ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্ট গত মাসেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, ব্রিটিশ হাইকোর্টের দেওয়া প্রত্যর্পণ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আর শীর্ষ আদালতে আবেদন করতে পারবেন না। তার পরেই তাঁকে ভারতে ফেরানোর জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে ব্রিটিশ সরকার নয়াদিল্লিকে জানিয়ে দেয়, কিছু আইনি কারণে আটকে রয়েছে বিজয় মাল্যের প্রত্যর্পণ। সূত্রের খবর, এ বার সম্ভবত ব্রিটেনেই পাকাপাকি ভাবে আশ্রয় চাওয়ার পথে হাঁটছেন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ভারতীয় এই শিল্পপতি।
সরকারি ভাবে এ নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খোলেনি। তবে অন্দরের খবর, ভারতে ফেরত যাওয়া যেন-তেন ভাবে আটকাতে চাইছেন মাল্য। তার জন্য আইনি সব ধরনের পথে হাঁটতে রাজি তিনি। সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টে মামলা হেরে যাওয়ার পরেই ব্রিটিশ সরকারের কাছে আশ্রয়ের আবেদন করেন মাল্য। যদিও এ নিয়ে সরকারি ভাবে ব্রিটেন মুখ খোলেনি ভারতের কাছে। তারা শুধু জানিয়েছে, বিষয়টি গোপনীয়। আইনি জটিলতার সব দিক এখনই ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি ইতিমধ্যেই আঁচ করেছে নয়াদিল্লি। ভারতে গেলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে বলে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আর্জিতে জানিয়েছেন মাল্য। রাজনৈতিক ভাবে তাঁকে নিশানা করা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর আরও বক্তব্য, ভারতের কারাগারগুলিতে গেলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে।
কোনও দেশে কাউকে প্রত্যর্পণ করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যদি সে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার বা প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা থাকে, ব্রিটিশ আইন তাঁকে সেখানে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেয় না। আইনের এই দিকটাকে ঢাল করেই এখন মাল্য ভারতে প্রত্যর্পণ আটকাতে চান বলে সূত্রের খবর। যদিও গত সপ্তাহেই ভারত সরকারকে ব্রিটেনকে জানায়, কোনও ভাবেই যেন মাল্যের আশ্রয়ের আর্জি মেনে না নেওয়া হয়। তবে ব্রিটেন আর্জি ফেরালে মানবাধিকার সংক্রান্ত ইউরোপীয় আদালতেরও দ্বারস্থ হতে পারেন মাল্য।
২০১৭ থেকে মাল্যের প্রত্যর্পণ মামলা চলছে ব্রিটেনের বিভিন্ন আদালতে। কিন্তু জামিনে মুক্ত মাল্যকে কার রেসিং থেকে শুরু করে লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি ‘মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার’ বলেও অভিযোগ করেছেন মাল্য। ২০১৮-এ ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মাল্যকে জানিয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে, যার ভিত্তিতে তাঁকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে। যে রায়ের ভিত্তিতে তৎকালীন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রসচিব সাজিদ জাভিদ ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে মাল্যের প্রত্যর্পণ নির্দেশে সই করেন। তবে ওই বছরের জুলাইয়ে লন্ডন হাইকোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাল্য। তিন বার শুনানির পরে হাইকোর্টে হেরে যান মাল্য। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। গত ২৪ মে শীর্ষ আদালতও জানিয়ে দেয় যে তারা এ সংক্রান্ত আর্জি শুনতেই চায় না।