ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।
আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে ভারতীয়-সহ বিদেশি পড়ুয়াদের সে দেশে ফিরে যেতে বলল ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-সহ আমেরিকার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এই সময় শীতের ছুটিতে বেশির ভাগ বিদেশি পড়ুয়া নিজেদের দেশে ফিরে আসে। তাঁদেরই এ বার আমেরিকায় ফিরে যেতে বলা হল। ট্রাম্প প্রশাসন কাজ শুরু করলে অভিবাসন নীতি আরও কড়া হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে পারেন বেআইনি ভাবে সে দেশে বসবাসকারীরা। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। এ ক্ষেত্রে অনেকে ২০১৭ সালের ট্রাম্প জমানার কথাও মনে করাচ্ছেন। সেই সময় সাতটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকদের ৯০ দিন আমেরিকায় প্রবেশ করতে বারণ করেছিল প্রশাসন।
সূত্রের খবর, আমেরিকায় এখন বেআইনি ভাবে বসবাসকারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১০ লক্ষ। ‘ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ’ নিয়ে ২০২৪ সালের রিপোর্ট বলছে, আমেরিকায় বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা ১১ লক্ষ। তার মধ্যে সব থেকে বেশি পড়ুয়া ভারতের। সেই সংখ্যাটা ৩ লক্ষ ৩০ হাজার। এই সংক্রান্ত একটি পোর্টালের রিপোর্ট দাবি করছে, আমেরিকায় পড়াশোনা করছে এমন বিদেশি পড়ুয়াদের মধ্যে প্রায় চার লক্ষ জনের বৈধ নথি নেই। সূত্রের খবর, যে পড়ুয়াদের বৈধ ভিসা রয়েছে, ট্রাম্প জমানায় তাঁদের খুব একটা সমস্যা হবে না। সে ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয় ভারতীয় পড়ুয়াদেরও।
এমআইটি তাদের পড়ুয়াদের এই বিষয়ে কোনও গুজবে কান দিতেও বারণ করেছে। এমআইটি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অফিসের অ্যাসোসিয়েট ডিন এবং ডিরেক্টর ডেভিড সি এলওয়েল জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নতুন কংগ্রেস শপথ নেবে। ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার প্রভাব অভিবাসন বা ভিসা নীতির উপর কী ভাবে পড়বে, তা এত আগে বলা সম্ভব নয়। তবে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসছে। সেই কারণে বিদেশে দূতাবাসগুলিতে রদবদল হতে পারে। এর ফলে ভিসা প্রক্রিয়া আরও সময়সাপেক্ষ হতে পারে। এমআইটির পরামর্শ, যে পড়ুয়াদের ভিসার মেয়ার শেষ হচ্ছে বা আবার আমেরিকায় প্রবেশ করার সময় হয়েছে, তাঁদের দ্রুত ভিসার আবেদন করে প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
অন্য দিকে, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘‘গ্লোবাল অ্যাফেয়ার অফিস ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণের আগে বিদেশি পড়ুয়া, গবেষক, শিক্ষক, কর্মীদের দেশে ফিরে আসার সুপারিশ করেছে। শীতের ছুটির সময় তাঁরা আমেরিকার বাইরে গেলে তাঁদের ফিরে আসার অনুরোধ করা হয়েছে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এ-ও জানানো হয়েছে, পড়ুয়া, শিক্ষকদের ফিরে আসার বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা দিচ্ছে না তারা। ট্রাম্পের আগের শাসনকালের কথা মাথায় রেখে সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আরও জানানো হয়েছে, তাদের আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্যেরা যাতে কোনও মতে আমেরিকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়েন, তাই তাঁদের সতর্ক করার জন্য এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আমেরিকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে তার প্রভাব কী হবে, কী ভাবে তা কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় তারা।
ইন্ডিয়ানার ওয়েসলি বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি পড়ুয়াদের ১৯ জানুয়ারির মধ্যে ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে বলেছে। গত সোমবার পড়ুয়াদের ইমেল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের বিষয়ক সংগঠন জানিয়েছে, আমেরিকায় আবার প্রবেশ নিয়ে সমস্যা এড়াতে বিদেশি পড়ুয়াদের ১৯ জানুয়ারি সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। গোটা সিমেস্টার জুড়েই সশরীরে হাজির হতে হবে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়ে অনলাইনে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। নতুন প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কী বদল আনে, সে দিকে নজর থাকছে বলে তাদের জানানো হয়েছে।