এখনও পর্যন্ত পাল্লা ভারী জো বাইডেনের দিকেই। ছবি এএফপি।
কারচুপির অভিযোগ খারিজ করেছে দুই রাজ্যের আদালত। তা-ও নিজের দাবিতে অনড় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানিয়ে দিলেন, মামলা-মকদ্দমার জন্য প্রস্তুত তাঁরা।
ট্রাম্প শিবিরের আনা কারচুপির অভিযোগ ইতিমধ্যেই খারিজ করে দিয়েছে মিশিগান ও জর্জিয়ার আদালত। ওই অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।তার পরেও নাছোড় ট্রাম্প। তাঁর দাবি, ‘‘আমরাই জিতব। আমাদের ধারণা, মামলা-মকদ্দমা অনেকদূর যাবে। কারণ আমাদের কাছে ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে। হয়ত শেষমেশ সর্বোচ্চ আদালতেই বিষয়টি উঠবে। এ ভাবে ভোটচুরি হতে দিতে পারি না।’’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘‘শুধুমাত্র বৈধ ভোট গুনলে, সহজেই জিতে যাব আমরা। আমাদের ভোটচুরির চেষ্টা চলছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে জয় হাসিল করেছি আমি। তার মধ্যে অনেক জায়গায় ঐতিহাসিক ভাবে সফল হয়েছি আমরা।’’
ভোটগণনার প্রবণতায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এখনও পর্যন্ত পাল্লা ভারী জো বাইডেনের দিকেই। ফল ঘোষিত রাজ্যগুলির মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের দখলে ২৫৩ ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট। ২১৪ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট এসেছে ট্রাম্পের রিপাবলিকানদের হাতে।
৬টি রাজ্যের গণনা বাকি থাকলেও ফলাফলের প্রবণতায় ট্রাম্পের সামনে রাস্তা অত্যন্ত কঠিন বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। তবে এটাও ঠিক, দ্বিতীয় বার ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া একেবারে অসম্ভব, অন্তত খাতায় কলমে তেমন পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।
কিন্তু অঙ্কের হিসেবে যতটা সহজ, বাস্তব তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। ভোট পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, হয়তো সেটা বুঝতে পেরেই পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান এবং জর্জিয়ার গণনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঠুকে দিয়েছেন ট্রাম্প। ওই মামলাগুলিতে গণনা স্থগিত রাখার আর্জি জানানো হয়েছে। পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান নিয়ে রিপাবলিকান শিবিরের অভিযোগ, ব্যালট বাক্স খোলা এবং গণনার পদ্ধতি তাঁদের দেখতে দেওয়া হয়নি। আবার ট্রাম্প নিজে টুইট করে দাবি করেছেন, গণনায় কারচুপির যথেষ্ট প্রমাণ তাঁদের হাতে রয়েছে।
ভারতীয় সময় সন্ধে সাতটা নাগাদ আবার টুইট করে ফের ট্রাম্পের ঘোষণা, ‘গণনা বন্ধ হোক’। জর্জিয়া নিয়ে রিপাবলিকানদের নালিশ, চেথাম কাউন্টির এক অবজার্ভার দেখেছেন নির্দিষ্ট সময়ের পরে পৌঁছনো ব্যালট বেআইনিভাবে বৈধ ব্যালটের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে। মামলাগুলি গৃহীত হয়েছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও ট্রাম্প নিজে টুইট করেছেন,‘পেনসিলভেনিয়াতে বড় আইনি জয়’।
আমেরিকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের মত, শীর্ষ আদালত মামলাগুলি শুনতে রাজি হলে বা গণনায় স্থগিতাদেশ দিলে বিপাকে পড়ে যেতে পারে ডেমোক্র্যাট শিবির। আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত ফলাফল চূড়ান্ত করা যাবে না। এই তিনটি মামলার পাশাপাশি বাইডেন তথা ডেমোক্র্যাটরা যে কটি রাজ্যে জয়ের দাবি করেছে, সব ক’টিতেই মামলা করার হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
মামলা খারিজ হলে বা গৃহীত না হলে অবশ্য বাইডেনের সামনে হোয়াইট হাউসে পৌঁছনোর রাস্তা ক্রমেই চওড়া হচ্ছে। গণনা বাকি রয়েছে নেভাদা, অ্যারিজোনা, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া এবং আলাস্কা। এর মধ্য়ে নেভাদা ও অ্যারিজোনা ডেমোক্র্য়াটদের ঘাঁটি। এই দুই রাজ্যেই এগিয়ে বাইডেন। নেভাদায় ৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। সেখানে ব্যবধান ১ শতাংশেরও কম। অ্যারিজোনায় (১১টি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট) ফারাক ২ শতাংশের বেশি।
পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনায় ইলেক্টরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ২০, ১৬ ও ১৫। আলাস্কায় এই সংখ্যা ৩। চারটি রাজ্যেই এগিয়ে ট্রাম্প। তবে আলাস্কা ছাড়া বাকি ৩টি বড় রাজ্যে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। জর্জিয়ায় তো ব্যবধান মাত্র .৩ শতাংশ। অন্য় দু’টিতে দেড় শতাংশের কাছাকাছি। ফলে শেষ পর্যন্ত কে জিতবেন, তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা।
সম্ভাবনা বেশি বাইডেনের সামনেই। কারণ ডেমোক্র্যাটকদের ঘাঁটি দুই রাজ্যে জয় পেলেই তিনি পৌঁছে যাবেন ম্যাজিক ফিগার ২৭০-এ। তার পর বাকি সব কটি রাজ্যে ট্রাম্প জিতলেও জয় থেকে যাবে অধরাই। তার উপর জর্জিয়ায় দু’জনের ব্যবধান এতটাই কম, ফল যে কোনও দিকে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাকি রাজ্যগুলির প্রবণতা একই থাকলে এবং জর্জিয়াতেও ডেমোক্র্যাটরা জিতলে বাইডেনের জয় আরও পোক্ত হবে।
ট্রাম্পের সম্ভাবনাও অবশ্য উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ এগিয়ে থাকা চার রাজ্যের প্রবণতা ধরে রেখে শুধুমাত্র নেভাদা নিজেদের দখলে নিতে পারলেই কিন্তু তিনিও ম্যাজিক ফিগার টপকে যেতে পারেন। দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হতে আর কোনও বাধা থাকবে না ট্রাম্পের সামনে। বাজিমাত করে ফেলবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট।