আমেরিকার ভাবী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। ফাইল চিত্র।
তিনি টুইট করছেন। আমেরিকার করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে নিরন্তর বার্তা দিচ্ছেন দেশবাসীকে। কিন্তু জনসমক্ষে খুব বেশি তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। ভাইস প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট কমলা হ্যারিস কি তবে তাঁর ভবিষ্যতের কাজকর্মেই ফোকাস করেছেন? নির্বাচনে জেতার পর থেকে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেনকে যতটা জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে, কমলাকে ততটা দেখা যাচ্ছে না। যে কারণেই প্রশ্ন উঠছে তাঁর এই অন্তরালে থাকা নিয়ে।
বস্তুত, গত শনিবার তাঁর ‘অ্যাকসেপটেন্স স্পিচ’-এর পর থেকেই কমলাকে জনসমক্ষে খুব একটা দেখা যায়নি। তা বলে তিনি পুরোপুরি অন্তরালে, তা-ও নয়। পরের পর টুইট জানান দিচ্ছে, দেশের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কতটা সচেতন। সোমবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর সর্বশেষ টুইট বলছে, ‘এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে বাঁচতে গেলে আমাদের কাজটা করতে হবে। সেটা হল বাইরে বেরোলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক’।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার তাঁর অ্যাকসেপ্টেন্স স্পিচ বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের নজর কেড়েছে। যেখানে তিনি ‘আমেরিকার এক নতুন দিন’-এর কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার ঠিক দু’দিন বাদে বাইডেনের সঙ্গে তাঁকে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল। সে দিন বাইডেনের থেকে কয়েক হাত দূরে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল, নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলছেন তাঁরা। কিন্তু, সেই যে তিনি তাঁর নিউ ওয়েস্ট এন্ডের ফ্ল্যাটে ঢুকেছেন, তার পর থেকে তাঁকে বেরোতে দেখা যায়নি।
বস্তুত, কমলার এই অন্তরালে থাকাকে ‘নজিরবিহীন’ বলতে নারাজ ওয়াকিবহাল মহল। এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের কথায়, ‘‘ভোটের পরে একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট-ইলেক্টের লো-প্রোফাইলে থাকাটা নজিরবিহীন নয়। বারাক ওবামার আমলে বাইডেনও এমনই করেছিলেন। তবে, সে সময় বারাক ওবামার প্রতিটা জরুরি মিটিংয়ে তাঁর ঘরে থাকতেন বাইডেন। বর্তমানে করোনা-পরিস্থিতির জন্য এটা কমলার পক্ষে সম্ভব নয়।’’
আরও পড়ুন: আমেরিকায় টানা ১১ দিন নতুন সংক্রমণ ১ লক্ষের উপর, আরও সঙ্কটে অর্থনীতি
ডেলাওয়্যারে নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ কাটিয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সেনেটর কমলা ফিরে আসেন ওয়াশিংটনে তাঁর দু’কামরার ফ্ল্যাটে। ২০১৬ সালে সেনেটে নির্বাচিত হওয়ার পর ওই ফ্ল্যাটটি তিনি কিনেছিলেন। সেখান থেকেই বাইডেনের সঙ্গে নিয়ম করে অবশ্য যোগাযোগ রেখেছিলেন। কমলার স্বামী ডগলাস এমহফের সঙ্গেও আমেরিকার হবু ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনের বেশ সখ্য রয়েছে। দু’জন একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে অংশও নিয়েছেন।
তবে, কমলার এই যে নিজেকে গৃহবন্দি করে রাখা, তার পিছনে অন্য কারণও দেখতে পাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। অনেকেই মনে করছেন, ‘লেজিসলেটিভ’ থেকে ‘এগজিকিউটিভ’ পদে উঠে আসার যে পর্যায়, সেখানেই ফোকাস করেছেন ভাবী ভাইস প্রেসিডেন্ট। অর্থাৎ, ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাঁর কাজ কী কী হতে চলেছে, কী করবেন তিনি— এ সব নিয়েই ভাবনাচিন্তার জন্য নিজেকে হয়তো একটু গুটিয়ে নিয়েছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত তিনি সেনেটর। এখনও জানা যাচ্ছে না, তিনি সেই পদ কবে ছাড়ছেন। বারাক ওবামা কিন্তু ২০০৮ সালে নির্বাচনের কিছু দিন পরই সেনেটের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু, সে সময় বাইডেন সে পথে হাঁটেননি। তিনি বেশ কিছু দিন ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতি যা, তাতে বাইডেনের মতো নিজের টিমও গোছাতে হবে কমলাকে। এ সব নিয়েই নানা অঙ্কে আপাতত ব্যস্ত তিনি, এমনটাই ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।