টর্নেডোর তাণ্ডবে ছত্রখান হয়ে গিয়েছে আমেরিকার ৪টি স্টেটের বিশাল একটি অংশ। ছবি- রয়টার্স।
টর্নেডোর ঝাঁক দেখল আমেরিকা।
একেবারে ঝাঁক বেঁধে ধেয়ে এল একের পর এক টর্নেডো। এসে আছড়ে পড়ল আমেরিকার ৬টি প্রদেশের উপর। সরকারি হিসাবে এখনও পর্যন্ত ঝাঁক বেঁধে আসা টর্নেডো কেড়ে নিয়েছে ৮৪ জনের প্রাণ। শুধু কেনটাকিতেই মৃতের সংখ্যা ৭০-এর বেশি।
শুক্রবার রাতজুড়ে পশ্চিম উপকূল লাগোয়া প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ধেয়ে এসে ৩০টিরও বেশি টর্নেডো আছড়ে পড়ে আমেরিকার ৬টি স্টেট— আরকানসাস, ইলিনয়, কেনটাকি, মিসৌরি, মিসিসিপি ও টেনেসিতে। যা আমেরিকার ইতিহাসে ‘একটি বিরলতম ঘটনা’ বলে মনে করছেন আবহবিদরা। আমেরিকার ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের তরফে জানানো হয়েছে, ‘এই ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে ঠাঁই পাবে।’
আমেরিকার দৈনিক ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানিয়েছে, ধেয়ে আসা ৩০টিরও বেশি টর্নেডোর মধ্যে সম্ভবত একটিই ছিল সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী। তার পথও ছিল দীর্ঘতম। সেই টর্নেডোর তাণ্ডবে ছত্রখান হয়ে গিয়েছে আমেরিকার ৪টি স্টেটের বিশাল একটি অংশ। তাদের মধ্যে রয়েছে আরকানসাসের উত্তর-পূর্ব ও মিসৌরির দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত। রয়েছে টেনেসির উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত ও কেনটাকির পশ্চিম দিকটি। আবহবিদরা বলছেন, ‘‘চারটি স্টেটের মধ্যে দিয়ে ওই টর্নেডো অতিক্রম করেছে ৪০০ কিলোমিটার বা ২৫০ মাইল পথ। এই দূরত্ব যদি সত্যি সত্যিই কোনও একটি টর্নেডো পেরিয়ে থাকে শুক্রবার রাতে, তা হলে তা আমেরিকার ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা। এর আগে আমেরিকায় কোনও একটি বিধ্বংসী টর্নেডো এতটা পথ পেরতে পারেনি।’’
এ ভাবেই ধেয়ে এসেছে একের পর এক টর্নেডো। যার তাণ্ডবে ছত্রখান হয়ে গিয়েছে আমেরিকার ৪টি স্টেটের বিশাল একটি অংশ। ছবি- রয়টার্স।
আবহবিদরা জানাচ্ছেন, আমেরিকায় সবচেয়ে বিধ্বংসী টর্নেডোগুলি হয় সাধারণত এপ্রিল ও মে মাসে। শক্তিতে দুর্বল টর্নেডোগুলি আছড়ে পড়ে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে। কিন্তু এ বার সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হল। অন্তত গত সাত দশকে যা ঘটতে দেখেনি আমেরিকা।
আবহবিদদের আশঙ্কা, প্রকৃতির এই তাণ্ডব সম্ভবত শেষ হয়নি এখনও। কারণ, টর্নেডোর গতিপথ এগিয়ে গিয়েছে, ক্রমশ এগিয়ে চলেছে আমেরিকার পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের দিকে। ফলে, দীর্ঘ পথ পেরিয়ে শক্তি কিছুটা খোয়ালেও বিধ্বংসী টর্নেডোর ঝাঁক আগামী দু’-তিন দিন তাণ্ডব চালাতে পারে দেশের আরও কয়েকটি স্টেটে।
শক্তিতে দুর্বল টর্নেডোগুলি আছড়ে পড়ে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে। কিন্তু এ বার সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হল। অন্তত গত সাত দশকে যা ঘটতে দেখেনি আমেরিকা। ছবি- রয়টার্স।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টর্নেডোয় বিধ্বস্ত স্টেটগুলির গভর্নরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন টেলিফোনে। প্রয়োজনে তাঁর প্রশাসনের তরফে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব রকম সাহায্য ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ারও আশ্বাস তিনি দিয়েছেন বলে ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘‘আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী টর্নেডো-হানাগুলির অন্যতম শুক্রবার রাতের ঘটনা।’’
টর্নেডোর শক্তি কতটা ছিল তা বোঝানোর জন্য একটি ঘটনার উল্লেখ করতেই হচ্ছে। টর্নেডো একটি বাড়ির ঘরের দেওয়ালে ঝোলানো এক পারিবারিক ফোটোকে দিগ্বিদিকশূন্য করে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে ১৫০ মাইল দূরে। কেনটাকির ডসন স্প্রিংস থেকে ফোটোটিকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে ইন্ডিয়ানার নিউ অ্যালবানিতে।
টর্নেডো একটি বাড়ির ঘরের দেওয়ালে ঝোলানো এক পারিবারিক ফোটোকে দিগ্বিদিকশূন্য করে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে ১৫০ মাইল দূরে। ছবি- রয়টার্স।
নিউ অ্যালবানির জনৈক বাসিন্দা কেটি পোস্টেন তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘হঠাৎ দেখি আমার গাড়ির সামনের কাচে (‘উইন্ডশিল্ডে’) একটা ফোটো ঝুলছে। ১৯৪২ সালের তোলা। নীচে তারিখ লেখা ছিল। সেই ছবিতে এক মহিলা শিশু কোলে নিয়ে বসে রয়েছেন। দেখে মনে হল, এটা কোনও পারিবারিক ফোটো। কিন্ত তা আমার গাড়ির উইন্ডশিল্ডের উপর এসে এঁটে বসল কী ভাবে? কেউ কি তা রেখে গিয়েছে? কৌতূহলে ফোটোটি দিয়ে আমি ফেসবুক পোস্ট করি। সেই পোস্ট দেখে কিছু ক্ষণ পর কেনটাকির ডসম স্প্রিংস থেকে কোল সোয়াৎজেল আমাকে ফেসবুকে জানান, এটি তাঁর বাবার ঠাকুমার ছবি। টর্নেডো ঘরের দেওয়াল থেকে নামিয়ে তা উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে ১৫০ মাইল দূরে ইন্ডিয়ানার নিউ অ্যালবানিতে। সেঁটে দিয়েছে আমার গাড়ির উইন্ডশিল্ডে। তা হলে বুঝু্ন, কী তাণ্ডব চালিয়েছে টর্নেডো!’’
সরকারি সূত্রের খবর, টর্নেডোয় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেনটাকি। ৭০ জনেরও বেশি মারা গিয়েছেন শুধু কেনটাকিতেই। মেফিল্ড এলাকায় প্রায় কোনও গাছই আর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে নেই। ক্ষতি হয়েছে বহু বাড়ির। প্রচুর ক্ষতি হয়েছে পশ্চিম ইলিনয়ে অ্যামাজনের গুদামেরও।