ভার্জিনিয়া জিফ্রে
ধর্ষণ ও যৌন নিগ্রহ নিয়ে তদন্তে জেফ্রি এপস্টিনের বন্ধু ডিউক অব ইয়র্ক, রাজকুমার অ্যান্ড্রুকে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করতে সমন পাঠানোর কথা ভাবছেন আইনজীবীরা। যে পাঁচ জন মহিলাকে যৌন নিগ্রহ ও ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে জেফ্রির বিরুদ্ধে, তাঁদের আইনজীবীই আজ এ কথা জানিয়েছেন।
গত কাল একটি ব্রিটিশ চ্যানেলের অনুষ্ঠানে ওই পাঁচ নিগৃহীতা জানিয়েছেন, যৌন অপরাধী এপস্টিনের বাড়িতে কী ভাবে লোকজনকে ‘ম্যাসাজ’ করানো হত, তার অন্যতম সাক্ষী রাজকুমার অ্যান্ড্রু। যদিও রাজকুমার নিজে গোড়া থেকেই বলে এসেছেন, এপস্টিনের বাড়িতে কোনও রকম সন্দেহজনক আচরণ তিনি কখনও লক্ষ্য করেননি।
ওই চ্যানেলে সবিস্তার সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন অভিযোগকারিণী ভার্জিনিয়া জিফ্রে (আগে যাঁর পদবি ছিল রবার্টস)। তিনি এখন তিন সন্তানের মা। তাঁর দাবি, তিনি যখন বছর সতেরোর কিশোরী, তখন রাজকুমার অ্যান্ড্রু তাঁকে যৌন সম্পর্কস্থাপনে বাধ্য করেছিলেন। রাজকুমার অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। ভার্জিনিয়া যদিও সেই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, এপস্টিনের প্রেমিকা গিলেন ম্যাক্সওয়েলের লন্ডনের বাড়িতে তাঁকে (ভার্জিনিয়া) দু’দিনের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন এপস্টিন আর ম্যাক্সওয়েল। এর পরে ভার্জিনিয়ার দাবি, রাজকুমার অ্যান্ড্রুর সঙ্গে নাচার জন্য বলা হয়েছিল তাঁকে। এ জন্য মেফেয়ারের ‘ট্র্যাম্প’ নাইটক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভার্জিনিয়াকে। তিনি জানিয়েছেন, অ্যান্ড্রু নাচতে পারেন না। উপরন্তু ঘেমেনেয়ে তাঁর গায়ে শুধু পড়ে যাচ্ছিলেন রাজকুমার। গোটা ব্যাপারটাই খুব অস্বস্তিকর ছিল ভার্জিনিয়ার কাছে। রাজকুমারের মনোরঞ্জন করার জন্য তাঁকে কী করতে হয়েছিল, তার বর্ণনাও দিয়েছেন ভার্জিনিয়া। সে দিন নাইটক্লাব থেকে ফেরার পথে তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘‘জেফ্রির জন্য যা করেছো, এ বার অ্যান্ড্রুর জন্যও সেটাই করতে হবে।’’
ভার্জিনিয়া বলেছেন, ‘‘গোটাটাই অসহ্য। তবে অ্যান্ড্রু খুব নিষ্ঠুর ছিলেন না। সব কিছু হয়ে যাওয়ার পরে আমায় ধন্যবাদ দিয়ে চলে যান।’’ কিন্তু সেই সময়ে তার মনের অবস্থা খুবই ভয়ঙ্কর ছিল বলে জানিয়েছেন ভার্জিনিয়া। তিনি বলেছেন, ‘‘বিছানায় বসে ছিলাম। লজ্জায় ঘেন্নায় মরে যাব মনে হচ্ছিল। কোনও মতে স্নান সারি। পরের দিন গিলেন জানালেন, খুব ভাল করেছো। শুনে আরও সিঁটিয়ে গিয়েছিলাম।’’ ওই দিনের পরে ডিউকের সঙ্গে তাঁর তিন বার যৌন সম্পর্ক হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ভার্জিনিয়া। এক বার লন্ডনে, এক বার নিউ ইয়র্কে এবং আরও এক বার ক্যারিবীয় দ্বীপে এপস্টিনের আর এক বাড়িতে।
ব্রিটেনের জনতার উদ্দেশে ভার্জিনিয়া অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘আমার পাশে দাঁড়ান। এটা কোনও যৌন সুড়সুড়ির গল্প নয়। এটা নিগ্রহের খতিয়ান। রাজপরিবারের সদস্যের কাহিনি।’’ নাইটক্লাবে সে দিন অ্যান্ড্রু তাঁর কাঁধে হাত দিয়ে ছবি তুলেছিলেন। সে ছবি প্রথম একটি ট্যাবলয়েডে প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। তার জন্য ১ লক্ষ ৬০ হাজার ডলার পেয়েছিলেন ভার্জিনিয়া। তবে তাঁর দাবি, ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বাকিংহাম প্রাসাদ বলে এসেছে, সেটি জাল। অ্যান্ড্রু এখনও বলছেন, ওই ছবির কথা তিনি মনে করতে পারছেন না। আইনজীবীর মতে, অ্যান্ড্রু আমেরিকা চলে গেলেও তাঁকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন পাঠানোয় কোনও বাধা নেই। তবে সাক্ষ্য দিতে না চাইলে তিনি ওই সমনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন।