৩০ অগস্ট আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে আমেরিকা। সেনা প্রত্যাহার সম্পূর্ণ করার আগে কূটনীতিবিদ এবং আমেরিকার নাগরিক-সহ অসংখ্য মানুষকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাইডেন-প্রশাসন। ওই দিন শেষ সি-১৭ বিমানে রওনা দিয়েছেন আমেরিকার ফৌজি ক্রিস্টোফার টি ডোনাহুও।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আমেরিকার যে লক্ষাধিক সেনা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন, তাঁদেরই একজন ক্রিস্টোফার। আফগানিস্তান ছেড়ে চলে আসা তিনিই আমেরিকার শেষ সেনা। ৩০ অগস্ট সেনা প্রত্যাহার সম্পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই মর্মে তাঁর নাম নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। নিজের অজান্তেই ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন ক্রিস্টোফার।
উত্তর ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগে ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের কম্যান্ডিং জেনারেল হিসাবে কর্মরত ক্রিস্টোফার। ২০২০ সাল থেকে এই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি।
নিউ ইয়র্ক ওয়েস্ট পয়েন্টের আমেরিকার মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে স্নাতক হওয়ার পর ১৯৯২ সাল থেকে কর্মজীবন শুরু করেন ক্রিস্টোফার। প্রথমে আমেরিকার সেনার ইনফ্যান্ট্রি শাখার সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হয়ে যোগ দিয়েছিলেন।
কর্মজীবনের প্রথম কয়েক বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় আমেরিকার সেনাবাহিনীর ইনফ্যান্ট্রি শাখায় কর্মরত ছিলেন ক্রিস্টোফার। পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
দীর্ঘ ২৯ বছরের কর্মজীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন ক্রিস্টোফার। কখনও স্কোয়াড্রন অপারেশন অফিসার, কখনও স্কোয়াড্রন এগজিকিউটিভ অফিসার। কখনও আবার ট্রুপ কম্যান্ডার, সিলেকশন অ্যান্ড ট্রেনিং ডিটাচমেন্ট কম্যান্ডার, অপারেশন অফিসার, ডেপুটি কম্যান্ডার বা ইউনিট কম্যান্ডার। বিভিন্ন সময়ে এই সমস্ত পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম, অপারেশন নিউ ডন, অপারেশন ফ্রিডম সেন্টিনেল— এগুলি তাঁর পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অংশ নেওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ।
সেনার উচ্চপদে থাকার গুরুদায়িত্ব এবং উল্লেখযোগ্য মিশনের ভার কাঁধে নিয়ে ২৯ বছর পথ চলা ক্রিস্টোফার কিন্তু কাজের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। স্নাতক হওয়ার ২১ বছর পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০১৩ সালে আর্মি ওয়্যার কলেজের ফেলোশিপ নিয়ে ওই ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
জীবন বাজি রেখে কাজ করেন অকুতোভয় এই সেনা অফিসার। কাজের সূত্রে একাধিক পদকও পেয়েছেন তিনি। নিজের পরিবার-পরিজন ভুলে দায়িত্বপালনে এতদিন আফগানিস্তানের মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন ক্রিস্টোফার।
৩০ অগস্ট কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর ছাড়ার সময় নাইট ভিশন ক্যামেরায় তাঁর এই ছবিটি তোলা হয়েছে। সবুজ রঙের এই ছবির পিছনে রয়েছে কাবুল বিমানবন্দর। আমেরিকার শেষ সি-১৭ বিমানের দিকে হেঁটে আসছেন ক্রিস্টোফার।