প্রতীকী ছবি।
ইরানের ১৮টি ব্যাঙ্ককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে আমেরিকা। কিন্তু তাতে ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারতের কার্যক্রমে কোনও প্রভাব ফেলবে না। ভারত-আমেরিকা ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের আগে এমনই বন্ধুত্বের বার্তা দিল ট্রাম্প প্রশাসন। গত ১২ অক্টোবর কূটনৈতিক চ্যানেলে নয়াদিল্লিকে এই আশ্বাস দিয়েছে হোয়াইট হাউস। আগামী ২৬ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে দু’দেশের বিদেশ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে ওয়াশিংটনের এই বার্তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
দরজায় কড়া নাড়ছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার মধ্যেই নয়াদিল্লিতে বসছে ভারত-আমেরিকা টু প্লাস টু বৈঠক। বৈঠকে যোগ দিতে সোমবার ভারতে আসছেন আমেরিকার বিদেশ সচিব মাইক পম্পেয়ো এবং প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক টি এসপার। সেই সফরের আগেই চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারতের উদ্বেগ কাটানোর চেষ্টা করল আমেরিকা। কূটনৈতিক বার্তায় ভারতকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় চাবাহার বন্দর দিয়ে ভারত যে ইরান-আফগানিস্তান-সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে খাদ্য বা চিকিৎসা সামগ্রী পাঠাচ্ছে, ইরানি ব্যাঙ্কগুলি নিয়ে আমেরিকার সিদ্ধান্ত তাতে কোনও প্রভাব ফেলবে না।
কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমেরিকা? গত ৮ অক্টোবর ইরানের ১৮টি প্রধান ব্যাঙ্ককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে আমেরিকার অর্থ মন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই ব্যাঙ্কগুলি আর কোনও লেনদেন করতে পারবে না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ইউনাইটেড নেশনস এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছিল। অন্তত করোনা অতিমারি পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার আবেদনও এসেছিল। কিন্তু সে সবে কান দেয়নি হোয়াইট হাউস। তবে এই সিদ্ধান্তে মানবতার উন্নয়নে কোনও লেনদেনে সমস্যা হবে বলে জানিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন।
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় জড়িয়ে রাষ্ট্রনায়কদের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ
অন্য দিকে ইরান,আফগানিস্তান-সহ প্রায় গোটা মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য পাঠানোর জন্য ভারতের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ভারত-ইরান যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই চাবাহার বন্দর। গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুজরাতের কান্ডালা বন্দর থেকে ৭৫ হাজার মেট্রিক টন গম নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর জাহাজ পৌঁছেছে চাবাহারে। করোনা সামলাতে আফগানিস্তানকে এই সাহায্য পাঠিয়েছে ভারত। ২৬ সেপ্টেম্বরেও আফগানিস্তানে নয়াদিল্লি পাঠিয়েছিল ১ হাজার ৮৯০ টন চিনি। এ ছাড়া পঙ্গপালের উপদ্রব ঠেকাতে ইরানকে ২০ হাজার লিটার কীটনাশক পাঠিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই সব দেশে ভারত কৃষিপণ্য বা খাদ্যশস্য বিক্রি করলে, তা-ও এই বন্দর দিয়েই পৌঁছয়। ফলে কূটনৈতিক দিক থেকে চাবাহার বন্দর ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: সীমান্তে শান্তি চায় ভারত, চিনকে ১ ইঞ্চি জমি না ছাড়ারও বার্তা রাজনাথের
আমেরিকার এই সিদ্ধান্তে নয়াদিল্লির অসন্তোষ-ক্ষোভ বাড়তে পারে— এমন আশঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা দূর করতেই কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়ে ওয়াশিংটনের আশ্বাসবাণী, কৃষিপণ্য, খাদ্যশস্য, ওষুধ বা চিকিৎসা সামগ্রী ইরানে পাঠাতে আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশের কোনও সমস্যা নেই। এগুলির জন্য লেনদেনের অনুমোদন রয়েছে। আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।