গ্রিন কার্ড জট কাটাতে সক্রিয় মার্কিন সেনেট— ফাইল চিত্র।
কমর্সূত্রে আমেরিকা গিয়ে এইচ১বি অথবা এল-এর মতো কোনও সাময়িক ভিসা নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন বছরের পর বছর। কিন্তু পাকাপাকি ভাবে সেখানে থাকার ছাড়পত্রের জন্য গ্রিন কার্ডের আবেদন জানিয়েও ফল মেলেনি। এমন উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার সেই পরম্পরার অবসান ঘটাতে মার্কিন কংগ্রেস এসেছে নতুন বিল। বুধবার সেই বিল নিয়ে বিতর্কে অনাবাসী ভারতীয়দের প্রসঙ্গ তুলে নতুন মাত্রা দিলেন রিপাবলিকান সেনেটর মাইক লি। তাঁর কথায়, ‘‘এখন কোনও ভারতীয় স্থায়ী ভাবে আমেরিকায় থাকার ইবি-৩ গ্রিন কার্ড পাওয়ার আবেদন জানালে তাঁকে ১৯৫ বছরেরও বেশি অপেক্ষা করতে হতে পারে! এমন আইনি বন্দোবস্তের ইতি টানা প্রয়োজন।’’
গ্রিন কার্ড (সরকারি পরিভাষায়, পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট কার্ড) পাওয়ার সময়সীমা কমানোর উদ্দেশ্যে গত বছর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভে পাশ হয় ‘দ্য ফেয়ারনেস অফ হাই-স্কিল্ড ইমিগ্র্যান্টস অ্যাক্ট, ২০১৯’ (সংক্ষেপে এইচআর-১০৪৪ আইন)। বর্তমানে, প্রতি বছর নির্দিষ্ট কোনও দেশ থেকে আসা নাগরিকদের মধ্যে মাত্র সাত শতাংশ পরিবার ভিত্তিক ভিসা পান। নতুন বিলে সেই সীমা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এখনকার ভিসানীতি অনুযায়ী ভিনদেশি দক্ষ কর্মীদের জন্য বছরে ১ লক্ষ ৪০ হাজার পর্যন্ত গ্রিন কার্ড ইস্যু করে মার্কিন সরকার। এই পেশা ভিত্তিক ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোরও প্রস্তাব রয়েছে নয়া বিলটিতে।
ডিক ডারবিন, কমলা হ্যারিস, মাইক লির মতো সেনেটরদের তৈরি করা বিলের খসড়াকে সমর্থন জানিয়েছে আমেরিকার বসবাসকারী ভারতীয়দের বিভিন্ন সংগঠন। ২০১৯ অর্থবর্ষে অনাবাসী ভারতীয়দের মধ্যে ৯০০৮ জন ইবি-১ (ক্যাটেগরি-১), ২,৯০৪ জন ইবি-২ (ক্যাটেগরি-২) এবং ৫,০৮৩ জন ইবি-৩ (ক্যাটেগরি-৩ গ্রিন কার্ড) ভিসা পেয়েছেন। নতুন আইন চালু হলে তা অনেকটাই বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: ‘ভারতের শক্তি চিনকে বোঝানোর দরকার ছিল’, ফের মোদীকে বিঁধলেন রাহুল
মাইক এদিন বলেন, ‘‘শুধু অভিবাসী কর্মী নন, বর্তমান ভিসা নীতিতে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মও চূড়ান্ত অবহেলিত হবে। কারণ দীর্ঘ প্রতীক্ষা যখন শেষ হবে, ততদিনে ওই কর্মীর আর চাকরি থাকবে না। ফলে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের গ্রিন কার্ডের আবদেনও স্বাভাবিত ভাবেই খারিজ হয়ে যাবে।’’ তাঁর অভিযোগ, গ্রিন কার্ডের দীর্ঘ প্রতীক্ষার সময় অভিবাসী কর্মী এবং তাঁদের পরিবার কোনও সরকারি সুবিধা পান না। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হবেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: ‘আমেরিকার আস্থা অর্জন করতে পেরেছে ভারত’, জানালেন মার্কিন বিদেশসচিব
ডারবিনও এদিন অনাবাসী ভারতীয় কর্মী এবং তাঁদের সন্তানদের স্বার্থরক্ষার আবেদন জানান সেনেট সদস্যদের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘অনাবাসী ভারতীয়রা গ্রিন কার্ডের প্রতীক্ষায় বছরের পর বছর কাজ করছেন। নিজেদের পাশাপাশি তাঁদের পরিবারের জীবনও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকারি সাহায্য না মেলায় তাঁদের সন্তানদের শিক্ষাও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। অভিবাসীদের সন্তানেরা যাতে নির্বাসিত জীবন যাপনে বাধ্য না হন, তা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আমেরিকায় বসবাসকারী শিশুদের এ ভাবে শাস্তি দিতে পারি না।’’