হোয়াইট হাউসে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে ফৌজিয়া করিম ফিরোজ। ছবি: সমাজমাধ্যম।
প্রতি বছর মার্চ মাসটিকে আমেরিকায় ‘জাতীয় মহিলা ইতিহাস মাস’ হিসেবে উদ্যাপন করা হয়। এই মাসেরই প্রথম সপ্তাহে ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউসে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্বাচিত কিছু মহিলাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে সম্মানিত করে বিদেশ দফতর। ২০০৭ সাল থেকে ৯০টি দেশের ১৯০ জন মহিলা এই সম্মান পেয়েছেন। যাঁরা অদম্য ও ব্যতিক্রমী, সাহস ও শক্তি নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে, প্রান্তবাসী মানুষের ও নারী এবং শিশুদের অধিকার চেয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, অজস্র প্রতিকূলতাতেও হারেননি, তাঁদের সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া এই পুরস্কারের উদ্দেশ্য।
২০২৪ সালে এই সম্মান প্রদর্শনের ১৮ বছর পূর্ণ হল। এ বছর এই পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফৌজিয়া করিম ফিরোজ-সহ ১২ জন সাহসিনী। অনুষ্ঠানে ছিলেন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন এবং বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। পুরস্কারপ্রাপকদের মধ্যে রয়েছেন আফগানিস্তান, বেলারুস, মায়ানমার, উগান্ডা, জাপান, গাম্বিয়া, বসনিয়া ও হার্জ়েগোভিনা, কিউবা, ইকুয়েডর, ইরান এবং মরক্কোর নাগরিক, যাঁরা নিজেদের দেশে প্রতিনিয়ত এ রকম দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে চলেছেন।
ত্রিশ বছর ধরে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা শ্রমজীবী মহিলাদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছেন বাঙালি আইনজীবী ফৌজিয়া। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আইনি সংস্থা, ‘ফাউন্ডেশন অব ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষা বা তাঁদের উন্নতির জন্য তৈরি আইনকে চ্যালেঞ্জ করে প্রমাণ করে যে, ২০১৫ সালে গৃহীত ওই আইন বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য ফৌজিয়া নিজে প্রায় তিন হাজার মামলা করেছেন। পোশাক শিল্প কর্মীদের সংগঠন, ‘দ্য বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ফেডারেশন’ শুরু করতে এবং সে দেশে ‘ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স গাইডলাইনস’ বা গৃহকর্মীদের নির্দেশিকা তৈরি করাতেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
২০০৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ উইমেন্স লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফৌজিয়া। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সহ যে কোনও স্থানে মেয়েদের যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে যে দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছিল, তার পিছনে যে আইনজীবীদের অবদান ছিল, তাঁদের মধ্যে ফৌজিয়া অন্যতম। তিনি অ্যাসিড আক্রমণের শিকার যে সব মেয়ে, তাঁদের নিয়ে তৈরি ‘সার্ভাইভার ট্রাস্ট’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
ফৌজিয়া-সহ ১২ জনের হাতে সম্মান-ফলক তুলে দিয়ে বিদেশ সচিব ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘‘আপনারা সচেতন ভাবে ‘সাহসী’ হওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন।’’ আর ফৌজিয়ার কথায়, কথায়, ‘‘শান্তি ও সাম্য বজায় রাখার লক্ষে, বৈষম্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াই সাহসিকতা।’’