(বাঁ দিকে) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি এবং (ডান দিকে) বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: সংগৃহীত।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রশ্নে ঘোষিত ভাবেই ভারসাম্যের নীতি নিয়ে চলছে ভারত। আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমেই চলতি সঙ্কটের নিরসন হবে, এ কথা বারবার বলা হচ্ছে বহুপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে জি২০-র শীর্ষ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানোর সম্ভাবনা কম। বৃহস্পতিবার সরকারের ৯ বছর পূর্তির সাংবাদিক বৈঠকে এই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “জি২০ শুধুমাত্র এই গোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য। আমরা এখনও অতিথি তালিকাটি খতিয়ে দেখিনি, কেউ আমাদের এই নিয়ে কিছু বলেননি।”
অথচ মে মাসেই জাপানের হিরোশিমায় জি-৭ সম্মেলন উপলক্ষে এসেছিলেন জ়েলেনস্কি। তাঁর সঙ্গে পার্শ্ববৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদী। এপ্রিলে সে দেশের উপবিদেশমন্ত্রী এমাইন ঝাপারোভা দিল্লিতে আসেন। তাঁর সেই সফরের উদ্দেশ্যই ছিল জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। যদিও তাঁর প্রস্তাবে সে দিন কোনও পাকা প্রতিশ্রুতি দেয়নি ভারত।
স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠছে, আলোচনা এবং কূটনীতির সবচেয়ে বড় জায়গা হয়ে উঠতে পারে জি২০-র মঞ্চ। সেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থাকবেন এটাই কাম্য হওয়ার কথা ভারতের। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই নিয়ে বিশেষ উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না কেন সাউথ ব্লককে?
সূত্রের বক্তব্য, জি২০ সভাপতিত্ব করার পালা এলে ভারত সরকার তা নিয়ে গত এক বছর ধরে বিভিন্ন স্তরে প্রচার করেছে। এই সম্মেলনকে মোদীর বিদেশনীতির একটি বড় মাইলফলক হিসাবে দেখানো হয়েছে গোটা দেশে। কিন্তু যতটা প্রচার হয়েছে এখনও পর্যন্ত তার ফল খুব একটা চাক্ষুষ করা যায়নি। এর আগে জি২০-র বিদেশমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যৌথ বিবৃতিতে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি কোনও ক্ষেত্রেই। তার কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের ছায়া খুবই গভীর হয়ে যৌথ ঐক্যের পথ ঢেকে দিচ্ছে বারবার। রাশিয়া এবং আমেরিকা —এই দুই যুযুধান পক্ষ রয়েছে জি২০-তে। ইউক্রেন নিয়ে তীব্র সংঘাত কোনও যৌথ বিবৃতি এখনও তৈরি করতে দেয়নি। ভারতের আশঙ্কা রয়েছে সেপ্টেম্বরের শীর্ষ সম্মেলনেও একই পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে জি২০-কে কেন্দ্রে রেখে ভারতের এই ‘বিশ্বগুরু’র ভাবমূর্তি কিছুটা ম্লান হয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিজে এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হলে এবং সশরীরে উপস্থিত থাকলে মতবিরোধ এবং কূটনৈতিক বিভাজন আরও প্রকাশ্যে চলে আসবে বলেই আশঙ্কা করছে মোদী সরকার।