ছবি: এএফপি।
৭২ ঘণ্টায় প্রায় ১১ হাজার বজ্রপাত! বাজ পড়ে বিভিন্ন জায়গায় ৩৭০টি আগুন লাগার ঘটনা। আর তার জেরে করোনার চোখ রাঙানির মধ্যেই আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ায় ঘরছাড়া কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ। আগুন ক্রমে বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে বিপত্তি আরও বাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগুনের গ্রাসে প্রদেশটির কমপক্ষে ৫০০,০০০ একর অঞ্চল। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত খবর, বেশ কয়েকটি বাড়ি-সহ আগুনে পুড়ে গিয়েছে মোট ৪৮০টি ভবন। আহত হয়েছেন ৩৩জন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক দমকলকর্মীও। আগুনের কবলে পড়ে মোট পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। তাঁদের মধ্যে দমকলের হেলিকপ্টারের এক পাইলট ছাড়াও রয়েছেন একাধিক উদ্ধারকর্মী।
দমকল সূত্রের খবর, আগুন প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে। বিশেষত বনাঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় লাগা আগুন একসঙ্গে মিশে গিয়ে আরও ভয়াবহ চেহারা নিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন দমকলকর্তারা। ঘণ্টায় ৭০০ থেকে ১০০০ একর পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়ছে! বজ্রপাতের জেরে এতগুলি অঞ্চলে আগুন লেগেছে যে আলাদা আলাদা করে সব ক’টির হিসেব রাখতে এলাকা বিভাজন করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে ‘লাইটনিং কমপ্লেক্স’ হিসেবে চিহ্নিত করে কাজ করছেন দমকলকর্মীরা।
পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে তা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংস্থানের জোগানে টান পড়তে পারে বলে শঙ্কিত স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তারা। তিনি ‘সরকারি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে আছেন’ বলে উল্লেখ করতে শোনা গিয়েছে ক্যালিফর্নিয়ার গর্ভনর গ্যাভিন নিউসমকেও। যদিও সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে উৎসাহী নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিদ্রুপ এবং অনীহাই শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়।
অত্যাধিক উষ্ণতা এবং আর্দ্রতার জেরেই এই দুর্যোগ বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। তাঁদের সতর্কবার্তা, আগামী দিনেও আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে দাবানলের শিকার হতে পারে ক্যালিফর্নিয়া। এই পরিস্থিতিই নাকি এখন এই অঞ্চলে ‘নিউ নর্মাল’ হয়ে দাঁড়াতে চলেছে, মত বিশেষজ্ঞদের। সতর্কতা জারি করা হয়েছে নেভাডা এবং অ্যারিজ়োনাতেও। অন্য দিকে আবহবিদদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া। তা সবচেয়ে বেশি ক্যালিফর্নিয়ার বে অঞ্চলে। বায়ুমানের নিরিখে সবচেয়ে নীচের দিকে থাকা ভারত এবং চিনের বিভিন্ন অঞ্চলকেও যা ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি একাধিক ওয়েবসাইটের।
বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলির মানুষজনকে। তাঁদের মধ্যেই এক জন ৬৯ বছরের বৃদ্ধা চেরিল জারভিসের কথায়, ‘‘করোনার পাশপাশি তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে তো লড়াই চলছিলই, এখন আবার এই আগুন!’’ কমিউনিটি সেন্টারে অত্যাধিক ভিড়। করোনা আবহের জেরে তাই মেয়েকে নিয়ে আপাতত নিজেদের গাড়িতেই ঘুমোচ্ছেন ওই বৃদ্ধা।