প্রায় এক মাস ব্যাপী সাংহাইয়ের জনজীবন সম্পূর্ণ স্তব্ধ ফাইল ছবি।
খাদ্য, পানীয় চেয়ে আবাসনের জানলা দিয়ে বাসিন্দাদের চিৎকার। শিশুর কান্না। বয়স্ক পিতার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারা যুবতীর হাহাকার। চুম্বকে, এটাই এখন চিনের বাণিজ্যিক রাজধানী সাংহাইয়ের ছবি। করোনা রুখতে কঠিনতম লক়ডাউন যেন ফাঁস হয়ে ক্রমশ চেপে বসছে প্রাণবন্ত এই মহানগরের গলায়। আড়াই কোটি জনসংখ্যার সাংহাইয়ের এই খণ্ডচিত্রই এখন আগুন জ্বালছে চিনের ইন্টারনেটের আকাশে।
প্রায় এক মাস ব্যাপী সাংহাইয়ের জনজীবন সম্পূর্ণ স্তব্ধ। ‘ভয়েসেস অব এপ্রিল’ নামে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রতি ঘুরছে চিনের নেটমাধ্যমে। সেখানেই উঠে এসেছে একের পর এক এমন ঘটনার ছবি। যে সাংহাইকে বিশ্বের অন্যতম কর্মব্যস্ত নগরী হিসেবে মনে করা হয়, সেখানে এখন শ্মশানের স্তব্ধতা। ঘরে থাকতে থাকতে ফুরোচ্ছে খাবার। কমছে জলের যোগান। এমনকি প্রয়োজনে মিলছে না জীবনদায়ী ওষুধও। এ ভাবেই আড়াই কোটি মানুষকে দিনের পর দিন ঘরবন্দি করে চলছে লাল চিনের করোনা নিধন কর্মসূচি!
‘ভয়েসেস অব এপ্রিল’ ৬ মিনিটের তথ্যচিত্রটি যাঁরা তৈরি করেছেন, গত শুক্রবার তাঁরা ‘উইচ্যাট’-এ তা দিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছে প্রস্তুতকারীদের নিজেদের বক্তব্য। তাঁরা বলছেন, ‘‘সাংহাইয়ে কোভিড সংক্রমণ গতি পাওয়ার পর লকডাউন জারির এক মাস কাটতে চলল। আমরা এমন অনেক মানুষ দেখেছি, যাঁরা এর বিরুদ্ধে নেটমাধ্যমে গর্জে উঠেছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল, তাঁরা সবাই কিছু দিনের মধ্যেই কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলেন! এটা ঠিক, কিছু কিছু ব্যাপার হয়তো না ঘটলেই ভাল হত। কিন্তু যা ঘটছে, তা থেকে যেন আমরা বিস্মৃত না হই।’’
এই তথ্যচিত্র নেটমাধ্যমে ঘুরতেই সতর্ক হয় প্রশাসন। তড়িঘড়ি তা তুলে নেওয়া হয়। একটা সময় পর্যন্ত চিনে বসে নেটমাধ্যমে ‘এপ্রিল’ লিখে সার্চ করলে তাতে কোনও ফল আসছিল না বলে জানা যাচ্ছে। কারণ, প্রশাসনের তরফ থেকে সতর্কতার খাতিরে ইংরেজি বছরের চতুর্থ মাসকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। যাতে কোনও ভাবেই সাংহাইবাসীর আর্তনাদের ছবি কারও চোখে না পড়ে। আচমকা এ ভাবে তথ্যচিত্রটি উধাও হয়ে যাওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে চিনের নেটমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে। তাঁরা বিভিন্ন ভাবে ওই ছবির অংশ নতুন করে পোস্ট করছেন। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কেউ কেউ উল্টো করে তথ্যচিত্রটি আপলোড করছেন। আবার কেউ কার্টুন ছবির মধ্যে তথ্যচিত্রটি ‘এমবেড’ করে দিচ্ছেন। প্রশাসনের চোখে ধুলো দিতে বের হচ্ছে নিত্য নতুন পন্থা। কী ভাবে যে ‘ভয়েসেস অব এপ্রিল’ ছড়িয়ে পড়ছে, তা খুঁজতে বেজায় সমস্যায় পড়ছে চিন সরকার। দু’পক্ষই হাল ছাড়তে নারাজ।