মেয়েদের উপর বাড়ছে ফতোয়া ছবি সৌজন্যে রয়টার্স।
আফগানিস্তানের একটা বড় অংশ তালিবান দখল করার পরই মহিলাদের উপর নেমে আসছে একের পর এক ফতোয়া। পুরুষ-সঙ্গ ছাড়া রাস্তায় বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না মহিলাদের। মোটর রিক্সায় চড়া, পা-খোলা জুতো পরার ‘অপরাধে’-ও মহিলাদের উপর চরম নির্যাতন চলেছে উত্তরের তখর প্রদেশে। কয়েক দিন আগেই ওই প্রদেশ দখল করেছে তালিবান। সেই অভিজ্ঞতার কথা সংবাদ সংস্থাকে জানালেন ভিটেমাটি ছেড়ে কাবুলে আশ্রয় নেওয়া এক ব্যক্তি।
কাবুলে কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি ডিরেক্টর মেরিয়্যান ও’গ্র্যাডি জানাচ্ছেন, যেন ২০ বছর আগের সেই অন্ধকার যুগ ফিরে এসেছে আফগানিস্তানে। তাঁর দাবি, ‘‘বিগত দুই দশকে আফগানি মহিলাদের মধ্যে যে অগ্রগতি দেখা গিয়েছে, তা অবিশ্বাস্য। তালিবানরা আফগানিস্তান দখল নিলেও সেই দিন মনে হয় ফিরে আসবে না।’’ আফগানিস্তানের বাকি যে সব অঞ্চলের দখল নিয়েছে তালিবান, সেখানেও নেমে আসছে নানা ধরনের ফতোয়া।
কাবুলের মহিলা অধিকারকর্মী ২৬ বছরের জার্মিনা কাকারের কথায়, ‘‘আমরা হলাম পাখির মতো। দিন-রাত পরিশ্রম করে বাসা বাঁধি। তার পর হঠাৎ এক দিন দেখি, কেউ এসে তা নষ্ট করে দিচ্ছে।’’
২৬ বছরের জাহরা শোনাচ্ছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। সন্ধে নাগাদ বোনের বাড়িতে নৈশভোজে যাচ্ছিলেন জাহরা, তাঁর মা ও তিন বোন। রাস্তায় হঠাৎ গুলির শব্দে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। দেখেন, লোকজন পাগলের মতো ছুটোছুটি করছেন। চিৎকার করে তাঁরা বলছেন, ‘‘তালিবান এসে গিয়েছে!’’ কয়েক মিনিটের মধ্যেই আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাটের চিত্রটা বদলে গিয়েছিল ২৬ বছরের জাহরার চোখের সামনে।
হেরাটের মাটিতে তালিবানি ধ্বজা উড়তে শুরু করা মাত্রই জাহরার মনে হয়েছিল, তাঁর সমস্ত স্বপ্ন যেন মুহূর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। তালিবান-মুক্ত এলাকায় বড় হওয়ার সুবাদে জাহরা ও তাঁর বোনেরা স্বপ্ন দেখতে শিখেছিলেন। স্কুলে গিয়ে তাঁরা পড়াশোনা শিখেছিলেন। তালিবান অধ্যুষিত এলাকায় যা আজও অধরা। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে লিঙ্গবৈষম্য ও মহিলাদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজও করেছেন জাহরা। এখন তাঁরা গৃহবন্দি। মৃদুভাষী মেয়েটি সংবাদ সংস্থাকে বলছেন, ‘‘আমরা সবাই প্রচণ্ড আতঙ্কে আছি। এক জন মহিলা, যে কিছু একটা করার তাগিদে এতগুলি বছর ধরে শুরু পরিশ্রমই করে গিয়েছে, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও পড়াশোনা শিখেছে, তার পক্ষে এই ভাবে ঘরে নিজেকে আটকে রাখা সম্ভব?’’
আমেরিকান সেনার শেষ বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়তেই গোটা দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা দখল নিয়েছে তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠী। মে মাসের পর থেকে এখনও পর্যন্ত আড়াই লক্ষ আফগানি রাজধানী কাবুলে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই শহরে এই মুহূর্তে পতনের দোরগোড়ায়। দক্ষিণে কন্দহর, লস্করগাহ, গজনি দখলের পর কাবুলের প্রায় ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে তালিবান বাহিনী। অন্য দিকে, পশ্চিমের শহর হেরাটের দিক থেকেও কয়েক হাজার তালিবান এগিয়ে আসছে বলেই খবর।