে রক্ত পরীক্ষা করে তাঁর ডেঙ্গি নিশ্চিত হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সব চেয়ে বেশি, ৬৮৩ জন ডেঙ্গি রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন ২৩৩ জন। রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালে ৩৭৪ জন।