ছবি: এএফপি।
গত বছর নভেম্বরে চিনের উহানে প্রথম ধরা পড়ে নভেল করোনাভাইরাস। তার পর থেকে এক বছরে ছ’কোটির উপরে সংক্রমণ। সাড়ে ১৪ লক্ষ মৃত্যু। মারণ সংক্রমণের জন্য বারবার কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছে চিনকে। কখনও ‘চিনা ভাইরাস’, কখনও ‘চিনা ফ্লু’, কখনও ‘উহান ভাইরাস’ নাম দিয়ে প্রকারান্তরে দায়ী করা হয়েছে চিনকে। চিন আবার জাতিবৈষম্যের পাল্টা অভিযোগ তুলেছে। এ বার তারা প্রমাণ করতে তৎপর— করোনাভাইরাসের উৎস চিন নয়। চিনের আগেই অন্য কোনও দেশ থেকে ছড়িয়েছিল ভাইরাসটি।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ভাবে খবর করা শুরু করেছে চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম। তাদের বক্তব্য, উহানের বাজারে মাংসের মধ্যে যে ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, সেটাই উৎস নয়। গত বছর ডিসেম্বরের আগেই চিন সীমান্তের বাইরে ভাইরাসটি ছড়িয়েছিল। চিনের প্রথম সারির সংবাদপত্র ‘পিপলস ডেলি’ গত সপ্তাহে একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করে, ‘‘যা যা তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, সেই সব থেকে স্পষ্ট, চিনের উহান থেকে কোনও মতেই সংক্রমণ শুরু হয়নি।’’ চিনের ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর প্রাক্তন প্রধান এপিডিমিয়োলজিস্ট জ়েং গুয়াং বলেন, ‘‘উহানে প্রথম ভাইরাসটি চিহ্নিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা বলে উহান এই ভাইরাসের উৎস নয়।’’
চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রও বলেন, ‘‘ভাইরাসটি কোথায় প্রথম চিহ্নিত হয়েছে, আর ভাইরাসটি কোথায় প্রথম অন্য প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে, দু’টো বিষয় যে আলাদা, সেটা স্পষ্ট হওয়া দরকার। চিনে প্রথম চিহ্নিত হয়েছে মানেই যে চিন এর উৎস, তা নয়। উৎস কোথায় সেটা খুঁজে দেখতে হবে। হয়তো একাধিক দেশ, একাধিক অঞ্চল এর উৎস।’’ এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্রও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘ল্যানসেট’-এ জমা দিয়েছে চিন। এখনও অবশ্য রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়নি। রিপোর্টের সারমর্ম এই যে— ‘‘মানুষ থেকে মানুষের দেহে সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ উহানে প্রথম হয়নি।’’ রিপোর্টে এ-ও দাবি করা হয়েছে, প্রথম সংক্রমণ হয়তো ভারতীয় উপমহাদেশে হয়েছে।
আরও পড়ুন: টিকাকরণে বিশেষজ্ঞেই ভরসা রাখছেন বাইডেন
চিনের অন্যের ঘাড়ে দায় ঠেলা শুরু ভারতকে দিয়ে নয়। এর আগে তারা দাবি করেছিল, ইউরোপে প্রথম ছড়িয়েছিল ভাইরাস। সেখান থেকে ভাইরাসটি চিনে আসে। চিনের এ ধরনের দাবি নস্যাৎ করে দিচ্ছেন আমেরিকা-ইউরোপের বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ‘জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ বিষয়ক বিভাগের ডিরেক্টর মাইক রায়ান গত সপ্তাহেই জানিয়েছেন, চিন এ রোগের উৎস নয়, এমন অনুমান একেবারেই ‘ভিত্তিহীন’।
চিনের দাবি হয়তো তবু একটু গুরুত্ব পেত, যদি অন্য কেউ তাদের সমর্থন করত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো বাধা হচ্ছে চিন নিজেই। কোনও নিরপেক্ষ তদন্তকারী দলকে সাহায্য করছে না চিন। বেশ কয়েক মাস আগে উহানে একটি তদন্তকারী দল পাঠিয়েছিল হু। কিন্তু উহানের সেই খাবারের বাজারে দলটিকে ঢোকার অনুমতি দেয়নি চিনা প্রশাসন। হু-এর একটি নতুন প্রতিনিধি দল চিনে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তারাও কবে চিনে ঢোকার অনুমতি পাবে, তার ঠিক নেই।
আরও পড়ুন: লকডাউনে কমবয়সিদের উৎকণ্ঠাজনিত সমস্যা দ্বিগুণ, দাবি সমীক্ষায়
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কোভিড-১৯-কে খতম করতে, কোথায় এর উৎস, সেটা জানা জরুরি। যাতে পরবর্তী অতিমারি আটকানো যায়, তার জন্যেও বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পশ্চিমি বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিন এ সব নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয়। বরং তাদের নজর, কার ঘাড়ে দোষ চাপানো যায়!